শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

পুলিশের মারমুখি আচরণে সাংবাদিক ইউনিয়নের ক্ষোভ ও নিন্দা

প্রকাশিত: ১৭ জুন ২০১৯  

প্রেস বিজ্ঞপ্তি (যুগের চিন্তা ২৪) : নারায়ণগঞ্জ জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের বারান্দায় প্রবেশ করে সাংবাদিকদের সাথে মারমুখি আচরণের প্রতি ক্ষোভ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা সাংবাদিক ইউনিয়ন কর্তৃৃপক্ষ। 

সোমবার রাতে টহল পুলিশের একটি দল সাংবাদিক ইউনিয়নের বারান্দায় প্রবেশ করে কার্য্যকরী পরিষদের সদস্য এবং সময় টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি শওকত আলী সৈকত ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের ক্যামেরাপার্সন মো: মীকাঈলের সাথে অশোভন আচরণ করায় পুলিশের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্যবৃন্দ। 

একই সাথে দোষী পুলিশ সদস্যদের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেয়া হলে ভবিষ্যতে জেলা পুলিশের সব ধরণের সংবাদ বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। 

নারায়ণগঞ্জ জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুস সালাম সোমবার রাত দশটায় এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, সোমবার রাত পৌনে আটটার দিকে শহরের ১৫৭ নং বঙ্গবন্ধু সড়কে প্রিপারেটরী স্কুলের পুরাতন ভবনের নীচতলায় অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ জেলা সাংবাদিক ইউনিয়ন কার্য্যালয়ের গেটের সামনে একটি টুলে বসেছিলেন ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের ক্যামেরাপার্সন মো: মীকাঈল। 

এসময় সদর থানার কনস্টেবল মারুফ সহ ৫/৬ জন পুলিশের একটি দল এসে মীকাঈলকে বাইরে বসে থাকার কারনে উগ্র ভাষায় গালাগাল করতে থাকে। মীকাঈল তার পরিচয় দেবার পরেও কনস্টেবল মারুফ সহ কয়েকজন পুলিশ তার শার্টের কলার ধরে মারধর এবং টানা হ্যাঁচড়া করে পুলিশের গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। 

এসময় সাংবাদিক ইউনিয়ন কার্য্যালয়ের ভেতরে অবস্থানের সময় টেলিভিশনের সাংবাদিক শওকত আলী সৈকত হৈ চৈ শুনে বাইরে বের হয়ে আসেন। এক পর্যায়ে মীকাঈল সাংবাদিক ইউনিয়নের ভেতরে ঢুকে পড়লেও কনস্টেবল মারুফ ও তার সহকর্মীরা সাংবাদিক ইউনিয়ন কার্য্যালয়ের ভেতরে ঢুকে মীকাঈলকে টেনে বের করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

এসময় শওকত আলী সৈকত বাধা দিলে কনস্টেবল মারুফ তার সাথেও অকথ্য ভাষায় বাদানুবাদ করেন এবং মীকাঈলকে দেখে নেয়ার হুমকি দেন। সাংবাদিক ইউনিয়ন থেকে একজন সদস্যের ক্যামেরাপার্সনকে বিনা কারনে টেনে নিয়ে যাওয়ার কারন জানতে চাইলে সাংবাদিক শওকত আলী সৈকতের সাথে কনস্টেবল মারুফ উগ্র আচরণ করেন। এসময় ইউনিয়নের সদস্য যমুনা টেলিভিশনের সাংবাদিক আমির হুসাইন স্মিথ বাইরে এসে ওই পুলিশ সদস্যদের শান্ত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। 

সোমবার রাতে এ ঘটনার বিষয়টি নারায়ণগঞ্জ জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি এটিএন বাংলা ও এটিএন নিউজের সিনিয়র সাংবাদিক আবদুস সালামকে জানানোর সাথে সাথে তিনি কার্য্যালয়ে আসেন এবং কার্যকরী পরিষদ সহ অন্যান্য সদস্যদের সাথে মতবিনিময় করে পুলিশের এ আচরণের নিন্দা ও দোষী পুলিশ সদস্যদের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানান। 

নারায়ণগঞ্জ জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুস সালাম ও সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন পন্টি সহ সকল সদস্য এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। পুলিশের এ ধরনের অশোভন আচরণে ইউনিয়নের সাংবাদিক সদস্যদের মধ্যে চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে জেলার সকল পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের আরো সংযত হওয়ার আহবান জানিয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা সাংবাদিক ইউনিয়ন। পাশাপাশি জেলার সকল পেশাদার সাংবাদিকদের সাথে সহনশীল আচরণ করতে পুলিশের প্রতি আহবান জানান তারা।

এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শরীফ উদ্দিন সবুজ, প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ন-সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রফিক, বর্তমান সহ-সভাপতি আহসান সাদিক শাওন, সাবেক যুগ্ন-সম্পাদক মজিবুল হক পলাশ, ইউনিয়নের সদস্য আমির হুসাইন স্মিথ, অন্যান্য সদস্যবৃন্দ ও বিভিন্ন চ্যানেলের ক্যামেরা পার্সনরা।  

এ খবর জানার পর রাত সাড়ে নয়টার দিকে সদর মডেল থানার ওসি কামরুল ইসলাম ও জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক (ডিআইও টু) সাজ্জাদ রোমন সাংবাদিক ইউনিয়নে এসে পুলিশের এ ধরণের আচরণের জন্য পুলিশ সুপারের পক্ষ থেকে দু:খপ্রকাশ করেন। 

এ ঘটনার জন্য দোষী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আশ^াস দেন। পরবর্তীতে সাজ্জাদ রোমন জানান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদের নির্দেশে এ ঘটনায় সম্পৃক্ত পুলিশ কনস্টেবল মারুফ সহ তিনজনকে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। 

এ ঘটনার তদন্তের জন্য পুলিশ সুপারের নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আবদুল্লাহ আল মামুন, সদর মডেল থানার ওসি কামরুল ইসলাম এবং ডিআইও টু সাজ্জাদ রোমনের সমন্বয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জেলা সাংবাদিক ইউনয়ন নের্তৃবৃন্দকে জানানো হয়।
 

এই বিভাগের আরো খবর