শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

প্যারাডাইজ ক্যাবলস শ্রমিকদের তিন মাসের বেতন বকেয়া, বিক্ষোভ(ভিডিও)

প্রকাশিত: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : ফতুল্লার কুতুবআইলে অবস্থিত রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান প্যারাডাইজ ক্যাবল লিমিটেডের সাড়ে চারশো শ্রমিক তাদের ৩-৪ মাসের বকেয়া-বেতনসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার দাবিতে ৩য় দফা অভিযোগপত্র প্রদানের পরও কোনো সমাধান না পাওয়ায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে ।

রোববার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে চাষাড়ায় অবস্থিত কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ-মহাপরিদমশকের কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে তারা এ বিক্ষোভ প্রদর্শন করে ।

মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্টের সহকারী অপারেটর রাসেল জানায়, গত ৩ বছর ধরে আমাদের ৩-৪ মাসের বেতন বকেয়া রেখে দিচ্ছে। ওভার টাইমের বিলসহ কোম্পনি থেকে অন্যান্য যেসব সুযোগ আমরা পেয়ে থাকি সেগুলোও তারা দিচ্ছেনা । ফলে আমরা প্রায় সাড়ে চারশো শ্রমিক গত কয়েক বছর যাবৎ মানবেতর জীবন-যাপন করছি ।

ক্ষোভের সাথে তিনি আরও জানান, আমরা আমরা এই অফিসে (কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শকের কার্যালয়) তিনবার অভিযোগপত্র দেওয়ার পরও কোনো সমাধান পাইনি ।

আজকে কেন এসেছেন ? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, সর্বশেষ আমরা ১০ ফেব্রুয়ারি যে অভিযোগপত্রটি দিয়েছিলাম, তখন আমাদের কাছ থেেেক এক সপ্তাহের সময় নেওয়া হয়েছিলো সমাধানের জন্য। কিন্তু আমরা কোনো  সমাধান পাইনি । আজকে আমরা আসছি এ বিষয়ে জানার জন্য।

যখন রাসেলের সাথে এই প্রতিবেদকের কথা হচ্ছিল তখন দেখা যায় নারীসহ শতাধিক শ্রমিকরা কাগজ নিয়ে বিক্ষোভ করছে এবং স্লোগান দিচ্ছে। এগুলো কিসের কাগজ জানতে চাইলে শ্রমিকরা সেগুলো দেখিয়ে বলে, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর বরাবর শ্রমিকদের স্বাক্ষরিত তিনটি অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে। প্রথম অভিযোগপত্রটি দেওয়া হয়েছিল গত বছরের ১০ জানুয়ারি, দ্বিতীয়টি ৮ নভেম্বর এবং সর্বশেষটি এবছরের ১০ ফেব্রুয়ারি। তাছাড়া অভিযোগপত্রগুলোর অনুলিপি নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক , পুলিশ সুপার , পরিচালক ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ-৪, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফতুল্লা মডেল থানা, পরিচালক বিভাগীয় শ্রম দপ্তর, শ্রমিক উন্নয়ন ও কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক জাতীয় শ্রমিক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটি বরাবরও জমা দেওয়া হয়েছে।

প্যাকিং সেকশনে কাজ করা  নিলুফা বেগম বলেন, আমরা ৪ মাসের বেতনসহ তিন বছরের বোনাস পাচ্ছিনা ! এছাড়াও বিভিন্নভাবে অনেক টাকা আমরা পাওনা মালিকের কাছে।

আবেগাপ্লুত হয়ে তিনি আরও বলেন, আমরা চাইলেও এই প্রতিষ্ঠান ছেড়ে চলে যেতে পারছিনা। কারণ ২৫ বছর যাবৎ এখানে কাজ করছি। এটাকে নিজের ঘরের (সংসার) মতো মনে হয়। কিন্তু মালিক তো বোঝেনা! কী করবো?

কাজে যোগ দেওয়ার সময়ে ফ্যাক্টরির অবস্থা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যখন এখানে কাজে আসি তখন ছোট্ট একটা ঘর ছিল আর আজ বিশাল প্রতিষ্ঠান। বিশ্বের ২৮টি দেশে আমাদেও তৈরি পণ্য রপ্তানী করা হয়। কিন্তু আমরা ঠিকভাবে সংসার চালাতে পারছিনা। বাচ্চাদের পড়ালেখা করাতে পারছিনা। ভাড়া ঠিকমত দিতে পারিনা তাই, বাড়িওয়ালা আমাদের বাসা থেকে তাড়িয়ে দিতে চায়।

প্রবীণ জাহাঙ্গীর আলম নামে একজন শ্রমিক বলেন, আমি আজ ২১ বছর যাবৎ এখানে কাজ করছি। কিন্তু গত তিন বছর যাবত মালিক পক্ষ আমাদের সাথে পাওনা টাকা নিয়ে তালবাহানা শুরু করেছে ! এভাবেই যদি চলতে থাকে তাহরে আমাদের দুরবস্থা আর লাঘব হবে না।

একজন শ্রমিক জানান, আজকে সকালে এক প্রতিবেশির কাছ থেকে টাকা ধার করে নাস্তা খেয়ে আসছি। দুপুরে কি খাবো বলতে পারছি না। বাড়িওয়ালা বাসা ছেড়ে দেয়ার তাগিদ দিচ্ছে। আমি সরকারের কাছে এটা সমাধানের সাহায্য চাই ।
    
মোক্তার হোসেন নামে একজন শ্রমিক বলেন, আমরা আন্দোলন করে রুটি রুজির অধিকার আদায় করব। আমরা বিভিন্ন নেতাদের কাছে গিয়েছিলাম তারা আমাদের আশ্বাস দিয়েছে কিন্তু কিছুই করে নাই। আমারা এখন আর সহ্য করতে পারছি না। ৬ তারিখ পর্যন্ত দেখব। তারপর আমরা সকলে মিলে একত্রে রাজপথে আন্দোলনে নামবো।

এ বিষয়ে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর’র শ্রম পরিদর্শক (সাধারণ) এস.এম কামাল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবিষয়ে আমরা শুরু থেকে শ্রমিকদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করে আসছি। আমাদের হাই কমান্ড আফিসারদের সাথেও কথা বলেছি। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকতাদের সাথে আলাপ হয়েছে। যদি তারা কোন সুরাহা না করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে শ্রম আইন অনুযায়ী ২৩ ধারায় মামলা দায়ের করা যাবে। আর আমি আশা করছি দ্রুতই এর সমাধান হবে।  

 

এবিষয়ে প্যারাডাইজ ক্যাবলের প্রধান কার্যারলের একজন কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছা প্রকাশ করে তাঁর চাকুরির বরাত দিয়ে বলেন, আমরা প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করি। এই ব্যাপারে আপনারাও জানেন আমরাও জানি। কিন্তু আমি কিছু বলতে পারব না। কর্তৃপক্ষ থেকে কথা বলার বিভিন্ন বাধ্যবাধকতা (নিষেধ) আছে। পরে তিনি মানব সম্পদ বিভাগে যোগাযোগ করতে বলেন । মানব সম্পদ বিভাগের নম্বর চাইলে তিনি তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। 
 

এই বিভাগের আরো খবর