মঙ্গলবার   ১৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ৫ ১৪৩০

পরীক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে যা বললেন প্রভাষক রফিকুল ইসলাম

প্রকাশিত: ১৪ নভেম্বর ২০১৮  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : মাস্টার্স শেষ বর্ষের পরীক্ষার একটি কেন্দ্র নারায়ণগঞ্জ সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে (গর্ভমেন্ট গার্লস হাইস্কুল হিসেবে পরিচিত) মোবাইল ফোন নিয়ে প্রবেশ করায় ৪০ জন পরীক্ষার্থীর খাতা ও প্রশ্নপত্র আটকে রাখার প্রতিবাদে এক শিক্ষককে অপসারণ ও পুন:পরীক্ষা গ্রহণের দাবীতে বিক্ষোভ করেছে দুইটি সরকারি কলেজের পরীক্ষার্থীরা।

বুধবার (১৪ নভেম্বর) দুপুরে সরকারি মহিলা কলেজ ও সরকারি তোলারাম কলেজের অভ্যন্তরে পরীক্ষার্থীরা নানা ধরানের দাবী সম্বলিত প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে প্রায় দুইঘন্টা ব্যাপী বিক্ষোভ করেন।

পরীক্ষার্থীদের অভিযোগ, মঙ্গলবার (১৩ নভেম্বর) শহরের মাসদাইর এলাকায় নারায়ণগঞ্জ সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে দুপুর একটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত মাষ্টার্সের শেষ বর্ষের প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

পরীক্ষা শুরুর পর থেকে নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বিভিন্ন হলে প্রবেশ করে মোবাইল ফোন সাথে রাখার অভিযোগে চল্লিশজন পরীক্ষার্থীর খাতা ও প্রশ্নপত্র প্রায় চার ঘন্টা আটকে রাখেন। যার কারনে এই চল্লিশ জন শিক্ষার্থী তাদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা থেকে বঞ্চিত হন।

এঘটনায় সরকারি সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ বেদৌরা বিনতে হাবীব শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী শিক্ষক রফিকুল ইসলামের সাময়িক প্রত্যাহার করা এবং জাতীয় শিক্ষাবোর্ডের কাছে পুনরায় পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা করার জন্য সুপারিশের কথা জানান।  

তবে অভিযুক্ত শিক্ষক রফিকুল ইসলামের কথা অনুযায়ী ভিন্ন কিছু কথা জানা গেছে। মঙ্গলবার (১৩ নভেম্বর) শহরের মাসদাইর এলাকায় নারায়ণগঞ্জ সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে দুপুর একটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত মাষ্টার্সের শেষ বর্ষের পরীক্ষার ১০০০ শিক্ষার্থীর ভেন্যুতে ভেন্যু ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন সরকারি মহিলা কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক রফিকুল ইসলাম।

সে ভেন্যুতে সেদিন মাস্টার্স দ্বিতীয় বর্ষের একাউন্টিং এবং ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরীক্ষা ছিলো। যুগের চিন্তা ২৪’র সাথে উদ্ভুত পরিস্থিতির নানা বিষয়ে নিজের মতামত তুলে ধরে কথা বলেছেন তিনি। 

সরকারি মহিলা কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, পরীক্ষার হলে মোবাইল ফোন নেয়া পুরোপুরি নিষেধ। মোবাইল ফোন নিয়ে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করলে পরীক্ষা থেকে বহিষ্কার করা হবে এমন নির্দেশনা রয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের।

এ বিষয়টি সকল পরিক্ষার্থীর প্রবেশপত্রেই উল্লেখ করা আছে। তারপরেও পরীক্ষা শুরুর আগে  পরীক্ষার্থীরা প্রবেশ করার সময় গেটে মোবাইল ফোন আছে কিনা তল্লাশী করি, থাকলে রেখে দেই। এরপরেও যারা মোবাইল ফোন লুকিয়ে পরীক্ষার হলে নিয়ে যায় কক্ষ পর্যবেক্ষক যারা আছেন তারা বলেন কারো কাছে মোবাইল ফোন থাকলে সেটি রেখে যাও।

মাস্টার্স ১৪টি বিষয়ের পরীক্ষার প্রথম দিন আমরা সবাইকে ওয়ার্নিং (সতর্ক) করেছি, যদি তোমরা কেউ মোবাইল নিয়ে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করো, তাহলে নিয়ম অনুযায়ী, ওইদিন পরীক্ষা থেকে তোমাদের বহিস্কার করা হবে। প্রথম দিন এভাবে মোবাইল পাওয়ার পরও কোন ব্যবস্থা নেইনি, দ্বিতীয় দিনেও সতর্ক করার পরও তারা মোবাইল ফোন নিয়ে প্রবেশ করেছে।

পরীক্ষার চতুর্থদিন মোবাইল ফোন আছে কিনা গেটে চেক করার পর পরীক্ষার হলে পর্যবেক্ষকরা শিক্ষার্থীদের বলেন, মোবাইল থাকলে রেখে যাও। কিছু শিক্ষার্থী মোবাইল ফোন বের করে টেবিলে রাখে।প রীক্ষা শুরুর পর যাদের শরীর তল্লাশি করে আমরা ২৮টি অ্যান্ড্রোয়েড মোবাইল ফোন পেয়েছি, তাদেরকে নিয়ম অনুযায়ী ওইদিনের পরীক্ষার জন্য বাতিল করা হয়।

বাতিল করার মূল কারণ ছিলো যাদের কাছে মোবাইল ফোনগুলো পেয়েছি এদের প্রত্যেকের মোবাইল ফোনে ‘নকল’। মোবাইল ফোনে তারা বই, সিট এগুলো ছবি তুলে এনেছিলো নকল করার জন্য। বারবার শিক্ষার্থীদের সতর্ক করে দেয়ার পরও যদি এভাবেই তারা নকল করে পরীক্ষা দেয় তাহলে শিক্ষক হিসেবে আমার দায়িত্বটি কি?

শিক্ষার্থীরা আমাদের ওয়ানিং মানছেনা যখন আমরা প্রতিটি পরীক্ষার কক্ষে এভাবে নকল করছে যারা এমন ২৮ পরীক্ষার্থীর খাতা নেয়া হয়। কোন রুম থেকে নকল করছে এমন দুজন শিক্ষার্থী আবার কোন রুমে ৫ জন শিক্ষার্থীর খাতা নেয়া হয়েছে।ওইদিনের পরীক্ষায় ২৮ শিক্ষার্থীর খাতা এবং ২৮টি   অ্যান্ড্রোয়েড মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। তাদেরজন্য ওই দিনের পরীক্ষা বাতিল করে দেয়া হয়।

শিক্ষার্থীদের খাতা নিয়ে যাওয়ার পরে আমি আবার ফেরত দিলে তো আমি নিজেই আইনী জটিলতায় পড়ে যেতাম। পরীক্ষার খাতা আটকে রাখার কোন নিয়ম নেই। কোন শিক্ষার্থী যদি অসুদাপায় অবলম্বন করে তাহলে হয় পরীক্ষার দিবে, নয় এক্সফেল্ট (বহিস্কার) করবে, খাতা আটকে রাখার কোন নিয়ম নেই। যার কারণে শিক্ষার্থীদের প্রতি সহানুভূতি থাকা সত্ত্বেও আইনী বাধ্যবাধকতায় সহানুভূতিশীল হতে পারিনি। 


রফিকুল ইসলাম বলেন, ওইদিনের পরীক্ষা শেষে পরীক্ষার্থী সবাইকে নিজ হাতে তাদের মোবাইল ফোনগুলো দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছিলাম। প্রত্যেকের মোবাইল ফোন নিয়ে যখন চলে যাচ্ছিল। মোবাইল নেয়া হয়নি এমন কয়েকজন পরীক্ষার্থী সকল পরীক্ষার্থীদের ডেকে দেখিয়ে দিবে বলে চিৎকার করে উঠে। তখন বাকি পরীক্ষার্থীরাও আবার ফিরে এসে চিৎকার চেঁচামেচি করে আবার খাতা ফেরত চায়।

পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর আবারো পরীক্ষার খাতা দিতে হবে এমন দাবি করে তারা। আমি একটি সরকারি চাকুরী করে পরীক্ষার্থীদের এমন অন্যায় আবদার রাখা আমার পক্ষে কি করে সম্ভব? আমি তাদের বলি, তোমরা যারা অ্যান্ড্রোয়েড মোবাইল ফোন নিয়ে এসেছো তাদের আজকের পরীক্ষাটি বাতিল করা হয়েছে। তোমরা এমন উদ্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করলে বাকি পরীক্ষাগুলোও তোমরা দিতে পারবেনা? সবগুলো পরীক্ষা আগামী বছর দিতে হবে। আর যদি চলে যাও তাহলে শুধুমাত্র আজকের পরীক্ষাটিই বাতিল।

 
রফিকুল ইসলাম বলেন, কিন্তু তখন তারা এটি শুনেনি। আমাদের পরীক্ষার খাতা নিয়ে বের হতে দিবেনা। প্রায় ২ঘন্টার মতো আটকে রাখে। তাদের দাবি পরীক্ষার খাতা আবার তাদেরকে দিতে হবে। তখন আমরা থানায় এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যোগাযোগ করি।এরপর সেখানে পুলিশের তিনটি গাড়ি এসে পুলিশ পেট্রোলে আমরা পরীক্ষার খাতাপত্র নিয়ে চলে যাই। এর মাঝেও পরীক্ষার্থীরা নানা উদ্ধুত্বপূর্ণ আচরণ প্রদর্শণ করতে থাকে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্থানীয় এমপি শামীম ওসমানকে কটুক্তি করা প্রসঙ্গে রফিকুল ইসলাম বলেন, পরীক্ষার্থীদের এমন কথা আজকে নতুন করে উদ্ভব হয়েছে। গতকাল এমন কোন কিছুই ছিলোনা। আমরা তাদের মোবাইল ফোন নিয়েছি, এক্সফেল্ট করেছি এব্যাপারে তাদের কোন কথা নেই।

এব্যাপারে তারা কিছু বলতে পারছেনা। তাই নতুন করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও এমপি শামীম ওসমানকে জড়িয়ে এমন অপপ্রচার করছে। আমি একটি সরকারি চাকুরি করি। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছি, বিসিএস দিয়ে চাকুরীতে ঢুকেছি, আমি কি এতোটাই বিবেচনাশুণ্য হয়ে গিয়েছি, যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মাননীয় সংসদ সদস্যকে নিয়ে কটুক্তি করবো। এতটুকু জ্ঞান কি আমার নেই এটা বিবেচনার দায়িত্ব সবার কাছেই রাখলাম।

এরপরেও সাজার মুখে পড়েছেন, সাময়িক প্রত্যাহার করা আপনাকে, এখন নিজেকে কি দোষী মনে করেন এমন প্রশ্নের জবাবে রফিকুল ইসলাম বলেন,  আমরা পরীক্ষার্থীদের যদি নকল থেকে বিরত না রাখি,তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎরা কি শিখবে?

পরীক্ষার্থীদের বক্তব্য অনুযায়ী তারা মোবাইল ফোন নিয়ে এসে পরীক্ষা হলে নকল করে পরীক্ষা দিবে তাদের কিছু বলা যাবেনা এমন সাইকোলোজী তারা তৈরি করার চেষ্টা করলেও আমি শুধু এটুকুই বলবো, সেটি সম্ভব নয়। তাহলে আর পরীক্ষা নেয়ার কি কোন দরকার রয়েছে? সুষ্ঠুভাবে নকলবিহীনভাবে পরীক্ষা দেয়ার কোন বিকল্প নেই। আমি শুধু বলবো, একজন শিক্ষক হিসেবে আমার যেটি করণীয় সেই দায়িত্বটিই আমি পালন করার চেষ্টা করেছি।  
 

এই বিভাগের আরো খবর