বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

বন্দরের গণহত্যা দিবস আজ

প্রকাশিত: ৪ এপ্রিল ২০২০  

বন্দর (যুগের চিন্তা ২৪) : আজ ৪ এপ্রিল (শনিবার) বন্দর গণ হত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে নারায়ণগঞ্জের বন্দরে পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠে বর্বর পাক হানাদার বাহিনী। বন্দরবাসীর জন্য দিনটি বড়ই বেদনাদায়ক এবং শোকের দিন।


এ দিন  বিভিন্ন গ্রাম থেকে ৫৪ জন হিন্দু-মুসলমান নিরীহ গ্রামবাসীকে ধরে এনে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে পাক হানাদাররা। পরে লাশগুলো আগুনে পুড়িয়ে উল্লাস করে। সে দিনের কথা মনে হলে আজও গা শিউরে ওঠে এলাকাবাসীর। ১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল ভোরে  রাজাকার এবং স্থানীয় দোসরদের সহায়তায় বন্দরে প্রবেশ করে পাকিস্তানি বাহিনী। তারা  গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দেয়। 


বিভিন্ন গ্রাম থেকে নিরীহ মানুষ ধরে এনে সিরাজদ্দৌলা ক্লাবের মাঠের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে জড়ো করে। এরপর সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে। ব্রাশ ফায়ারে কেউ সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেন কেউবা মৃত্যুযন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকেন। মাঠে রক্ত গঙ্গা বয়ে যায়। রক্ত স্রোতে  সবুজ চত্ত্বর লাল বর্ণ ধারণ করে। লাশের উপর লাশ পড়ে থাকে। 


কিন্তু বর্বরতার এখানেই শেষ নয়। ঘাতকেরা  আশপাশের গ্রাম থেকে মুলি বাঁশের বেড়া এনে লাশের উপর রেখে গান পাউডার ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে পুড়ে ছাই হয়ে যায় আহত ও নিহত ৫৪ জন। এ  রোমহর্ষক ঘটনা গ্রামবাসী অনেকে দূর থেকে অবলোকন করেছেন। হৃদয় বিদায়ক দৃশ্য মনে হলে আজও আঁতকে উঠেন তারা। আজও চোখের কোনে জমাট বাঁধে বেদনাশ্র“।ধুকরে ধুকরে কাঁদেন শহীদ পরিবারগুলো।  


সেদিনের প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যে ছিলেন আব্দুল মান্নান ভূইয়া (প্রয়াত), দীল মোহাম্মদ ও মোহাম্মদ আলী হাফেজ। পাকবাহিনী চলে যাওয়ার পর তারা এসে দেখেন ৫৪ জন নিরপরাধ মানুষের আগুনে পুড়ে যাওয়া মরদেহ পড়ে আছে। বিকৃত হয়ে যাওয়ায় সব মরদেহ সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। ৫৪ জন শহীদের মধ্যে মাত্র ২৫ জনের নাম এবং পরিচয় জানা গেছে। 


তারা হলেন- ছমিরউদ্দিন সরদার, মন্তাজউদ্দিন মাস্টার, আলী আকবর, রেজাউল ইসলাম বাবুল, আমির হোসেন, নায়েব আলী, আলী হোসেন, ইউসুফ আলী, সুরুজ চন্দ্র কানু , জবুনা চন্দ্র কানু, লছমন চন্দ্র কানু, কানাই লাল কানু, গোপাল চন্দ্র, ভগবত দাস, দুর্গাচরণ প্রসাদ, নারায়ন চন্দ্র প্রসাদ, ইন্দ্রা চন্দ্র দাস, সুরেশ চন্দ্র দাস, দিগেন্দ্র চন্দ্র বর্মন, বুনেল চৌধুরী, মোবারক, হারাধন মাস্টার, নারায়ন চৌধুরী, বাদশা খান ও পরেশ দাস। 


বন্দর গণহত্যা দিবস উপলক্ষে সিরাজদ্দৌলা ক্লাব মাঠে নির্মিত শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে আজ সকালে সামাজিন দূরত্ব বজায় রেখে বিভিন্ন সংগঠন ও এলাকার কয়েকজন মোমবাতি প্রজ্বালন করেন।


করোনাভাইরাসের কারণে পুষ্পস্তবক অর্পণ, কালো পতাকা উত্তোলন, শোক র‌্যালি, মিলাদ মাহফিল, স্মরনসভা, কাঙ্গালীভোজসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন স্থগিত করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরো খবর