শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

বাত রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

প্রকাশিত: ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯  

ডেস্ক রিপোর্ট (যুগের চিন্তা ২৪) : বাত খুব পরিচিত একটি রোগ। এই রোগে দেহের ছোট ছোট জোড়া,আঙ্গুল, পায়ের বুড়ো আঙ্গুলের গিড়া বা গোড়ালি আক্রান্ত হয়। যে কোনো বয়সের লোক এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। বাতের ব্যথায় ভোগেনি এমন নানা-নানী বা দাদা-দাদী খুজে পাওয়া খুবই দুষ্কর। রক্তে ইউরিক এসিডের মাত্রা বেড়ে গেলে বাত বা গাঊট হয়। কিছু কিছু ওষুধ সেবনে রক্তে ইউরিক এসিডে এর মাত্রা বেড়ে যেতে পারে যেমন, থায়াজাইড,এসপিরিন,পাইরাজিনামাইড ইত্যাদি। তেমনি রেনাল ফেইলুর, হাইপার প্যারাথাইরয়েডিজম এমন কিছু রোগেও ইউরিক এসিডের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।

 

তৈলাক্ত মাছ, মাছের ডিম, মাংসের ঝোল, কলিজা প্রভৃতি খাবারে পিউরিন বেশি থাকে সেখান থেকে ইউরিক এসিড তৈরি হয়। অতিরিক্ত মদ্যপান করলেও এ রোগের প্রকোপে পরতে পারে। পুরুষদের এ রোগ হওয়ার প্রবণতা বেশি। নারীদের তুলনায় পুরুষদের এই রোগ পাঁচ গুণ বেশি হয়ে থাকে। বাত সাধারণত কম বয়সী পুরুষ ও বেশি বয়সী নারীদের হয়ে থাকে। মেনোপোজ হওয়ার পর নারীদের মধ্যে এ রোগ দেখা দিতে পারে। যারা প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার, যেমন মাছ, মাংস, ডিম ইত্যাদি বেশি খান, তাদের এই রোগ বেশি হয়।

 

রোগের লক্ষণ সমূহ :
১। হঠাৎ করে পায়ের গিড়ার জোড়া আক্রান্ত হয় এবং অত্যাধিক ব্যাথা হয়।
২। অল্প অল্প জ্বর এই রোগের প্রধান লক্ষণ।
৩। ব্যথা কমে যাওয়ার পর আক্রান্ত স্থান ফুলে যায়।
৪। হাঁটুর জোঙা, পায়ের গোড়ালি, নখের জোড়া, হাতের কজ্বি, কনই প্রভৃতি স্থানে ব্যাথা হয়।

 

খাবার ও চিকিৎসা :

১। অভিজ্ঞ আর্থোপেডিক ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং প্রয়োজনে চিকিৎসা করাতে হবে।
২। রোগীকে পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে।
৩। বেশি পরিশ্রমের কাজ কমাতে হবে।
৪। আক্রান্ত স্থানে প্রতিদিন সরিষার তেল বা গরম পুরাতন তেল মালিশ করলে উপকার হয়।

 

কটিবাত ও সায়াটিকা : কোমরের পেছনে রানের ব্যাথা হলে তাকে লুমবাগো বা কটিবাত বলে। এটি এক প্রকার বাত। আবার কোমরের নিচে সায়াটিকা নার্ভের প্রদাহ বলা হয়ে থাকে।

 

রোগের কারণ:
১। কটিদেশে সজোরে আঘাত লাগা।
২। ভারি বোঝা উঠালে বা বহন করলে।
৩। উচ্চ স্থান থেকে পড়ে নার্ভের উপর চাপ পড়লে।
৪। ভিটামিন বি এর অভাবে সারাটিকা নার্ভে প্রদাহ হয়।
৫। তাছাঙা পুষ্টিকর খাবারের অভাব, শরীরে ঠান্ডা লাগা প্রভৃতি কারণে এই রোগ হয়ে থাকে।

 

রোগের লক্ষণসমূহ:
১। কোমর টিপলে বা চাপ দিলে ব্যথা পাওয়া যায় না কিন্তু হাটলে বা নড়াচড়া করলে ব্যথা অনুভব হয়।
২। কোমর নাড়ানো যায় না, বসে থেকে উঠতে গেলে ব্যথা লাগে।
৩। ভোরবেলা বা বর্ষা কালে স্যাত স্যাতে ঘরে থাকলে এই ব্যথা বাড়ে।
৪। ইলেকট্রিক শকের মত ব্যথা ও তীব্র যন্ত্র  অনুভূত হয়। 

 

খাবার ও চিকিৎসা:
১। রোগীর অবস্থা আশংকাজনক হলে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং প্রয়োজনে চিকিৎসা করাতে হবে।
২। প্রয়োজনে শরীরে সারেল কোরসেট বেস্ট ব্যবহার করতে হবে।
৩। রোগীকে পুর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে।
৪। একটানা দাঁড়িয়ে থাকা বা বাঁকা হয়ে থাকা যাবে না এবং ঠান্ডা একেবারেই লাগানো যাবে না।

 

পেশির বাত : শরীরের যেকোনো স্থানে পেশীর বাত রোগ হতে পারে। শরীরের সেই অংশে রক্ত চলাচল কম হলে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়। সুচিকিৎসা হলে এই ধরণের বাত রোগ ভালো হয়ে যায়।


রোগের কারণ : তেমন বেশি কোনো কারণে এই রোগ হয় না । এই রোগ সাধারণত ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স এর অভাবে হয়ে থাকে। এই বাত ব্যথার আরেকটি কারণ হতে পারে পানি শুন্যতা। পানির অভাবে রক্ত ‘ইলেক্ট্রোলাইট’য়ের ভারসাম্যে তারতম্য দেখা দেয়, ফলে বাত ব্যথা হয়। তাই রাতে বাতের ব্যথা দেখা দিলে বেশি করে পানি পান করতে পারেন ।


 রোগের লক্ষণসমূহ:
১। হঠাৎ ঘুম থেকে উঠার পর রোগী মাংসপেশীর ব্যথা অনুভব করে।
২। মাংসপেশী মনে হয় খিচে  ধরে রাখে।
৩। আক্রান্ত স্থানে হাত দিলে মাংসপেশীর খিচুন বোঝা যায়।
৪। অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং প্রয়োাজনে চিকিৎসা করাতে হবে।

 

অ্যানকাইলোজিং স্পনডিলাইটিস : এটি একটি বিশেষ ধরণের বাত রোগ, যা মেরুদন্ডে তীব্র ব্যথার সৃষ্টি করে, মেরুদন্ডে বাঁক ধরে এবং মেরুদন্ড ধীরে ধীরে শক্ত হয়ে যায়, যার জন্য একে বলে অ্যানকাইলোজিং স্পনডিলাইটিস। অ্যানকাইলোজিং শব্দের অর্থ শক্ত এবং স্পনডিলাইটিস বলতে মেরুদন্ডের জ্বালা-পোড়া বা প্রদাহ বোঝায়।


রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের মতো এটি সাধারণ দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহজনিত রোগ, তবে এটি প্রধানত মেরুদন্ড ও কোমরের দুই দিকের অস্থিসন্ধিকে আক্রান্ত করে। এ রোগের বৈশিষ্ট্য হলো পিঠ ব্যথা ও শক্ত হয়ে যাওয়া। কোনো কোনো ক্ষেত্রে হিপ এবং কাঁধ আক্রান্ত হতে পারে। খুব বিরল ক্ষেত্রে প্রান্তিক অস্থিসন্ধিগুলো আক্রান্ত হয়।

 

রোগের কারণ : এ রোগের সঠিক কারণ এখন পর্যন্ত জানা যায়নি, তবে বংশানুগতিক কারণের সঙ্গে এটি নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে এ রোগ বেশি দেখা দেয়। যারা এ রোগে আক্রান্ত হন তাদের প্রায় সবাই জেনেটিক মার্কার বা বংশগত নির্দেশক এইচএলএ-বি২৭ বহন করেন, কিন্তু যারা এই নির্দেশক বহন করেন তারা সবাই এই বাত রোগে আক্রান্ত হন না।

 

লক্ষণসমূহ : রোগী সাধারণত সকালে পিঠ শক্ত হওয়া ও পিঠ ব্যথার অভিযোগ নিয়ে আসেন। ব্যথা শুরু হয় কোমরের দু'দিকের অস্থিসন্ধি বা স্যাক্রোইলিয়াক জয়েন্টে এবং ধীরে ধীরে তা সারা পিঠে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ব্যথা হিপজয়েন্ট (ঊরু অস্থিসংযোগ স্থল) ও নিতম্বে ছড়িয়ে পড়ে। রোগীর জ্বর হতে পারে এবং বুকের প্রসারণ কমে যেতে থাকে। 

 

অল্পবয়সী রোগীর বুকের প্রসারণ কমপক্ষে সাত সেন্টিমিটার কমে যায়। ক্রমেই মেরুদন্ড শক্ত হয়ে পড়ে, মেরুদন্ডে বাঁক ধরতে শুরু করে। রোগী সামনের দিকে ঝুঁকে পড়েন। অনেক রোগী সামনে ও উপরের দিকে তাকাতে পারেন না। আশপাশের কাউকে দেখতে হলে শরীরটাকে সম্পূর্ণ ঘুরিয়ে দেখতে হয়। ধীরে ধীরে হিপজয়েন্ট, হাঁটু এমনকি কনুইও শক্ত হয়ে যায়। রোগীর হাঁটতে সমস্যা হয়।

 

চিকিৎসা : অ্যানকাইলোজিং স্পনডিলাইটিসের চিকিৎসার মধ্যে ওষুধ গ্রহণের বিষয়টি রয়েছে। কিন্তু ওষুধ রয়েছে বিভিন্ন শ্রেণির। একটি ওষুধ আরেকটির চেয়ে আরো ভালো কাজ করতে পারে।

এই বিভাগের আরো খবর