শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

পাঁচতারা জুনিয়র হাইস্কুলের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ভবিষ্যত অনিশ্চিত!

প্রকাশিত: ২৩ মে ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : সিদ্ধিরগঞ্জের পাঁচতারা জুনিয়র হাইস্কুলের অধ্যয়ণরত অর্ধ্শত শিক্ষার্থীর শিক্ষা ভবিষ্যত অনিশ্চয়তার মুখে পতিত হয়েছে। সিদ্ধিরগঞ্জ পাঁচতারা সংসদের উদ্যোগে সাইলো গেইটে শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে স্কুলটি ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্টিত হলেও ২৩ বছরে এর কোনো অনুমোদন নেয়া হয়নি। 


স্কুলটির ভবনের নীচতলাতে পাঁচতারা সংসদের কার্যালয়। এ সংসদের কমিটি কর্তৃক স্কুলটি পরিচালিত হয়। পাঁচতারা সংসদটির শুরু থেকেই স্থানীয় বিএনপি নেতা সম্প্রতি আওয়ামীলীগে যোগদানকারী আলী আকবর খানসহ গোটা কয়েক ব্যক্তি অদ্যবদি এর নিয়ন্ত্রন করে আসছে। বর্তমানে নানা অনিয়মের কারনে স্কুলে শিক্ষার্থীর সাথে দেখা দিয়েছে শিক্ষক সংকটও। 


স্থানীয়দের অভিযোগ, পাঁচতারা সংসদের কর্তারা এলাকায় তাদের আধিপত্য বজায় রাখতে এ স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। স্কুল এর নামে বানিজ্য শুরু করেন। স্কুলের অনুমোদন নেয়া হলে একটি নির্দিষ্ট নীতি মালায় স্কুল পরিচালিত হতো। এলাকাবাসী ও অভিবাবকদের নিয়ে পরিচালনা কমিটি গঠন কার হতো। এতে সবকিছুতে স্বচ্ছতা থাকতো।


কমিটির সদস্যদের কারো সন্তান এ স্কুলে ভর্তি করায় না। বর্তমানে স্কুলটিকে বানিজ্য কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করছে তারা। বিভিন্ন অনিয়ম, দূনীর্তি, স্বজনপ্রীতির কারনে স্কুলটি শিক্ষার্থী শুন্য হয়ে পড়ছে। 


আর যারা রয়েছে তাদের শিক্ষা ভবিষ্যত অনিশ্চয়তায় রয়েছে। সমাজের সবচেয়ে নিরিহ, স্বল্প আয় ও দিন মুজুরের ৫০/৬০জন সন্তানরা শিক্ষা নিচ্ছে। আর এদের জন্য রয়েছে মাত্র ৪/৫ জন শিক্ষক ।


স্কুলের নামে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে মোটা অংকের অনুদান নিয়ে দ্বিতলা স্কুলভবনটি তৈরী করে। আর আগের স্কুল ঘরটিতে স্কুলের সাইনবোর্ড দিয়ে রাখলেও সেখানে দোকানপাট ভাড়া দিয়ে রেখেছে কর্তারা। স্কুলে রয়েছে শিক্ষক সংকট। 


বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গেলে দেখা যায় স্কুলটি বন্ধ রয়েছে। এর নীচ তলার পুরোটাই পাঁচতারা সংসদের কার্যালয়। স্কুলের পুরোনো ঘরটিতে একটি চা দোকান অপর অংশে একটি খাবার হোটেলের ডেকোরেশনের কাজ চলছে। 


স্থানীয়রা বলেন, এ জায়গাটির অনেকাংশ নদী দখল করে তৈরী করা হয়েছে। আবার এখানেই নদীর ঘাট দেখিয়ে স্কুলের নামে অবৈধ টোল আদায় হচ্ছে। 
স্থানীয় বিএনপি নেতা সম্প্রতি আওয়ামীলীগে যোগদানকারী আলী আকবর খান এই স্কুলের নাম ব্যাবহার করে পাঁচতারা সংসদের কার্যালয় চালিয়ে যাচ্ছে। মুলত স্কুলটির সুনামের জন্য তারা কিছুই করছেনা। ফলে বর্তমানে স্কুলে শিক্ষার্থীর সাথে দেখা দিয়েছে শিক্ষক সংকটও। 


তারা আরো জানান, আলী আকবর খানসহ কয়েক কর্তা পাঁচতারা সংসদটি নিয়ে নানা সুবিধা ও এর নামকে ব্যবহার করে নিজেদের অবস্থান শক্ত করে রেখেছেন। 


স্কুল পরিচালনা করতে ব্যর্থ ও স্কুলটিতে শিক্ষার্থী না থাকা, শিক্ষার মানোন্নয়নে মানসম্মত শিক্ষক না থাকা, ফান্ডসৃষ্টি করে স্কুলের জন্য জায়গা  বরাদ্দ না করায় স্কুলটির কোনো স্বীকৃতি মিলছেনা।  


অথচ তারা নিজেদের আখের গোছাতে স্কুল সংলগ্ন নদীর ঘাটে মালামাল লোড-আনলোড করা জন্য স্কুলের কর্মকান্ড স্থবির হয়ে পড়ছে বলে নানা মন্তব্য করছেন। 


যেখানে ২৩ বছরে বিদ্যালয়ের নিজস্ব জায়গা বরাদ্দ করেননি, বিদ্যালয়ের অনুমোদন নেননি সেখানে স্কুলের দু’পাশ দিয়ে দু’টি রাস্তা দিয়ে সারাক্ষণ ট্রাক চলাচল, ঘাট লেবারদের হইহুল্লোর, ধুলা-বালি, পরিবেশ ও শব্দ দূষণের কারণে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে বলছেন যা নিজেদের দায়মুক্ত করার জন্য বলছেন।

 

মুলত পাঁচতারা সংসদের মাধ্যমে নামে মাত্র একটি স্কুল চলুক এটাই তারা চাচ্ছেন। স্কুলটি ভিন্ন কোন রহস্যজনক কারনে সাইনবোর্ড সর্বস্ব করে রাখছেন। 
এ বিষয়ে জানতে পাঁচতারা সংসদের সভাপতি আলী আকবর খানের সাথে যোগাযোগের করার চেষ্টা করে তা না পেয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিজয় কৃষ্ণ চক্রবর্তীর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, অসুস্থ্যকারনে তিনি প্রায় দুই বছর ধরে স্কুলে যেতে পারছেন না। তিনি স্কুলের বর্তমান কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত না থাকলেও প্রধান শিক্ষক নেয়া হয়নি। স্কুলটিতে এক সময় অনেক শিক্ষার্থী থাকলেও এখন তেমন কোনো শিক্ষার্থী নেই।


শিক্ষার মান নিয়ে স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্যরাই সন্তষ্ট নয় বিধায় তাদের ছেলে মেয়েদের এখানে ভর্তি করায়না। স্কুলে অস্বচ্ছল পরিবারের ছেলে মেয়েরা এখানে পড়াশুনা করছে। স্কুলের নামে দোকানপাট থেকে ভাড়া আদায়সহ বিভিন্নভাবে টাকা নিলেও শিক্ষকদের বেতন দেয়া ছাড়া স্কুলের কোনো উন্নয়ণ নেই।  কমিটির লোকজন তাদের ইচ্ছেমত লোকজন স্কুল পরিচালনা করে। তারা বলেন এ টাকা দিয়ে হয়না নিজেরা মিলে আরো টাকা দেন।  


স্কুলের অনুমোদন নেয়া হয়নি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্কুলের অনুমোদন নিতে হলে বিভিন্ন শর্ত রয়েছে। এসব শর্ত পূরণ হচ্ছে না বিধায় অনুমোদন নেয়া যাচ্ছেনা। 


শর্তপূরনের বিষয়গুলো সমাধান করে কেন অনুমোদন নেয়া হচ্ছেনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বুঝেনইতো কমিটির লোকজন নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে এর অনুমোদন নিচ্ছেননা। 


স্কুলের নীচে তাসের আড্ডা বসে এ বিষয়ে তিনি বলেন, আসলে স্কুল চলাকালিন সময়ে এসব হচ্ছেনা। তাই কোনো সমস্যা হচ্ছেনা বলে মনে হয়। 
 

এই বিভাগের আরো খবর