মঙ্গলবার   ১৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ৫ ১৪৩০

বন্ধের পথে পাঁচতারা জুনিয়র হাইস্কুল

প্রকাশিত: ২২ মে ২০১৯  

সিদ্ধিরগঞ্জ (যুগের চিন্তা ২৪) : শীতলক্ষ্যা নদী ভরাট করে গড়ে উঠা একটি ঘাটের জন্য নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দর কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালীপনায় বন্ধ হতে চলেছে সিদ্ধিরগঞ্জ সাইলো গেইট এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাঁচতারা জুনিয়র হাইস্কুল। প্রতিষ্ঠানটি রক্ষা করতে ঘাটের ইজারা প্রত্যাহার করার জন্য একাধিক লিখিত আবেদন করার পরও কর্তৃপক্ষ আমলে নিচ্ছেন না।


বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন নারায়ণগঞ্জ কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসকসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে করা আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সিদ্ধিরগঞ্জ সাইলো গেইট এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীতে নোঙ্গর করা জাহাজ থেকে মালামাল লোড-আনলোড করার জন্য একটি ঘাট ইজারা দিয়েছে নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দর কর্তৃপক্ষ। যেখানে রয়েছে পাঁচতারা জুনিয়র হাইস্কুল নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির দু’পাশ দিয়ে রয়েছে দু’টি রাস্তা। 


এই দু’টি রাস্তা দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল, ধুলা-বালি,খাদ্য পণ্যের ডাস্ট, পরিত্যাক্ত খাদ্য পঁচন দুর্গন্ধ,  ট্রাকের হাইড্রলিক হর্নের শব্দ ও পরিবেশ দূষণের কারণে স্কুলে পাঠদানে ব্যাঘাত ঘটছে। দুর্ঘটনার ভয় ও সারা বছর রাস্তা নষ্ট থাকায় শিক্ষক শিক্ষার্থীরা স্কুল ছেড়ে চলে যাচ্ছে। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ।


স্থানীয়রা জানায়, সামাজিক উন্নয়ন, শিক্ষা, সাংস্কৃতি ও খেলাধূলা প্রসারের লক্ষ্যে সিদ্ধিরগঞ্জ পাঁচতারা সংসদ নামে একটি সামাজিক সংগঠনের নিজস্ব জমিতে ১৯৯৬ সালে স্থাপন পাঁচতারা জুনিয়র হাইস্কুলটি। প্রতিষ্ঠানের আশপাশে চারটি খেয়াঘাট থাকায় নদীর দু’পাড়ের শিক্ষার্থীদের পদচারণ ছিল উল্লেখযোগ্য। কিন্তু পরবর্তীতে বিকল্প ব্যাবস্থা গ্রহণ না করে চারটি ঘাট বন্ধ করে সাইলো বিশ্ব খাদ্য গুদাম গড়ে তোলা হয়। এ অবস্থায় নিরুপায় হয়ে স্থানীয়রা পাঁচতারা জুনিয়র হাইস্কুলের নিজস্ব জমি রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করে। 


২০১৩ সালে সাইলো এলাকায় রাষ্ট্রীয় অগ্রাধিকার প্রাপ্ত প্রকল্প ৩৩৫ মেগাওয়াট রি-সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য বিদেশ থেকে আমদানীকৃত ভারী যন্ত্রাংশ উঠানোর জন্য বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ সাময়িক অনুমতি সাপেক্ষে একটি অস্থায়ী ঘাট ও  রাস্তা তৈরি করে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ শেষ হওয়ার পর ২০১৬ সালে বাংলাদেশ অভ্যন্তরিণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ স্থানীয়দের মতামত বা জনমত জরিপ না করেই বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বিভিন্ন জাহাজ থেকে মালামাল লোড-আনলোড করার জন্য অস্থায়ী ঘাটকে নিয়মিত ঘাট হিসেবে অন্তর্ভুক্ত ও ইজারা প্রদান করেন।   


পাঁচতারা জুনিয়র হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বিজয় কৃষ্ণ চক্রবর্তী জানান, গত ১ বছর আগে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৬৩০ জন এবং শিক্ষক ২৩ জন। বর্তমানে শিক্ষার্থী রয়েছে মাত্র ৫০জন শিক্ষক ৮ জন। শিক্ষক শিক্ষার্থী না থাকায় এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা ছাড়া আর উপায় দেখা যাচ্ছেনা। 
সিদ্ধিরগঞ্জ পাঁচতারা সংসদের সভাপতি আলী আকবর খান জানায়, অনেক স্বপ্ন নিয়ে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের কোলাহলে স্কুলটি সরগরম থাকতো। স্কুলের দু’পাশ দিয়ে দু’টি রাস্তা দিয়ে সারাক্ষণ ট্রাক চলাচল, ঘাট লেবারদের হইহুল্লোর, ধুলা-বালি, পরিবেশ ও শব্দ দূষণের কারণে পাঠদান দূরের কথা শ্রেণি কক্ষেও বসা যাচ্ছে না। নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দর কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসক, জেলা শিক্ষা অফিসার, পরিবেশ অধিদপ্তর ও ঘাট ইজাদার বরাবর লিখিত আবেদন করেও কোন প্রতিকার হচ্ছে না। 


এ বিষয়ে জানতে নারায়ণগঞ্জ নদী বন্ধরের যুগ্ম পরিচালক মো. গোলজার আলীর সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। উপ-পরিচালক মো.শহীদুল্লার সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি জানান, এটি রাজস্ব শাখার বিষয়। এ নিয়ে কথা বলার এখতিয়ার আমাদের নেই। হেড অফিসের সাথে কথা বলেন। 

এই বিভাগের আরো খবর