শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

বার নির্বাচন : দখল নিতে উত্তর-দক্ষিণের লড়াই

প্রকাশিত: ১৭ জানুয়ারি ২০২০  

বিশেষ প্রতিনিধি (যুগের চিন্তা ২৪) : জমে উঠেছে নারায়ণগঞ্জ  জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন। ইতিমধ্যে ৩টি প্যানেল তাদের প্রার্থীতা ঘোষনা করেছে।


প্যানেল ৩টি হল : সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ ব্যানারে এমপি শামীম ওসমান পছন্দের  মোহসীন-মাহবুব প্যানেল। যৌথভাবে দিপু-পলু প্যানেল দিয়েছে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ ও বাম ঘরানার গনতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি। বিএনপির নেতৃত্বে রয়েছে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদ প্যানেল (হুমায়ুন-জাকির)।


অনেক দিন পরেই নারায়ণগঞ্জ বারে ৩টি প্যানেলে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। ৩টি প্যানেলের নেপথ্যে রয়েছে অনেক কাহিনী। মূলত: আগামী দিনগুলোতে বারে কার আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হবে এ নিয়ে নেপথ্যে চলছে প্রভাবশালীদের লড়াই। আপাত দৃষ্টিতে মনে হবে আইনজীবী নেতারা সম্মুখ সমরে নেমেছে কিন্তু পেছনের রহস্যটি আলাদা।


মহসীন-মাহাবুব এর প্যানেল শামীম ওসমান ও  সেলিম ওসমান সমর্থিত প্যানেল। নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে এই দু’ভাই প্রচন্ড প্রভাবশালী। দীর্ঘদিন থেকে নারায়ণগঞ্জ বার দখল করে রেখেছেন তাঁরা। প্রতিবারের মত এবারো প্রার্থী দিয়েছে বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী  আইনজীবী ঐক্য পরিষদ। এটা চিরাচরিত নিয়ম।


কিন্তু তৃতীয় যে প্যানেল ঘোষনা দিয়েছে দিপু-পলু। তাঁরা দু’জনেই আওয়ামীলীগ সমর্থিত মানুষ। ইতিপূর্বে তাঁরা সরাসরি শামীম ওসমানের সমর্থন নিয়ে বারের নির্বাচন করেছেন। নেতা হয়েছেন। তাহলে এবার এরা কেনো প্রার্থী হলেন। এরা কী আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ?


 খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, এড. আনিসুর রহমান দিপু ও হাবিব আল মুজাহিদ পলু আওয়ামী ঘরানার মানুষ হলেও তাঁরা এখন মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী এবং মেয়র আইভী’র লোক হিসেবে পরিচিত। তাহলে একদিকে দু’ভাই আরেক দিকে মন্ত্রী গাজী ও আইভী। যদিও মন্ত্রী গাজী ও মেয়র আইভী তাদেরকে (দিপু-পলু) প্রকাশ্যে সমর্থন দেননি।

 

তবে আইনজীবীরা বলছেন এরা অবশ্যই সমর্থন পেয়েছেন। গতবার আওয়ামীলীগের একক প্যানেল থাকায় খুব সহজেই পার পেয়েছিল জুয়েল-মহসীন প্যানেল। কিন্তু এবার প্রেক্ষাপট সম্পুর্ণ ভিন্ন। কারণ দিপু ও পলু খুবই শক্তিশালী প্রার্থী। বারের নির্বাচনে তাদের যথেষ্ঠ প্রভাব রয়েছে। দিপু প্রার্থী হওয়ায় নারায়ণগঞ্জ বারের রাজনীতির হিসাব-নিকাশও পাল্টে গেছে। শুধু আওয়ামীলীগ নয় বিএনপি’র সিনিয়র আইনজীবীদের মধ্যেও সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত।


ফলে দিপু-পলু’র প্যানেল ঘোষনায় বিপাকে পড়েছে সেলিম ওসমান-শামীম ওসমান সমর্থিত মহসীন-মাহাবুব প্যানেল। এখান থেকে উত্তরণের পথ হিসেবে  সেলিম ওসমান ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। গত বুধবার  সেলিম ওসমান নিজেই বার ভবনে গিয়ে ১ কোটি টাকার চেক হস্তান্তর করেছেন বার ভবনের উন্নয়নে। যাতে  ভোটাররা আশাবাদী থাকেন মহসীন-মাহাবুব প্যানেল জয় লাভ করলে বার ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হবে।  


ভোটারদের সামনে এই মূলা ঝুলিয়েই প্রচারনা চালাচ্ছে মহসীন-মাহাবুব প্যানেল। অপরদিকে, দিপু-পলু প্যানেল চেষ্টা চালাচ্ছে ভোটারদের মন জয় করে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে। মূলত: এখন আদালতপাড়ায় আলোচনা হচ্ছে অস্তিত্বের লড়াইয়ে শামীম-সেলিম না আইভী-গাজী জিতবে।


পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, আওয়ামী লীগের অনৈক্যের কারণে এবারের নির্বাচনে বিএনপি প্যানেল বিশেষ সুবিধা পাবে বলে প্রবীণ আইনজীবীদের ধারণা। একটি একক প্যানেল দেয়ার ব্যাপারে শামীম ওসমান অনেক চেষ্টা করেছেন। গত মঙ্গলবারও এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবে সাড়ে চার ঘন্টা মিটিং করেছেন।


তবে, আইনজীবীদের মধ্যে ঐক্য গড়তে ব্যর্থ হয়েছেন। এ অবস্থা বিগত বার নির্বাচনেও সৃষ্টি হয়েছিল। তখন দুই সিনিয়র আইনজীবী খোকন সাহা ও আনিসুর রহমান দিপু শামীম ওসমান পছন্দের জুয়েল-মহসীন প্যানেলের প্রতি বেঁকে বসলেও শেষ পর্যন্ত শামীম ওসমান তাদের একত্রিত করতে পেরেছিলেন। তবে, এবার মহসীন-মাহবুব পরিষদকে গেলাতে পারেননি।


আদালত অঙ্গনে বলা হয়, বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের কাছে এড. তৈমূর আলম খন্দকারের যে কদর আওয়ামী আইনজীবীদের কাছে তেমনি কদর এড. খোকন সাহার।


তবে, এড. খোকন সাহা এখনও নীরব অবস্থানে রয়েছেন। বারের প্রবীন আইনজীবীরা এমপি শামীম ওসমানের তরুন আইনজীবীদের প্রতি অযাচিত পক্ষপাত এবং তাদের মাধ্যমে বার কুক্ষিগত করে রাখাকে সুনজরে দেখেন না।


৯ জানুয়ারি আইনজীবী সমিতির এজিএমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে আখতার হোসেনের নাম ঘোষণার পর ত্রিধাবিভক্ত হয়ে পড়েন আইনজীবীরা।


তলবি সভা আয়োজনেরও ডাক দেন তারা। কাজেই নির্বাচন নিয়ে এখনো অনেক কিছু বাকি। তবে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমান সমর্থিত মহসীন-মাহাবুব প্যানেল দিপু-পলু প্যানেলকে মোকাবেলা করতে পারবেনা।     
 

 

এই বিভাগের আরো খবর