বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

বাড়ছে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্যের দাম, ধর্মঘট ও আন্দোলনের অযুহাত

প্রকাশিত: ৪ আগস্ট ২০১৮  

শামীমা রীতা (যুগের চিন্তা ২৪) : সপ্তাহের শুরুতেই  কাঁচাবাজারে বেড়েছে সবজির দাম।  সবজির প্রতি ১০-১৫ টাকা করে বেড়েছে। টমেটোর কেজি হয়েছে ৯০-১১০ টাকা। তবে সবজির দাম বাড়লেও কাঁচামরিচের দাম কিছুটা কমেছে । অপরিবর্তিত রয়েছে পেঁয়াজে ও আলুর দাম।

তবে সবজির দাম বৃদ্ধি নিয়ে ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বললে তারা দাবী করছেন, বৃষ্টি ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘটের প্রভাবে সবজির দাম বেড়েছে। শুক্রবার (৩ আগস্ট) নগরীর দ্বীগুবাবু বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

গত সপ্তাহে এসব বাজারে বেশিরভাগ সবজির কেজি ৩০ টাকার মধ্যে বিক্রি হলেও এখন ৪০-৪৫ টাকার নীচে কোনো সবজি নেই। সবজির এ দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, কয়েকদিন ধরেই টানা বৃষ্টি হচ্ছে। এতে অনেক চাষীর সফলের ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। আবার অনেকে সবজি তুলতে পারছেন না।

এছাড়া দাম বাড়ার পিছনে ‘নিরাপদ সড়কের দাবিতে’ শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন, পরিবহন শ্রমিকদের অঘোষিত ধর্মঘটেরও প্রভাব রয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। 

তারা জানান, আতঙ্কে কেউই দুরথেকে সবজি আনছেন না। যার ফলে বাজারেও সবজি কম আসছে। চাহিদার তুলনার বাজারে সবজির সরবরাহ কম। ফলে দামও বেড়েছে।

বাজার ঘুরে জানা যায়, পটল, শসা,ঝিঙা, ধুন্দল, চিচিঙ্গা, কাকরল, ঢেঁড়স, মিষ্টি কুমড়া, করলাসহ প্রায় সব সবজির দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। গত সপ্তাহে পটল, ঝিঙা, ধুনদল, কাকরুল, করলা বিক্রি হয়েছে ২৫-৩০ টাকা কেজি।

কিন্তু এ সপ্তাহে  এ সকল সবজির দাম ৫০ টাকার ঘরে পৌঁছিয়েছে। তবে বেগুন, পেঁপের, কহি, পুঁইশাক দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এ কয়েকটি সবজি ২০-৩০ টাকা কেজির মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। কাচা মরিচ ৮০ টাকা কেজি, দেশি পেয়াজ ৫৫ টাকা ও ইন্ডিয়ান পেয়াজ ৩৫ টাকা কেজি ।

গত সপ্তাহে ২০-৩০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পটলের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০-৫০ টাকায়। একই দামে বিক্রি হচ্ছে কাকরুল ও করলা। আগের সপ্তাহে এ সবজি দুটির কেজি ছিল ২৫-৩০ টাকা। ঝিঙা ও ধুন্দলের দামও বেড়ে ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

৪০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া বরবটির দাম বেড়ে এখন ৫০-৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। তবে অপরিবর্তিত রয়েছে পেয়াজ ও আলুর দাম। আলু কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা দরে,  দেশি পেঁয়াজ কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা করে।


অন্যান্য সপ্তাহগুলোর মত  এ সপ্তাহেও বাজারে এখনও সব থেকে দামি সবজির মধ্যে রয়েছে পাকা টমেটো। প্রতি কেজি  টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৯০-১১০ টাকা কেজি দরে। গত কয়েক সপ্তাহ যাবৎ এ সবজিটির দাম ১০০এর কোটায়ই রয়েছে।

দ্বীগুবাবু বাজারের ব্যবসায়ী মো. আনিছ মোল্লা বলেন, বাজারে সব সবজিই পাওয়া  গেলেও  সরবরাহ  কম। তোই দামটা বেশি। এদিকে কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। তাছাড়া টানা বৃষ্টি হলে স্বাভাবিকভাবেই সবজির দাম বেড়ে যায়। আজ আড়তে গিয়ে শুনি সবজির পরিবহন কম আসছে। এর সঙ্গে এখন আবার বাস চলে না সব মিলায়া সবজির দাম বাড়ছে।

এদিকে সবজির দাম বৃদ্ধি নিয়ে ক্ষোভ জানায় কয়েকজন ক্রেতা। এর মধ্যে আশীষ দত্ত নামে এক ক্রেতা ক্ষোভ নিয়ে জানান, আরে ওদের কোনো কারণ লাগে না। চান্স পাইলেই হয়। এই যে দেখেন একই বাজার কিন্তু একেক দোকানের একেক দাম থাকে শীত বর্ষা বারোমাস।
আরেকজন ক্রেতা হানিফ জানান, পরিবহন চলছে না দু’দিন ধরে।

তারওপর রাতে তো ঠিকই চলছে। এখন তাও যদি সমস্যা থাকে আর কী বলবো। আমাদেরও পোলাপাইনগুলার মত আন্দোলন  নামতে হবে পন্যদ্রব্যের মূল্য হ্রাসের জন্য। এখন আমরা কোনো আন্দোলন করতে চাই না। আমরা এ সকল সমস্যার সুষ্ঠ সমাধান চাই।

এদিকে একমাসের বেশি সময় ধরে কাঁচামরিচ চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে মরিচের কেজি বিক্রি হয়েছে ১৪০-১৬০ টাকা কেজি। তবে এ সপ্তাহে ৮০ টাকায় এসেছে।

এদিকে সপ্তাহের শুরুতে ১০৫-১১০ টাকা বিক্রি হচ্ছে ডিমের ডজন। সাদা বয়লার মুরগি ১৪০-১৫০ টাকা এবং লাল লেয়ার মুরগি ২৫০-২৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আগের সপ্তাহেও মুরগির দাম একই ছিল। এছাড়া প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৫২০ টাকা করে,খাসির মাংস ৭০০-৭২০ টাকা, বরকি ৬২০-৬৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজার ঘুরে জানা যায়, শুধু সবজি নয় বেড়েছে অন্যান্য অধিকাংশ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দামও। পণ্য দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি, দেশের অরাজকতা,শিক্ষার্থীদের আন্দোলনসহ  সকল সমস্যার সুষ্ঠ সমাধান চায় নাগরকি সমাজ।
 

এই বিভাগের আরো খবর