শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

পিতার অপরাধে সন্তান হত্যা, অপহরণ না’গঞ্জে নতুন নয় : রফিউর রাব্বি

প্রকাশিত: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : নারায়ণগঞ্জের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি বলেছেন, এই পরিস্থিতির জন্যই কি একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিলো?  শিশুটি বর্তমানে কি অবস্থায় আছে যদি জীবিত না থাকে তাহলে সে কেন হত্যার শিকার হল এ বিষয়টিও তো জানার অধিকার তার পরিবারের আছে। জাতিকে জানাতে হবে। এমন নৃশংস ঘটনা বার বার ঘটতে পারে না।


এখানে তো শিশুটির কোনো অপরাধ নেই। কিন্তু পিতার অপরাধে হত্যা পিতার অপরাধে শিশু হত্যা,অপহরণ এ ধরনের ঘটনা নারায়ণগঞ্জে যদিও নতুন নয়। ইতোপূর্বে নারায়ণগঞ্জের চিহ্নিত ঘাতক,খুনি গডফাদার পরিবার এ ধরণের বহু ঘটনার নজির স্থাপন করেছে। আর কারা হত্যা,অপরহণের ঘটনা চাপা দিতে চায় কারা পুলিশ প্রশাসনকে দখলে নিতে চায় নারায়ণগঞ্জবাসী জানে।


শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টায়  সাবেক জেলা কমান্ডার নারায়ণগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মরহুম কমান্ডার  মহিউদ্দিন আহমেদ দুলালের নাতি ও সাবেক ছাত্রনেতা সৈয়দ ওমর খালেদ এপন এর সন্তান সৈয়দ সাদমান সাকিকে উদ্ধারের দাবিতে প্রতীকী অনশন কর্মসূচিতে তিনি এ সকল কথা বলেন।

 
তিনি বলেন, ১৮ মাস বয়সী একটি শিশু হারিয়ে গেল। এই শিশুটিকে উদ্ধারের জন্য অনশন,মানববন্ধন,সমাবেশ করতে হচ্ছে। সরকারের প্রশাসন,পুলিশের কাছে বারে বারে ধরনা দিতে হচ্ছে। এই সাদমান সাকির দাদা ছিলেন মুক্তিযোদ্ধাকালীন কমান্ডার এবং তার অধীনে নারায়ণগঞ্জে অনেকেই যুদ্ধ করেছিলেন।


অথচ ২৬ মাস যাবৎ শিশুটি নিখোঁজ এমন একটি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের পাশে মুক্তিযোদ্ধারাই থাকবে এটাই স্বাভাবিক ছিলো। কিন্তু তা হয়নি। যারা মুক্তিযোদ্ধারা নারায়ণগঞ্জের চিহ্নিত রাজাকারের পরিবারের পাশে দাড়ান এবং সে রাজাকার পরিবারের সদস্যদের আবার তারা নীরব মুক্তিযোদ্ধা বলতে চান। এটি অত্যন্ত ঘৃণ্য ও ধিক্কারের বিষয়।


তিনি আরো বলেন, সরকার বিভিন্ন সময় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলেন। কিন্তু একটি মুক্তিযোদ্ধা পরিবার নির্যাতিত নিপীড়িত তাদের পরিবাররে ছোট্ট শিশুটি সে ২৬ মাস যাবৎ নিখোঁজ রইলো। অথচ তাকে উদ্ধারের কোনো তৎপরতা নাই। এই মামলাটি পুলিশ, পিবিআই,সিআইডি ইত্যাদি বিভিন্ন সংস্থা তদন্ত করছে।


যারা তদন্ত করে রহস্য উদঘাটন করেছে তারা বিভিন্ন সময় বলেছে কারা এ ঘটনার সাথে যুক্ত, কে বা কারা অপহরণ করেছে সবই চিহ্নিত হয়েছে। সব চিহ্নিত হলে কেন শিশুটি এখনও উদ্ধার হল না। এখানে বাঁধাটা কোথায়।


তাহলে ব্যাপারটা কি তাহলে কি সাদমান সাকির পরিবারই তাকে নিখোঁজ করে রেখেছে? যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে এ রহস্য উদঘাটনের দায়িত্বও এই প্রশাসনের। কিন্তু ২ বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেছে তবুও কেন এ রহস্য উদঘাটন হচ্ছে না।


আমি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলতে চাই,আপনি স্বজন হারানো বেদনা উপলদ্ধি করেন কিন্তু  অন্যদের স্বজন হারানো বেদনা বোঝার চেষ্টা করেন। শুধু নিজের বেদনা উপলদ্ধি করলেই হয় না। আপনি রাষ্ট্র ক্ষমতার শীর্ষে রয়েছেন এতটা স্বার্থপর আমরা আপনাকে দেখতে চাই না।


এই শিশুটিকে উদ্ধারের ব্যবস্থা করুন। জীবিত বা মৃত যেকোনো অবস্থায়ই শিশুটির সন্ধান তার পরিবারকে দিতে আপনার প্রশাসন বাহিনীকে নির্দেশ দিন।


এ সময় সাদমান সাকির বাবা সৈয়দ ওমর খালেদ এপন জানান, ২৬ মাস হয়ে গেল কিন্তু আমার সন্তানকে প্রশাসন খুঁজে দিতে পারলো না। ২৬ মাস যাবৎ প্রশাসনের দরজায় দরজায় কড়া নেড়েও সন্তানের সন্ধান পাইনি।


অথচ তারা সব জানে কারা  কেন আমার সন্তানকে অপহরণ করেছে। এ ঘটনার জড়িতদেরও চিহ্নিত করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আমাকে বলেছে যে আমার সন্তান বেঁচে আছে।


এ সকল কথার রেকর্ড আমার কাছে রয়েছে। কিন্তু তারা নারায়গঞ্জের বিশিষ্ট এক ব্যক্তির তদবিরের কারণে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। কারা এ অদৃশ্য শক্তি কারা এর পেছনে আছে সবই আমরা জানি। কিন্তু দোষ যদি করে থাকি তাহলে আমি করেছি। এখানে আমার শিশু সন্তানটির তো কোনো দোষ নেই।

রাজনীতি করলে আমি করেছি,কাউন্সিলর নির্বাচন করলে আমি করেছি ,চড়-থাপ্পর দিলে আমি দিয়েছি আমার ছেলে তো কিছু করে নি। আমাকে শাস্তি দিন কিন্তু আমার ছেলের তো কোনো দোষ নেই।


তিনি আরো জানান, খুন,গুম হত্যা এ ধরণের ঘটনা নারায়ণগঞ্জে নতুন নয়। আজকে যদি  ত্বকী হত্যার বিচার হত তাহলে আজকে সাদমান সাকি অপহরণ হত না।


প্রধানমন্ত্রীর কাছে সন্তানকে উদ্ধারের দাবি জানিয়ে কান্না বিজড়িত কন্ঠে সাদমান সাকির মা হামিদা খালেদ লিপি বলেন, ‘কোন ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না কি বলবো। আজ ২৬ মাস যাবৎ তাকে খুঁজে পাচ্ছি না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ, আমার সন্তানকে উদ্ধার করার ব্যবস্থা করে দেন।’
অনশন কর্মসূচীতে একাত্মতা প্রকাশ করে আরো উপস্থিত ছিলেন দৈনিক ইয়াদের সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন, ইলেকট্রেশিয়ান কল্যাণ কমিটির সভাপতি মো. নাজির খানসহ নিখোঁজ সাদমান সাকির পরিবারের সদস্য,আত্মীয়-স্বজনবৃন্দ প্রমুখ।

 

এই বিভাগের আরো খবর