শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

পিতা-পুত্রের লাশ দাফন নিয়ে যা বললেন কাউন্সিলর ফারুক

সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৪ মে ২০২০  

সিদ্ধিরগঞ্জে করোনা উপসর্গে চিকিৎসা না পেয়ে ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে পিতারও মৃত্যু হয়েছে, এই পরিস্থিতিতে নাসিক ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলরের নির্দেশে স্থানীয় কবরস্থান কর্তৃপক্ষ লাশ দাফন করতে না দেওয়ার বিষয়টি জানতেন না বলে দাবি করেছেন কাউন্সিলর ওমর ফারুক।

 

বৃহস্পতিবার (১৪ মে) গণমাধ্যমে এ কথা বলেন তিনি। এসময় তিনি দাবি করেন, তার প্রতিপক্ষের কেউ মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য সরবরাহ করেছেন একমাত্র তাকে হেয় করার জন্য।

 

ওমর ফারুক বলেন, লাশ বাধা দেওয়ার বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। বিষয়টিতে আমাকে জড়িয়ে অপপ্রচার করা হয়েছে। লাশ নিয়ে রাজনীতি করা আমার পক্ষে সম্ভব না। সিটি করপোরেশনের নির্দেশনায় যেকোন ব্যক্তির দাফনে কাউন্সিলরদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এখন দেশের যে পরিস্থিতি, এতে লাশ নিয়ে রাজনীতি করার সময় না। লাশ নিয়ে নোংরামি আমার দ্বারা সম্ভবনা। এমন মিথ্যা অপপ্রচারে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

 

এর আগে ১২ মে অভিযোগ উঠে, নাসিক ৫নং ওয়ার্ডস্থ সরদারপাড়া এলাকার ইয়ার হোসেন (৬০) ও তার ছেলে রিমন সাউদ (২৭) এর লাশ করোনা সন্দেহে মিজমিজি পাইনাদী কবরস্থান মসজিদ কমিটি স্থানীয় কাউন্সিলরের নির্দেশে দাফন করতে বাধা প্রদান করে। পরে সাইলো এলাকার একটি কবরস্থানে মৃতদের লাশ দাফন করা হয়।

 

এ বিষয়ে মিজমিজি পাইনাদী কবরস্থান মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মফিজুল ইসলাম মজু বলেন, লাশ দাফনের বিষয়ে ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের সচিব আমাকে ফোন দিয়ে কবরস্থানে করোনা রোগীর লাশ দাফন করা হয় কিনা জানতে চাইলে আইনগত অনুমতি থাকলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই বলে তাকে আমি জানিয়েছি। এখানে কেউ বাধা দেয়নি এবং এমন কোনো পরিবেশ তৈরি হয়নি।


অন্যদিকে ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সচিব নাজমুল বলেন, পাইনাদী মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদককে পিতা-পুত্রের মৃত্যুর খবর জানাই এবং সেখানে দুজনকে দাফনের কথা জানালে তিনি পিতার লাশ দাফনে সমস্যা নেই কিন্তু করোনা উপসর্গ থাকায় ছেলের লাশ দাফন করা যাবে না বলে জানিয়েছিলেন। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছিলেন, আপনাদের লিখে দিতে হবে যে করোনা হয়নি, তাহলে এখানে দাফন সম্ভব। এখন করোনা না হলে দাফন করতে দেবে নয়তো দেবেনা, তাহলে তো এটাই বাধা।

 

তবে এ বিষয়ে ওই ওয়ার্ডের (১নং) কাউন্সিলরকে ফোন দেওয়া হয়নি জানিয়ে নাজমুল আরও জানান, ইয়ার হোসেনের লাশ মিজমিজি পাইনাদী কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে এবং ছেলে রিমনের লাশ ৫নং ওয়ার্ডের কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

 

প্রসঙ্গত, গত কয়েকদিন আগে সিদ্ধিরগঞ্জের সরদার পাড়া এলাকার হাজী ইয়ার হোসেন, তার ছেলে রিমন হোসেনসহ পরিবারের তিন জনের মধ্যে করোনা উপসর্গ তথা জ্বর সর্দি দেখা দেয়। পরে তারা তিনজন রূপগঞ্জে পিসিআর ল্যাবে ৯ মে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়ে আসে।

১০ মে দিবাগত রাতে রিমন হোসেনের শ্বাসকষ্ট শুরু হলে তাকে প্রথমে প্রো-অ্যাক্টিভ মেডিক্যাল পরে ঢাকার আজগর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন পরিবার। এরপর কোনো এক আত্মীয়র সুবাদে শেষ রাতের দিকে ঢামেকে নিয়ে ভর্তি করানো হয় রিমনকে। তবে কোনো রকম উপসর্গ না থাকাতে ইয়ার হোসন ভর্তি হতে চাইলেও তাকে ভর্তি নেয়া হয়নি। পরে তিনি বাড়ি ফিরে আসার পরপরই খবর আসে রিমন মারা গেছেন। একমাত্র ছেলের মৃত্যুর শোক সইতে না পেরে এক ঘণ্টার মধ্যে তিনিও হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান।

 

এদিকে একই দিনের ঘণ্টা ব্যবধানে পিতা-পুত্রের মৃত্যুর পর মঙ্গলবার (১২ মে) সকালের দিকে তাদের করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসে। এতে রিমন নেগেটিভ থাকলেও তার পিতা ইয়ার হোসেনকে পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত করা হয়। একই সঙ্গে পরীক্ষা করতে দেয়া রিমনের বোনের রিপোর্টও নেগেটিভ এসেছে।

এই বিভাগের আরো খবর