শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বাজেট অনুষ্ঠানে যা বললেন মেয়র আইভী

প্রকাশিত: ১৮ জুলাই ২০১৮  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) :  নতুন করে করারোপ ছাড়াই নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) এবারের বাজেট  ঘোষণা করা হয়েছে। যানজট, জলাবদ্ধতা নিরসন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়নসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নে বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

 

বুধবার (১৮ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে নগর ভবন প্রাঙ্গণে সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী বাজেট ঘোষণা করেন। এ সময় সংরক্ষিত আসনের সাংসদ অ্যাডভোকেট হোসনে আরা বাবলী, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই, প্যানেল মেয়র-১আফসানা আফরোজ বিভা উপস্থিত ছিলেন।

 

২০১৮-১৯ অর্থবছরের ৭১৫ কোটি ৫১ লাখ ২১ হাজার ৩৭৭ টাকার প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব ও উন্নয়ন খাতে মোট ৭১৫ কোটি ৫১ লাখ ২১ হাজার ৩৭৭ টাকা আয় এবং ৭০৬ কোটি ৫২ লাখ ৬৪ হাজার ৯৮৮ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। উদ্বৃত্ত রাখা হয়েছে ৮ কোটি ৯৮ লাখ ৫৬ হাজার ৩৮৯ টাকা।

 

বাজেট ঘোষণার সময় লিখিত বক্তব্যে মেয়র আইভী বলেন, বিগত নির্বাচনের সময় আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম, নির্বাচিত হলে খাল-বিল, নদী-নালা,পুকুর এবং মাঠের প্রতি নজর দিবো। আমি সেটিই করে যাচ্ছি বিগত দুই বছরে  আমি অনেকগুলো মাঠ উদ্ধার করেছি। একইভাবে পর্যায়ক্রমে সবগুলো খালই আমরা উদ্ধার করবো। এছাড়া বন্দরের সোনাকান্দায় হাট ও মাঠের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া আরো ১০-১২ টি মাঠকে সংস্কারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সিদ্ধিরগঞ্জে ১০ নং ওয়ার্ডে পুকুর রক্ষার সাথে সাথে মাঠেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের সামনের মাঠটিও সংস্কার করেছি। বন্দরে শিশুদের জন্য একটি নভোথিয়েটার করার কাজ করা হবে।

 

মেয়র বলেন, নগরীর মাঝখানে জিমখানা লেকের নামকরণ করা হয়েছে শেখ রাসেল পার্ক। এটির জন্য আমরা বঙ্গবন্ধ ট্রাস্টি থেকে অনুমোদন পেয়েছি। কাজ চলমান আছে। এখানে লেকটি আমরা সংরক্ষণ করেছি। এ কাজ করতে গিয়ে আমাদের বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। আমাদের নামে মামলা- মোকাদ্দমাসহ ঠিকাদারকে জেলও খাটতে হয়েছে।  এটি করতে আমরা প্রায় ১৪ বছর লেগে ছিলাম। রেলওয়ের মন্ত্রী এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এ জায়গা এখন নাসিকের অনুকূলে দিয়ে দিবেন।

 

মেয়র আরো বলেন, নির্বাচনে আপনাদের কাছে আমরা ভোট চাইতে যাই। এরপর আবার করের জন্য আবার আপনাদের বাড়িতে লোক পাঠানো আমার জন্য কষ্টদায়ক। কিন্তু সরকারের চাহিদা মোতাবেক ৮০ ভাগ কর আদায় না করতে পারলে উন্নয়ন কর্মকান্ডে সরকার টাকা দিতে অনীহা প্রকাশ করে। তাই কর আদায়ের জন্য আপনাদের চাপ দিতে হচ্ছে।  

 

বাজেটে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণসহ অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজ বাস্তবায়নের সুযোগ রাখা হয়েছে। শীতলক্ষ্যা থেকে ধলেশ্বরী নদী পর্যন্ত ১৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বাবুরাইল খাল পুনঃখনন ও ওয়াকওয়ে প্রকল্পের কাজ আগামী সপ্তাহে উদ্ধোধনের চেষ্টা করবো। বাজেটে ৫, ১০ ও ২০ বছর  মেয়াদী নগর উন্নয়ন পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়।

 

বাজেট ঘোষণা শেষে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীন জাইকার সহায়তাপুষ্ট ‘সিটি গভর্ন্যান্স প্রকল্প’-এর আয়োজনে সিটি করপোরেশনের স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও সুশাসন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ‘জনতার মুখোমুখি সিটি করপোরেশন’ শীর্ষক অনুষ্ঠান হয়। এতে নগরবাসীর বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন মেয়র আইভী।

 

মেয়র আইভী বলেন, নগরীর যানজট নিরসনে আসলে পুলিশ সুপারের তত্ত্বাবধানে। ট্রাফিক বিভাগ যানজট নিরসনে কাজ করে। চাষাড়ায় অবৈধ বাসস্ট্যান্ড, অবৈধ লেগুনা, সিএনজি স্ট্যান্ড এমপির নাম ব্যবহার করে চলে। যার ফলে চাষাড়ার যানজট পুরো নগরীতে ছড়িয়ে পড়ছে। গতবছরের বাজেট ঘোষণা অনুষ্ঠানে এসে এমপি সেলিম ওসমান দিনের বেলায় নগরীতে ট্রাক প্রবেশ বন্ধ করার ব্যবস্থা করে দেন। পরবর্তীতে কারা বসে টোকেনের মাধ্যমে ৩০টি ট্রাক ঢোকানোর ব্যবস্থা করেন। কিন্তু ৩০টির বদলে ট্রাক ঢুকায় ১০০টি। যানজট কি কারণে সেটি সবাই জানে। ভয়ে কেউ বলেন না। নাসিকের হাত-পা বাঁধা। চাইলেও অনেক কাজ করতে পারে না নাসিক। রাস্তায় রিক্সা চলাচলে ডিভাইডার তৈরী করে দেয়া হবে। মেয়র উন্নয়ন কর্মকান্ড করতে  সহযোগিতা চান।

 

ডিসি বাংলোর সামনের নাসিকের ময়লার ট্রাক রাখা প্রসঙ্গে মেয়র আইভী বলেন, ন্যায় বলেন আর অন্যায় বলেন আমি এর আগে নাসিকের ময়লা ফেলা নিয়ে একটি কাজ করতে বাধ্য হয়েছি, জেলা প্রশাসকের বাসভবনের সামনে প্রতীকীমূলক কয়েকটি ময়লার ভ্যান রাখতে। আমরা কাশিপুর ইউনিয়নে সরকারের খাস জমিতে ময়লা ফেলতে গেলাম তখন সাইফুল্লাহ বাদল তাঁর সমস্ত গুন্ডাপান্ডা দিয়ে আমাদের বাঁধা দিয়েছে। লিংক রোডে ময়লা ফেলতেও বাঁধা পেয়েছি। যার কারণে জেলা প্রশাসকের বাসার সামনে ওভাবে প্রতীকী প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। কাউকে ছোট বা হেন করবার জন্য নয়। আমরা এর পরদিনই দীর্ঘদিন যাবত দাবি করা ১৮ নং ওয়ার্ডে জায়গাতেই ময়লা-আবর্জনা  ফেলার অনুমতি পাই। আমরা বর্জ্য থেকে বিদ্যুত উৎপাদন তৈরী হলে মানুষ গৃহস্থলির ময়লা আবর্জনা কিনে নিবে। এগুলো সম্পন্ন হতে আর বছর দেড়েক লাগবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনার জন্য সরকার জমি কেনার জন্য ১৯২ কোটি টাকা দিয়ে দিয়েছে। আমরা সে টাকা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করবো।

 

তিনি বলেন, ডিসি বাংলো থেকে  মেট্রো হল পর্যন্ত সল্লিমুল্লাহ রোডের রাস্তার অবস্থা দেখতে তাৎক্ষণিকভাবে প্যানেল মেয়র-৩ মিনোয়ারা বেগমকে দায়িত্ব দেন। কুমুদিনী সড়কের বেহাল দশার কারণ সম্পর্কে মেয়র জানান, ওয়াসার ফাটা পাইপে রাস্তা নষ্ট হয়ে যায়। এ ব্যাপারে ওয়াসাকে জরিমানা করে চিঠিও দেয়া হয়েছে।  

 

হাজীগঞ্জ থেকে চাষাড়া পর্যন্ত, সলিমুল্লাহ সড়ক, বঙ্গবন্ধু সড়কের রাস্তার টেন্ডার দেয়া হয়েছে। বৃষ্টির কারণে কাজটি করতে বিলম্ব করা হচ্ছে। ঈদুল আযহার পর এ রাস্তার কাজগুলো করার অনুমতি দেয়া হবে। আপাতত যেখানে বড় বড় গর্ত তৈরী হয়ে সমস্যা হবে সেখানে সাময়িকভাবে সংস্কার করে দেয়া হচ্ছে।

 

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে নাসিকের ড্রেন নির্মাণে স্থানীয় এক এমপি’র সমালোচনা প্রসঙ্গে আইভী বলেন, একসময়ে ওখানে রেলওয়ের পুুকুর ছিলো। সেটি দখল হওয়ার সময় আমি বাঁধা দেই। কিন্তু এখন সেটি দখল হয়ে বিভিন্ন দোকান-পাট তুলে জলাবদ্ধতা তৈরী করা হয়েছে। এখানে সিটি করপোরেশন নিজ উদ্যেগে নিজের টাকা খরচ করে জনগণের উপকাররের জন্য ড্রেন করে দিচ্ছে তাতেও সমালোচনা।

 

মেয়র আইভী আরো বলেন, পল্লী বিদ্যুত, ওয়াসা, ডেসা, টিএনটি, গ্যাস এগুলো সিটি করপোরেশনের এখতিয়ারভুক্ত নয়। কিন্তু এসব গুলোতে জনগণ সিটি করপোরেশনেক ঘিরে ধরে। ২০১৯ সালে সম্ভবত ওয়াসা নাসিকের কাছে হস্তান্তর হয়ে যাবে। নারায়ণগঞ্জের সমস্ত পানির লাইন পরিবর্তন করে বন্দর, সিদ্ধিরগঞ্জে নতুন পানির পাইপ স্থাপন করা হবে। এ জন্য এডিবির ৩০০ কোটি টাকা অন্য কোন খাতে ব্যয় না করে শুধুমাত্র মানুষের সুপেয় পানির ব্যবস্থার জন্যই রাখা হয়েছে।  সরকার পর্যাপ্ত বিদ্যুতের ব্যবস্থা করেছে।

 

ফুটপাত দখল প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ১৬ জানুয়ারি যেভাবে আমাদের নিরীহ লোকদের ঢিল মেরে হাত-পা ভেঙ্গে মাথা ফাটিয়ে দেয়া হয়েছে। আমাদের সহীহ নিয়্যাত ছিলো যে ওইদিন আমরা ফুটপাত দিয়ে শুধু হেটে যাবো, মানুষকে হাটতে দিবো। কিন্তু আমাদের উপর হঠাত যে হামলা সেটি দুঃখজনক ঘটনা। তারাই এখন বুক ফুলিয়ে শহরে হাটে। ফুটপাত দখল করে ব্যবসার টাকা কার হাতে যায় এটি আমরা সবাই জানি। প্রশাসনের লোকও এর সঙ্গে জড়িত। আমি চাইলে আপনাদের সকলকে নিয়ে একটি কিছু করতে পারি। আসলে আমি এ ধরণের কর্মকান্ডে অভ্যস্ত নই। আমি শান্তিপ্রিয় মানুষ। শান্তিপূর্ণভাবেই আমি সমাধান করতে চাই। ফুটপাত দখল হওয়া নিয়ে আপনারা নাগরিক সমাজের সকলে স্বোচ্ছার হবেন এমনটাই আশা করি।

 

এছাড়া  মেয়র বলেন, হাজীগঞ্জ দূর্গ ও সোনাকান্দা কেল্লা রক্ষায় সবার অনুমতি সাপেক্ষ কাজ করার চেষ্টা করবো। শহীদ মিনারের পবিত্রতা রক্ষায় এবং  অবৈধ পার্কিং  রোধে দেখভালের জন্য একজন লোক নিয়োগ দেয়া হবে।

 

বাজেট ঘোষণা অনুষ্ঠানে জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শ্রমিক কল্যাণ ও উন্নয়ণ বিষয়ক সম্পাদক কাউসার আহমেদ পলাশ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার আমিনুল ইসলাম, জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান বাচ্চু, আব্দুল কাদির, আরজু রহমান ভুইয়া, য্গ্মুু সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম আবু সুফিয়ান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি, নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদ আব্দুর রহমান,  মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলী রেজা উজ্জল, কাউন্সিলরবৃন্দ, সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরো খবর