শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বার নির্বাচনে ভোটারদের মনে শঙ্কা : প্রচারণায় ৫১ প্রার্থী

প্রকাশিত: ১৭ জানুয়ারি ২০২০  

যুগের চিন্তা রিপোটর্ : ধীরে ধীরে জমজমাট হয়ে উঠছে আইনজীবী সমিতির নির্বাচন। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর তিন প্যানেলের ৫১ প্রার্থীর মনোনয়নপত্রই প্রাথমিকভাবে বৈধভাবে ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। বৃহস্পতিবার এক নোটিশে নির্বাচন কমিশন এই তথ্য জানানোর পরপরই প্রচারণায় নেমে পড়েছে প্রার্থীরা।

 

আইনজীবী সমিতির মোট ভোটার সংখ্যা ৯২২ জন। চলতি মাসের ২৯ তারিখে ভোটগ্রহণকে সামনে রেখে নিজেদের প্রতিশ্রুতি নিয়ে ভোটারদের দ্বারে প্রার্থীরা। তবে ভোটারদের মনে শঙ্কা তারা নির্বিঘ্নে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেয়ার ব্যাপারে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। একই সাথে কোন চাপ কিংবা শক্তি প্রয়োগ করা না হলে এবার আইনজীবী সমিতির সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও জমজমাট নির্বাচন হবে বলে ধারণা করছেন তারা।


বৃহস্পতিবার আদালতপাড়ায় সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, আইনজীবীদের মাঝে নির্বাচন নিয়েই তুমুল আলোচনা চলছে। আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে তিনটি প্যানেলের মধ্যে কোন প্যানেলটি শক্তিশালী হয়েছে। এরইমধ্যে আদালতপাড়ায় আওয়ামী লীগের দুইপক্ষের প্রচারণার মধ্যমনি হয়ে আসেন সাবেক সাংসদ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য এড. সানজিদা খানম।


এসময় বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির আরেক অন্যতম সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ ও গণতান্ত্রিক ঐক্য পরিষদ প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী এড.আনিসুর রহমান দিপু এবং সেক্রেটারি প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ও বারের সাবেক সেক্রেটারি হাবীব আল মুজাহিদ পলু কেন্দ্রীয় নেত্রী সানজিদা খানমের সাথে ছবি তোলেন।

 

এসময় মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মাহমুদা মালাসহ প্যানেলের অন্যান্য প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। এরপর এই প্যানেলের প্রার্থীরা আইনজীবীদের ব্যক্তিগত চেম্বারে গিয়ে ভোট চান।


এসময় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে কেন নির্বাচনে অংশ নিলেন এমন প্রশ্ন করলে আনিসুর রহমান দিপু যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘আমরা কখনোই বিদ্রোহী প্রার্থী নই। আমাদের প্যানেলের ব্যক্তিদের দিকে তাকান, বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে এরা প্রত্যেকেই দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের জন্য কাজ করছে, প্রত্যেকেই ত্যাগী নেতা। জেলা, মহানগর, উপজেলায় এমনকি বারে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন।


অপরদিকে আরেকটি প্যানেল যেটিকে আওয়ামী লীগের বলা হচ্ছে তাদের অতীত রেকর্ড, কর্মকান্ড, দলীয় পরিচয়, সিএস-আরএস পর্চা দেখলেই বোঝা যাবে তাদের সাথে আমাদের তফাৎটা কত বড়। সুতরাং প্রকৃত আওয়ামী লীগার এবং ত্যাগীদের নিয়েই শক্তিশালী প্যানেল দেয়া হয়েছে, বিজয় আমাদেরই হবে।’


অপরদিকে প্রায় কাছাকাছি সময়ে সানজিদা খানমকে নিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ মনোনীত এড.মুহাম্মদ মোহসীন মিয়া-এড.মাহবুবুর রহমান প্যানেল।


এরকিছুক্ষণ পরেই মিছিল নিয়ে বের হন তারা। আইনজীবীদের চেম্বারে চেম্বারে গিয়ে ভোট চান তারা। এসময় এই প্যানেল থেকে মনোনয়নবঞ্চিত বর্তমান সিনিয়র সহসভাপতি এড.আলী আহম্মদকে তার চেম্বার থেকে নিয়ে প্রচারণায় আনেন তারা।  


প্রচারণা শেষে বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য এড.ইমদাদুল হক তারাজ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের দিন আপনারা সকলে তাড়াতাড়ি এসে আমাদের প্যানেলের প্রার্থীদের ভোট দেবেন।’


অপরদিকে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদের প্রার্থীরাও প্রচারণা চালিয়েছেন আদালতপাড়ায়। বিএনপিপন্থী আইনজীবী ও তাদের প্যানেলের প্রার্থীদের নিয়ে মিছিল বের করেন তারা।


প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী এড.সরকার হুমায়ূন কবির ও সেক্রেটারি প্রার্থী এড.আবুল কালাম আজাদকে সঙ্গে নিয়ে মিছিলটি আদালতপাড়ায় বেশ কয়েকবার ঘুরে প্রধান ফটকের সামনে বক্তব্য দেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা।

 

জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদ প্যানেলের পক্ষে মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি ও আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এড.সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, ‘বুধবার যদি আমরা মনোনয়নপত্র দাখিল না করতাম তবে তারা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যেত। ওসবকে প্রতিহত করার জন্য আমরা আমাদের প্যানেল ঘোষণা দিয়েছি।


আমাদের প্যানেলটি অত্যন্ত শক্তিশালী প্যানেল। হুমায়ন-জাকিরের নেতৃত্বে এই প্যানেলের সবাই পাশ করবে। গতবার নির্লজ্জভাবে আইনজীবীদের ভোটের অধিকার হরণ করা হয়েছিলো। এবারের নির্বাচনে আমরা আমাদের লোকদের নির্বাচন কমিশন দিতে বলিনি, সাধারণ আইনজীবীদের পছন্দসই নির্বাচন কমিশন দিতে বলেছিলাম।

কিন্তু এজিএমে নির্বাচন কমিশনের একজনের নাম বলার পরপরই সবাই সেটিকে প্রত্যাখ্যান করেছিল কিন্তু বেআইনীভাবে তাকেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার বানিয়েছে বর্তমান সভাপতি। নির্বাচন কমিশনে যাদের নাম পরবর্তীতে দেয়া হয়েছে তাদের নিয়োগও অবৈধ, কারণ তারা সাধারণ আইনজীবীদের সমর্থিত না। তাই আন্দোলনও চলবে একইসাথে ভোটের রাজনীতিও চলবে। সুষ্ঠুভোটের আগপর্যন্ত আমরা আমাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাবো।’  


এদিকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট আয়োজনের ব্যাপারে বদ্ধ পরিকর বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশন এড.আখতার হোসেন। যুগের চিন্তাকে তিনি জানান, ‘কোন পক্ষপাতিত্ব না রেখে প্রতিবছরের মতো এবারও আমি নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন আয়োজনের চেষ্টা করবো। নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার আগমুহুর্ত্ব পর্যন্ত চাপ থাকলেও এখন তা নেই দাবি করে তিনি বলেন, এখন কোন চাপ নেই।


তিনটি প্যানেলে প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। নির্বাচনী আইন মেনেই ২৯ জানুয়ারি নির্বাচন হবে। নির্বাচনে কোন ধরণের বিশৃঙ্খলা যাতে না নয় সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতা নেয়া হবে।’
আখতার হোসেন আবারও বলেন, ‘আমি জিপি কিংবা পিপি কোনটাই ছিলামনা। গত ৫ বছর যাবৎ আমি সবসময় নিরপেক্ষ। প্রধান নির্বাচন কমিশনার আমি হতেও চাইনি। বারের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। এটি না করতে পারলেও আমার আপত্তি নেই।


স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করার কোন সিস্টেম নেই, একমাত্র তলবী সভা ডেকে যদি নির্বাচন কমিশন বাদ দেয় তো তবেই বাতিল হবে। তলবি সভায় সিদ্ধান্ত হলে আমাদের চিঠি দেবে তখন আমরা পদত্যাগপত্র জমা দেব। সাধারণত এজিএমে যেটি পাশ হয়ে যায় এরপর তলবী সভায় এধরণের স্কোপ খুব কম। নির্বাচনী লোড আমি নিচ্ছিনা, আমার ঘাড়ে এসে পড়েছে। দায়িত্ব আমি কখনোই চেয়ে নেইনি।’


প্রসঙ্গত, ৯ জানুয়ারি আইনজীবী সমিতির এজিএমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে আখতার হোসেনের নাম ঘোষণার পর ত্রিধাবিভক্ত হয়ে পড়েন আইনজীবীরা।


অপরদিকে এরই মধ্যে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হয়। তিন প্যনেলে ৫১ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেয়। যাচাই বাছাইয়ে সব মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করে ইসি। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের তারিখ ১৭ থেকে ১৯ জানুয়ারি, চূড়ান্ত বৈধ তালিকা প্রকাশ ২০ জানুয়ারি। ২৯ জানুয়ারি নির্মাণাধীন বারভবনের নিচতলা আইনজীবী সমিতির ২০২০-২১ বছরে কার্যকরী পর্ষদের ১৭টি পদে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

 

এই বিভাগের আরো খবর