বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৫ ১৪৩১

পেঁয়াজের ঝাঁজ আবার বেড়েছে, কমেনি ডিমের দাম

প্রকাশিত: ১৯ অক্টোবর ২০১৯  

রাসেল আদিত্য (যুগের চিন্তা ২৪) : বাজারে পেঁয়াজের দাম আবারো বেড়েছে। অন্যদিকে ডিমের দামও কমেনি। শহরে বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯৫-১১০ টাকায়।

 

দাম বৃদ্ধির পর কমে এর আগে বিক্রি হয়েছিল ৭০-৮০ টাকা। ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হওয়ার পরেও বাজারে মজুদকৃত ভারতের পেঁয়াজ দেখা যায় যা ৮০-৯০ টাকা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহে প্রতি কেজি বিক্রিয় হয়েছে ৭০-৮০ টাকায়।

 

পেঁয়াজের দাম কমে যাওয়ার পর আবার বৃদ্ধির ব্যাপারে একজন বিক্রেতা জানান, বাজারে চাহিদা বেশি, কিন্তু সে তুলনায় বেশি পেঁয়াজ বাজারে নেই। মায়ানমার ও তুরস্কসহ বেশ কয়েকটি দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করার পরও দাম না কমার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, নতুন আমদানি করা পেঁয়াজ এখনও বাজারে এসে পৌঁছায়নি তেমন।

 

এগুলো দেশের বড় বড় পাইকারী ব্যবসায়ীদের কাছে রয়েছে। তারা সুযোগ বুঝে এগুলো বাজারে বিক্রি করে থাকে। তিনি আরও জানান, মজুদকৃত পেঁয়াজ বিক্রি হওয়া শুরু করলেই এর দাম আবার স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

 

মাসদাইর বাজারে আনোয়ার হোসেন নামে একজন ক্রেতা জানান, তিনি ৫ কেজি পেঁয়াজ কিনবেন বলে দিগুবাবুর বাজারে এসছিলেন। কিন্তু দাম বেশি হওয়ার কারণে তিনি ২ কেজি পেঁয়াজ কিনেছেন। তার ধারণা কিছুদিন পরে হয়তো দাম আরও কমবে।

 

অন্যদিকে ডিমের বাজারে গিয়ে দেখা গেছে এর দাম পূর্বের মতই অপরিবর্তিত রয়েছে। প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩৮-৪০ টাকা করে। ডিমের দাম কমছে না কেন এবিষয়ে জানতে চাইলে একজন ডিম বিক্রেতা জানান, বাজারে ডিমের সরবরাহ ভালো। তবে বছরে এ সময় ডিমের পর্যাপ্ত চাহিদা থাকায় এর দাম কমছেনা। যখন একটু শীত শীত পড়া শুরু করে তখন থেকেই বাজারে ডিমের চাহিদা বৃদ্ধি পেতে থাকে যা কয়েক মাস পর্যন্ত অব্যাহত থাবে।

 

পেঁয়াজ এবং ডিমের বাজার গরম থাকলেও মাংসের বাজারে রয়েছে কিছুটা স্বস্তি। এর দাম পূর্বের মত স্থিতিশীল রয়েছে। শহরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে দেখা গেছে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৫০ টাকা এবং দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪৩০-৪৫০ টাকা। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫৫০-৬০০ টাকা এবং খাসির মাংস ৮০০-১০০০ টাকা।

 

শহরে ভোর সকালে শুরু হওয়া ৫নং মাছ ঘাটের বাজারসহ দিগুবাবুর বাজার, কালির বাজার, বাবুরাইল বউ বাজার এবং খানপুর বউ বাজারসহ বাজারগুলেতে প্রচুর মাছের সরবরাহ রয়েছে। তবে ইলিশ মাছ ধরা, বিক্রি ও পরিবহন নিষিদ্ধ থাকায় তা দেখা যায়নি। মাছের দামের ক্ষেত্রেও রয়েছে কিছুটা স্থিতিশীলতা। আকার ও বাজারভেদে প্রতি কেজি রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৬৫০ টাকায়, কাতলা ও মৃগেল ৩০০-৬০০টাকা, পাঙ্গাস ১১০-১৪০ টাকা, কই ১৪০-১৮০, তেলাপিয়া ১৩০-১৭০ টাকা, চিংড়ি মাছ বিক্রি হচ্ছে ৬০০-১২০০ টাকা কেজিতে।

 

বাজারে শীতের আগাম সবজি দেখা গেলেও এর দাম কিছুটা গরম। ফুলকপি ও বাাঁধা কপি বিক্রি হচ্ছে প্রতিপিস ৪০-৬০ টাকা, লাউ ৫০-৮০ টাকা, গাজর প্রতি কেজি ৮০-১০০ টাকা, সিম প্রতি কেজি ১০০-১২০ টাকা, টমেটো প্রতি কেজি ৮০-১০০ টাকা, শসা প্রতি কেজি ৪০-৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৬০-৮০ টাকা।

 

শীতের সবজির চড়া দাম হওয়া প্রসঙ্গে দিগুবাবুর বাজারে সবজি বিক্রেতা রফিক মিয়ার জানান, বাজারে এখনও শীতের সবজি পুরোপুরি আসা শুরু করেনি। যা আসছে এগুলো আগাম সবজি। আমদের বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয় তাই বিক্রিও করতে হয় বেশি দাম দিয়ে। আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে শীতের সবজি আসা শুরু করলে এর দাম কমে যাবে।

 

শহরের মিশনপাড়া থেকে বাজার করতে আসা ক্রেতা মাসুম জানান, মূলত বাজার সিন্ডিকেটের কারণে সবজিসহ অনেক জিনিসের দাম চড়া। পূর্বে ২০০-৩০০ টাকার কাঁচা বাজার করলে থলে ভরে যেত। এখন দাম বেশি হওয়ার কারণে ৩০০-৫০০ টাকার বাজার করলেও থলে ভরেনা।

 

তিনি আক্ষেপ করে জানান, এই বাজারে (দিগুবাবুর বাজর) বিক্রেতারা প্রতিদিন রাতের বেলা অনেক সবজি পঁচে যাওয়ার কারণে ফেলে দেয়। কিন্তু বাজার সিন্ডিকেট করে তার ক্রেতার জন্য দাম কমিয়ে বিক্রি করেনা।

 

সবজি-তো কাঁচা জিনিস পঁচে গেলে-তো ফেলে দিতে হয় এমন মন্তব্যে তিনি তখন তার ভিন্ন এক অভিজ্ঞতার কথা বলেন। তিনি বলেন, আমি একদিন রাতের বেলা সবজি কেনার সময় কোন এক বিক্রেতাকে বলছিলাম যে সবজির কালার তো নষ্ট হয়ে গেছে। আর একদির থাকলে এগুলো পঁচে যাবে।

 

আমি যে কম দাম বললাম এ দামে বিক্রি করলে তো আপনার লোকসান হচ্ছেনা। উত্তরে ওই বিক্রেতা কিছুটা রাগ হয়ে বলে, ফেলে দেব তবু এর চেয়ে কম দামে বিক্রি করবোনা। অর্থাৎ বাজার সিন্ডিকেট করে লাভ হওয়া সত্বেও নির্ধারিত দামের চেয়ে তারা কম দামে বিক্রি করবেনা।

 

এই প্রসঙ্গে একজন পাইকারী বিক্রেতার কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। পরে কথা প্রসঙ্গে তিনি জানান, বুঝেনই-তো বাজারে ব্যবসা করতে হলে সব কিছু ঠিক রেখে তারপর করতে হয়।

 

তবে শীতের আগাম সবজির দাম কিছুটা বেশি হলেও কম রয়েছে পেঁপে, কাঁচাকলা, কুমরা, লাল শাকসহ কিছু শাক-সবজির দাম। বাজারে প্রতি কেজি পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকা, কাঁচাকলা প্রতি হালি ১৫-২০ টাকা, করলা ও কাকরোল প্রতি কেজি ৪০-৬০ টাকা, পটল প্রতি কেজি ৩০-৪০ টাকা, বরবটি প্রতি কেজি ৮০-১০০ টাকা, কুমড়া প্রতি পিস আকার ভেদে ৪০-৮০ টাকা, লাল শাক ও পালং শাক প্রতি কেজি ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি করছেন বিক্রিতারা।

এই বিভাগের আরো খবর