শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ফতুল্লা থানা আ’লীগের পদ বাগিয়ে নিতে তোড়জোড় লবিং

প্রকাশিত: ২৫ আগস্ট ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের কমিটি আগামী সেপ্টেম্বর মাসে হবে এটা নিশ্চিত করেছেন থানা কমিটির বর্তমান হেভিওয়েট নেতৃবৃন্দ। এরপর থেকে অনেকেই শুরু করে দিয়েছেন লবিং। গোপনভাবে প্রস্তুতী নিচ্ছেন অনেকে। 


কমিটির গুরুত্বপূর্ন পদ সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ। এই তিনটি পদ ছাড়াও বর্তমান কমিটির অনেকেই পদ পদবী নিয়ে কয়েকদিন পরেই কাউন্সিলর নির্ধারনের পর মাঠে নামবেন তোড়জোর করেই। তবে শেষ পর্যন্ত কমিটিতে রদ বদল কতোটা হবে তা নিয়েও চলছে নানা হিসেব নিকেষ।


এর মধ্যে ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সম্মেলনে সভাপতি পদে সাইফ উল্লাহ বাদল যদি তিনি না সম্মেলন থেকে সরে দাড়ান তবে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এম শওকত আলী, সহ সভাপতি শামসুল হক শামসুল হক, ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ, কুতুবপুর ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি জসিম উদ্দিন, ফতুল্লা থানা আওয়ামলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান সভাপতি পদে লড়বেন বলে আঁটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছেন। 


অপরদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বদিউল আলম বদু, এইচএম ইছহাক, স্বেচ্ছা সেবকলীগ সভাপতি ফরিদ আহম্মেদ লিটনও ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন অপর একটি সূত্র। গোপনে চলছে তাদের লবিং। 


এই লবিংয়ে কে কতোদূর এগিয়ে থাকবেন তা  সাংসদ শামীম ওসমানের উপর-ই অনেকটা নির্ভর করবে। অপরদিকে আইভী বলয়েরও দুই একজন আগামী কমিটিতে স্থান করে নিতে পারেন বলেও জানা গেছে। 


সর্বশেষ ২০০৪ সালে ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে সভাপতি পদে ছিলেন সাইফ উল্লাহ বাদল, সাধারণ সম্পাদক পদে ছিলেন এম শওকত আলী। 


২০০১ সালের বিএনপি জোট সরকারের সময় বর্তমান থানা কমিটির অনেকেই নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। সাংসদ শামীম ওসমান দেশ ত্যাগের পর থেকেই এই কমিটি ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগকে সুসংঠিত করার ব্যাপারে কাজ করেছেন তারা। 


তবে কমিটির অন্য নেতৃবৃন্দের মধ্যে চাপা ক্ষোভও রয়েছে। ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কবরী সারোয়ার নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে সাংসদ নির্বাচিত হন। 


এরপর কবরী নিজেই একটি বলয় সৃষ্টি করে। তৎকালীন সময়ে কবরী ও তার লোকজন ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি সাইফ উল্লাহ বাদল ও সাধারণ সম্পাদক এম শওকত আলীর সাথে প্রায় সময় অসৌজ্যমূলক আচরণ করতেন। 


ফতুল্লায় সেই সময় শামীম ওসমান বলয়কে কোনঠাসা করে রেখেছিলেন কবরী বলয়। ২০১৩ সালে শামীম ওসমান সাংসদ হওয়ার পর ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগে শামীম ওসমান বলয় প্রাণ ফিরে পায়। 


তবে এ সময় হাইব্রিডদের উত্থান ঘটে ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগে। যারা এক সময় কবরী বলয়ে থেকে থানা আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দকে কোনঠাসা করে রেখেছিলেন, তারাই পুনরায় থানা কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে আধিপত্য বিস্তার করতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে। 
জেলার অন্য যে কোন থানা কমিটির চাইতে ফতুল্লায় হাইব্রিডদের উত্থান ঘটেছিল ব্যাপকভাবে। আর এজন্য হেভিওয়েট নেতাদের প্রতি মনোক্ষুন্নও ছিলেন অনেকে। এ নিয়ে ফতুল্লায় তৃনমূল আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছিল। 


এ বিষয়ে সাংসদ শামীম ওসমানকে কর্মীরা একাধিকবার অবগত করলেও তিনি এ ব্যাপারে  তেমন কোন ব্যবস্থা নেয়নি বলেও অভিযোগ বিস্তর। 


জেলায় রুপগঞ্জ ও আড়াইহাজার থানায় ইতিমধ্যে সম্মেলন হয়ে গেছে। বাকি রয়েছে বন্দর,ফতুল্লা,সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সম্মেলন। বেশ কয়েক মাস আগে নারায়ণগঞ্জের কয়েকটি থানা কমিটি হওয়ার বিষয়ে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে একটি লিখিত চিঠি দেয় একটি পক্ষ। 


সেই চিঠির পরই ওবায়দুল কাদের নারায়ণগঞ্জে থানা আওয়ামীলীগের কমিটি হওয়ার ব্যাপারে চাপ প্রয়োগ করেন জেলা কমিটিকে। এরপরই সম্মেলনের দিকে মনোযোগী হয় নেতৃবৃন্দ। তবে ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের কমিটি নিয়ে দুটি পক্ষের মধ্যে মৃদু যুদ্ধ হবে বলেও মনে করছেন অনেকে। 


এই যুদ্ধে শামীম ওসমান বলয় আইভী বলয়ের প্রভাব শেষ পর্যন্ত কার পালে হাওয়া লাগে সেটাই দেখার বিষয় এখন। আগামী সেপ্টেম্বর সাসে সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে। তবে তা না হলেও অক্টোবরের  মধ্যেই এই সম্মেলনের কার্যক্রম শেষ হবে বলেও নিশ্চিত করেছে সূত্রটি।  

 
দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় পর ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের কাযর্করী কমিটির সভা বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় আগামী ১১ দিনের মধ্যে বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে সদস্য নবায়ন করা হবে। এরপর করা হবে কাউন্সিলর নির্ধারন। সব কিছু ঠিক থাকলে জেলা কমিটির সাথে সমন্বয় করে কাউন্সিল বা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। 


এই সমেলনকে ঘিরে শুরু হয়েছে নতুন ছক। কে হবেন সভাপতি আর কে-ইবা হচ্ছেন সাধারণ সম্পাদক এই নিয়েও শুরু হয়ে গেছে গ্রুপিং লবিং। তবে শেষ পর্যন্ত শামীম ওসমান বলয় থানা কমিটিতে গুরুত্বপূর্ন পদ পাবেন বলে ধারনা করছে তৃনমূল। অপরদিকে  আগামী থানা কমিটিতে শ্রমিক নেতা কাউছার আহম্মেদ পলাশ ও শহীদুল্লার বলয়ের আবির্ভাব ঘটবে বলেও নিশ্চিত করেছে আরেকটি বলয়।


তবে কাউন্সিলে পলাশ বলয় যাতে কমিটিতে আসতে না পারে ইতিমধ্যে সে বিষয়ে শামীম ওসমান বলয় সজাগ দৃষ্টি  রাখছে বলে নিশ্চিত করেছে একটি সূত্র। ইতিমধ্যে জেলা কমিটি, সাংসদ শামীম ওসমানের সাথেও অনেকেই নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছেন অনেকেই।

সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে  নতুন মুখের অনেকেই তোড়জোর করে মাঠে নেমেছেন বলেও জানিয়েছেন অপর একটি সূত্র।
সভাপতি হিসেবে ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের বর্তমান সভাপতি সাইফ উল্লাহ বাদলকে সাংসদ শামীম ওসমান চাইলে তিনি এবারও একই পদে থাকবেন। তবে সেক্ষত্রে সাধারণ সম্পাদক পদে শওকত আলী থাকবেন আগের পদেই। 


যদি সাইফ উল্লাহ বাদল সভাপতির পদে আর থাকতে না চান, তবে তিনি সভাপদি পদে এম শওকত  আলীকে সমর্থন করবে বলেও একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন। 


তবে সাধারণ সম্পাদক নির্ধারণ করতে গিয়ে থানা আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দকে অনেকটা বেগ পোহাতে হবে। সাধারণ সম্পাদক পদে ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বদিউল  আলম বদু, যুগ্ম সম্পাদক, ইসহাক,সেচ্ছা সেবক 
কাউন্সিল বিষয়ে ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি এম সাইফ উল্লাহ বাদল বলেন,কাউন্সিল হবে। সে অনুয়ায়ী প্রস্তুতী  চলছে। জেলা কমিটির সাথে সমন্বয় করেই সব কিছু করা হবে।  

এই বিভাগের আরো খবর