শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বতর্মান ও সাবেক কাউন্সিলর কবির ও মুন্না গ্রেফতার: রিমাণ্ডের আবেদন

প্রকাশিত: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : নগরীরর দক্ষিণ নলুয়া জামে মসজিদ কমিটি ও মসজিদের জমাকৃত টাকা নিয়ে বিরোধের জেরে রোববার দিবাগত মধ্যরাতে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘঠেছে । এ ঘটনায় ১৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কবীর হোসাইন ও সাবেক কাউন্সিলর কামরুল হাসান মুন্নাসহ ২২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

 

সংঘর্ষের সময় উভয় গ্রুপের লোকজন আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে একে অন্যের উপর হামলা করে । এতে অন্তত ২০/২৫ জন আহত হয় ।  সংঘর্ষের পর কাউন্সিলর কবীর হোসাইন ও কামরুল হাসান মুন্নার পক্ষে পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের করা হয়।


মামলার সূত্রধরে সদর মডেল থানা পুলিশ  সোমবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) ভোরে নিতাইগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করেন।পরে  ৭দিনের রিমাণ্ড চেয়ে তাদেরকে আদালতে প্রেরণ করে পুলিশ ।  কামরুল হাসান মুন্না বর্তমানে মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারন সম্পাদক। 


স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণ নলুয়া জামে মসজিদ কমিটি নিয়ে অনেকদিন থেকেই বর্তমান কাউন্সিলর কবীর হোসেন ও সাবেক কাউন্সিলর কামরুল ইসলাম মুন্নার মধ্যে বিরোধ চলছিলো । কামরুল হাসান মুন্না দীর্ঘ ৬ বছর ধরে একক ক্ষমতায় স্বঘোষিত সভাপতি হয়ে মসজিদের নিয়ন্ত্রণ করে আসছে।

 

মসজিদের আয়-ব্যয়ের হিসাব একাধিকবার এলাকাবাসী ও মুসল্লিদের সাথে কথা দিয়েও বুঝিয়ে দেননি মুন্না । এ নিয়ে কাউন্সিলর কবির ও মুন্নার লোকজন ফুঁসে উঠে । এর জের ধরেই এ সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটে । 


এর আগে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাংসদ সেলিম ওসমানের দেয়া অনুদানের টাকা নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছিলো। সাংসদ কত টাকা অনুদান দিয়েছেন তা এলাকাবাসীর কাছে স্পষ্ট করেননি মুন্না। 


অভিযোগ উঠেছে, ওই টাকার হিসাব জানতে চাইলে ওই সময়ে মসজিদে নিয়োজিত মুফতি মাও. রহমানকে মসজিদ থেকে চলে যেতে বাধ্য করা হয় । গত ৩ সপ্তাহ আগে জুম্মার নামাজের পর মসজিদের সাবেক সভাপতি মো. আলী ফালু সর্বশেষ মসজিদ ফান্ডের ১৫ লাখ টাকার হিসাব জানতে চান। যেহেতু ওই টাকা মসজিদের ব্যাংক হিসাবে জমা নেই। 


তিনি মুসল্লিদের বলেন মসজিদের ব্যাংক হিসাব থাকার পরও মসজিদের কোষাধক্ষ্য ১৮ নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মজিবুর ও মুন্না তাদের নিজের কাছে এ অর্থ রেখেছেন । যার কোন হিসেব নেই । 


পরে কাউন্সিলর কবির নতুন করে আহ্বায়ক কমিটি করে এটাকা ব্যাংকে জমা দিতে বললে বিরোধ চরমে উঠে।  এরপরই গতকাল রোববার এশার নামাজের পর মসজিতে এ নিয়ে এলাকাবাসীসহ কাউন্সিল কবির ও মুন্না উভয়পক্ষ বসে।

 

সেখানে বাকবিতণ্ডার পর কবীরের ভাগিনা টিটুকে মারধর করে মসজিদ থেকে বের করে দেয় মুন্না পন্থী লোকজন। এঘটনায় উভয় গ্রুপের লোকজনের মধ্যে কয়েক দফা ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।


উভয় গ্রুপের লোকজনই আগ্নেয়াস্ত্রসহ ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে একে অপরের উপর হামলা চালায়। পুরো এলাকাই রণক্ষেত্রে পরিণিত হয়। চারদিকে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনণ আনে। 


এ ঘটনায় উভয় পক্ষই নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করে। পরে মামলা সূত্র ধরে ভোর চারটার দিকে অভিযান চালায় পুলিশ । অভিযানকালে বতর্মান ও সাবেক কাউন্সিলর কবির ও মুন্নাসহ উভয় গ্রুপের মোট ২২ জনকে গ্রেফতার করে।


একটি মামলায় কামরুল হাসান মুন্নার বিরুদ্ধে হত্যার চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়। এতে অভিযোগ করা হয় মুন্না ধারালো ছুরি দিয়ে কয়েকজনকে কুপিয়ে জখম করে। এ মামলায় কামরুল হাসান মুন্না, রকিবুল হাসান লিয়ন, হুমায়ন কবির ও শ্যামল শীলকে আসামী করা হয়। 


অপর মামলায় কাউন্সিলর কবির হোসেন, বিপু, কালা ফারুখ, আমিন, ওবায়দুল্লাহ, সাহবুদ্দিন, সুজন মিয়া সহ ১৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। 
কবিরের বিরুদ্ধেও ধারালো অস্ত্র নিয়ে প্রতিপক্ষের উপর হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। সেও ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা করেছে অভিযোগ করা হয় মামলায়।


কবীর হোসাইন ও কামরুল হাসান মুন্নার গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সদর মডেল থানা পুলিশের অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি) মো. কামরুল ইসলাম।


তিনি জানান, রোববার মধ্যরাতে সংঘর্ষের ঘটনায় কবীর হোসাইন ও কামরুল হাসান মুন্নার পক্ষে পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের হয়েছে। সবাইকেই আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। উভয় মামলায় আসামীদের বিরুদ্ধে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।  


তিনি আরও জানান, বিশৃঙ্খলাকারী যে যত বড় ক্ষমতাবান হোক তাদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
 

এই বিভাগের আরো খবর