বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

বন্দর ইউপি চেয়ারম্যান এহসান বরখাস্ত

প্রকাশিত: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

যুগের চিন্তা রিপোর্ট : অবশেষে জন্ম নিবন্ধন ও ট্রেড লাইসেন্স বাবদ ৩৩ লাখ ৭২ হাজার টাকা আত্মসাতের ঘটনায় সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে বন্দর ইউনিয়ন পরিষদের বিতর্কিত চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন আহমেদকে। পহভম  সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে তাকে বরখাস্ত করা হয়।

 

একই সঙ্গে চূড়ান্তভাবে তাকে কেন বরখাস্ত করা হবে না সে বিষয়ে জানতে চেয়ে চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এছাড়াও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অপর এক স্মারকে আত্মসাতকৃত টাকা আদায়ের জন্য চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন আহমেদ ও সাবেক সচিব মোহাম্মদ ইউসুফের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এর আগে জন্ম নিবন্ধন ও ট্রেড লাইসেন্স বাবদ ৩৩ লাখ ৭২ হাজার টাকা আত্মসাতের ঘটনায় বন্দর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সচিব মোহাম্মদ ইউসুফকে বরখাস্ত করা হয়।

 

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ এই দুই অর্থ বছরের জন্ম নিবন্ধন ও ২০১৭ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত ছয় মাসের ট্রেড লাইসেন্স খাতে আদায়কৃত অর্থ আত্মসাত করেছেন বন্দর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন আহম্মেদ ও তার সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ। এই দুই খাতে মোট ৩৩ লাখ ৭২ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ২০১৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর এ ঘটনায় অডিট আপত্তি তোলা হয়। পরে তদন্তে নামে স্থানীয় সরকার বিভাগ।

 

তদন্তে জানা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে জন্ম নিবন্ধন ফি বাবদ ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৩৮০ টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে একই খাতে ১৪ লাখ ৩৩ হাজার ৭২০ টাকা এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১১ লাখ ৬৪ হাজার ৯০০ টাকা আত্মসাত করা হয়েছে।

 

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের তদন্তে এ অভিযোগ প্রমাণিত হলে উক্ত টাকা আদায়সহ ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিবের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয় নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসককে। এবং আত্মসাতকৃত টাকা ফেরত দেয়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়। তবে, কোনো এক রহস্যজনক কারণে ইউসুফের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও বহাল থেকে যান এহসান। বলা হয়ে থাকে তিনি স্থানীয় সাংসদের লোক। সেই প্রভাবেই হয়তো তিনি এর থেকে রেহাই পেয়ে থাকতে পারেন। এমনকি আত্মসাৎকৃত টাকাও আদায় করা হয়নি। এ বিষয়ে স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

 

বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শুক্লা সরকার বলেন, এ বিষয়ে এখনও আমি চিঠি পাইনি। জেলা প্রশাসক হয়ে চিঠি আসবে। চিঠি হাতে পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের জুলাই মাসে বন্দর ইউপির সচিব হিসেবে যোগদান করেন মোহাম্মদ ইউসুফ। এখান থেকে তকে বদলী করা হয় ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে। সর্বমোট দেড় বছর তিনি এই ইউপির দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি ঘটেছে ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ এই দুই অর্থ বছরের জন্ম নিবন্ধন এবং ২০১৭ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ট্রেড লাইসেন্স খাত থেকে ৩৩ লাখ টাকা ।

 

সচিব ইউসূফ বলেছিলেন, ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে আমি ছিলাম না এবং ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে বদলি হয়ে যাই। সুতরাং তিনটা অডিট আপত্তির একটাতে আমি ছিলাম। বাকি দুইটাতে তো আমি ওই ইউনিয়নে ছিলাম না। ওই সময়গুলোতে যারা সচিব ছিলেন তাদের অভিযুক্ত করার কথা ছিল। কিন্তু তারা হন নাই। তিনটাতেই আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

 

তিনি বলেন, আমি যোগদানের ৫ বছর আগ থেকেই জন্ম নিবন্ধন ও ট্রেড লাইসেন্সের টাকা আত্মসাতের বিষয়টি চলে আসছিল। আমি এ বিষয়ে জন্ম নিবন্ধনের স্থায়ী কমিটির সভাপতির কাছে লিখিতও দিয়েছিলাম। তিনি ইউএনও অফিসে জমা দিয়েছিলেন। আমি সেখানে সচিব হিসেবে যা যা করার দরকার করেছি। কিন্তু যথাযথ কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা না নিলে আমি তো কিছু করতে পারি না।

 

তিনি আরও বলছেন, আমি পুনঃতদন্তের সুযোগে আমার ডকুমেন্ট সাবমিট করেছি। এখন বিভাগীয় মামলা চলছে। তবে, চেয়ারম্যান সাহেব চাইতেছেন প্রভাব খাটিয়ে আমাকে ফাঁদে ফেলে আমাকে দিয়েই পুরো টাকাটা পরিশোধ করাতে।

 

সচেতন মহল মনে করছেন, উত্থাপিত অভিযোগের আলোকে সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিৎ। চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপ ছাড়া একজন সচিব কখনোই এমন কাজ করতে পারে না। তাছাড়া চেয়ারম্যান হিসেবে এহসান উদ্দিন নিজেও এই জালিয়াতির দায় এড়াতে পারেন না। ফলে, কোনো না কোনোভাবে এর সাথে তার সম্পৃক্ততা রয়েছে।

এই বিভাগের আরো খবর