বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

নুনেরটেকের মূর্তিমান আতঙ্ক 

প্রকাশিত: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

যুগের চিন্তা রিপোর্ট (যুগের চিন্তা ২৪) : সোনারগাঁ উপজেলার বারদী ইউনিয়নের নুনেরটেক এলাকাটি হুমকির মুখে ফেলছে বালু সন্ত্রাসীরা। নুনেরটেক এলাকার মানুষের জন্য মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে হাশেম আর জাকারিয়া বাহিনী। যেখানে সরকার বিদ্যুৎ দেয়ার ব্যবস্থা করে নুনেরটেককে ডিজিটাল গ্রাম ঘোষণা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। অপরেিদকে প্রতিদিন হাশেম জাকারিয়া বাহিনীর অবৈধ বালু সন্ত্রাসীরা প্রতিদিন অর্ধলক্ষ টাকা লুটে নিচ্ছে। নারায়ণগঞ্জের বালু সন্ত্রাসীরা কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার বালু সন্ত্রাসীদের সাথে আতাঁত করে এই অপকর্ম করছে। 

 

সরজমিনে নুনেরটেক ঘুরে এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, হাসেম ও জাকারিয়া বাহিনীর ভয়ে এলাকার মানুষ মুখ খুলতে নারাজ। তারা আসলে নুনেরটেকবাসীদের সাথে প্রতারণা করছে। হাশেম আর জাকারিয়া বাহিনী নুনেরটেক এলাকায় একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে সে বাহিনী দিয়ে তারা নানা অপকর্ম চালায়। জমি জালিয়াতি, বিচারের নামে ঘুষসহ নানা নৈরাজ্য চালায় হাশেম বাহিনী। 

 

এলাকা সাধারণ কোন বিচার শালিস হলেই তাদের আনন্দের শেষ নেই। মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ দাবি করে। নুনেরটেক এলাকায় এক শতাংশ জমি বিক্রি করলে তাদের হাতেই বিক্রি করতে হবে। তা না হলে সে জমির মালিককে নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়।

 

সূত্র জানিয়েছে, স্থানীয় এমপিকেও এই বাহিনী তোয়াক্কা করে না। অথচ এলাকায় তারা নিজেদের এমপি ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের লোক বলে প্রচার করে। স্থানীয় এমপির নাম বিক্রি করে নানা অপকর্ম করছে। হাসেম স্থানীয় এমপি ও চেয়ারম্যান জহিরুলের সাথে পল্টি দিয়ে পাশের গ্রামে নতুন এক কোম্পানির সাথে কোটি টাকার চুক্তিতে নতুন কোম্পানির কাজ নিয়ে ব্যস্ত। বালু কাটার ফলে সোনারগাঁয়ের ইতিহাস থেকে নুনেরটেকের নাম খুব তাড়াতাড়ি শেষ হযে যাবে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের। সূত্র জানিয়েছে, সরকার প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৩ কেবি ওয়াট এর ডাবল সার্কিট বিদ্যুৎ দিচ্ছে নুনেরটেকে। আর বালু কেটে শেষ করা হচ্ছে পুরো এলাকা। 

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নুনেরটেক এলাকার এক বৃদ্ধ কৃষক বলেন, বিদ্যুৎ দিয়ে কী হবে বালু কাইটা নিয়া আমগো সব শেষ কইরা দিতাছে। উপরে গাছ কাইটা নিচে পানি ঢাললে কি অইব। চালিভাংগা ইউনিয়ন পরিষদের লতিফ  চেয়ারম্যান আর নলচরের সানাউল্লাহর সাথে হাত মিলিয়ে বালু কেটে শেষ করছে নুনেরটেক হাশেম আর জাকারিয়া।

 

এলাকাবাসী আরো জানায়, গত ২৪ ডিসেম্বর বিদ্যুৎ উদ্বোধন করতে এসে এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা বলেছেন, বালু কেটে নুনেরটেক শেষ করতে দিবে না। কেউ বালু কাটলে বালু সন্ত্রাসীদের বাড়ি ঘর থাকবে না।  কৈ এমপির লোকজনই তো বালু কাটতেছে এমপি এসব দেখে না।

 

নুনেরটেক এলাকার এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, বারদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহিরুল হক বলেছেন, এলাকাবাসীদের নিয়ে আমি এর প্রতিবাদ করব। কিন্তু তিনিসহ তার ভাইয়েরা বালুর টাকার ভাগ পায়। কী করে প্রতিবাদ করবে। টাকার লোভ হল বড় লোভ।

 

বালুসন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চলার কথা স্বীকার করে বারদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জহিরুল হক যুগের চিন্তাকে জানান, হাশেম-জাকারিয়া অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত। তবে এটি তারা একা করেনা। এরসাথে কুমিল্লার চালিভাংগা ইউনিয়ন পরিষদের লতিফ চেয়ারম্যান আর নলচরের সানাউল্লাহ সাথে হাত মিলিয়ে বালু কেটে শেষ করছে। আমি বারবার তাদের নিষেধ করেছি। চেয়ারমান হিসেবে আমি কি করতে পারি। অপকর্মগুলো করতে নিষেধ করা ছাড়া আমার কিছু করার নেই। 

 

এ ব্যাপারে কথা বলতে মেঘনা উপজেলার চালিভাংগা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লতিফ সরকার ও বালু সন্ত্রাসী হাশেমের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভবপর হয়নি। 

এই বিভাগের আরো খবর