বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ফুল চাষে সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন

প্রকাশিত: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

“জোটে যদি একটি পয়সা, খাদ্য কিনিও ক্ষুধার লাগি। দু’টি যদি জোটে তবে, অর্ধেক ফুল কিনে নিও.... হে অনুরাগী।” কবির এই কথার আলোকে সামনে রেখে দেশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ফুলের চাষ শুরু হয় সত্তর দশকের গোড়ার দিকে। আশির দশকে এসে তা ব্যাপকতা লাভ করে। প্রাথমিক অবস্থায় যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলায় সর্বপ্রথম বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ফুলের চাষ শুরু হয়। পরবর্তী পর্যায়ে তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। 

 

বর্তমানে যশোর, সাভার, চুয়াডাঙ্গা, নারায়ণগঞ্জের বন্দর, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, রংপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটিতে ফুলের চাষ হচ্ছে। সারাদেশে প্রায় সাড়ে চার হাজার চাষি ফুল উৎপাদন করছে। দেশের ৭০ ভাগ ফুল যশোরে উৎপাদন হয়। ফুল উৎপাদনের সাথে প্রায় পঁচিশ হাজার পরিবার যুক্ত আছে। ফুল উৎপাদন, বিপণন, বিক্রি এবং রপ্তানি কাজে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে প্রায় দুই লাখ লোক নিয়োজিত আছে। বর্তমানে আমাদের দেশে ফুল একটি অর্থকরী ফসল হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে।

 

আমাদের দেশে কাঁচা ফুলের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন উৎসব, পার্বণে ফুলের ব্যবহার হচ্ছে। শুধু তাই নয় বাংলাদেশের ফুল এখন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। ফুল চাষে বাংলাদেশের সম্ভাবনা অনেক। বাংলাদেশের জমি এবং জলবায়ু কাঁচা ফুল চাষের জন্য খুবই উপযোগী। বাংলাদেশে বিভিন্ন জাতের ফুল উৎপন্ন হয়। এসব ফুলের মধ্যে গাডিউলাস, রজনীগন্ধা, গোলাপ, গাঁদা, লিলিয়াম, থাইঅর্কিড, কার্নেশন, শর্বারা, গোবাল প্রভৃতি ফুল রপ্তানি হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্য, সিঙ্গাপুর, মালেশিয়া, ব্রিটেন, পাকিস্তান, ভারত, ইতালী, কানাডা, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্র্রান্সে রপ্তানি করা হচ্ছে। এসব ফুলে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে স্বল্প পরিসরে রপ্তানি করা হচ্ছে। 

 

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর হিসেবে দেখা যায়, ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে এদেশ থেকে ফুল রপ্তানি হয়েছিল ২৭৬ কোটি ৯ লাখ টাকা, ২০১৩ সালে আয় হয়েছিল ১৬.৫৮ মিলিয়ন ডলার। দিন দিন ফুল রপ্তানি বাড়ছে। পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা পেলে এই আয় বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়। 

 


আদিযুগে ফুল পিপাসু নারী তার সৌন্দর্য বৃদ্ধির কারণে বনের ফুল সংগ্রহ করতো। পরবর্তীতে পূজার জন্য বনের ফুল সংগ্রহ করতো। সেই ফুল-ই এখন বহুমুখী কর্মকাণ্ডে ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। ঘর সাজানো, মঞ্চ সাজানো, জন্মবার্ষিকী, বিবাহবার্ষিকী, প্রিয়জনকে শুভেচ্ছাসহ নানা কাজেই ফুলের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই ফুল অনুরাগীদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় প্রায় ১২ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের ফুল চাষ করা হচ্ছে। তবে চাষিদেরকে অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে পরিবহন, বাজারজাতকরণ এবং বিপণন সমন্বয় না থাকায় ফুল চাষিদের বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

 

তাছাড়া আমাদের দেশে ফুল চাষিদেরকে ফুল চাষের ব্যাপারে উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। এখানে নেই কোনো উন্নত প্যাকেজিং এবং সংরক্ষণের জন্য হিমাগার, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ফ্রিজার ভ্যান। বাংলাদেশে উৎপাদিত ফুল বিদেশে রপ্তানি বাড়াতে বীজ উৎপাদন প্রযুক্তি গবেষণা, ফুলচাষি, ফুল ব্যবসায়ী, ডিজাইনারদের জন্য পোস্ট হারভেস্ট ম্যানেজমেন্টর উপর প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। ফুল চাষ এবং রপ্তানি বাড়াতে ফুল চাষি, রপ্তানিকারকদেরকে পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে এই খাতকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

 


রণজিৎ মোদক
লেখক : শিক্ষক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট এবং সভাপতি, ফতুল্লা রিপোর্র্টার্র্স ক্লাব
মুুঠোফোন : ০১৭১১ ৯৭৪ ৩৭২

এই বিভাগের আরো খবর