শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

নিতাইগঞ্জে ‘পঙ্গু ও মৃত’ শ্রমিকের নামে চাঁদাবাজী !

প্রকাশিত: ১৩ জানুয়ারি ২০২০  

শাহজাহান দোলন (যুগের চিন্তা ২৪) : শহরের ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা নিতাইগঞ্জ। চাল, গম ও লবণসহ বেশ কয়েকটি ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার এই নিতাইগঞ্জে। এখানকার মিল মালিকদের  কাছ থেকে পাইকারি দামে  ভোগ্যপণ্যগুলো ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন জেলার ক্রেতারা। সেই সুবাদে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ পণ্যবাহী ট্রাক আসা যাওয়া করে এই পাইকারি বাজারে। 


তবে এসব ট্রাক থেকে যানজট নিরসন এবং মৃত ও পঙ্গু শ্রমিকদের সাহায্যের নামে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে একটি মহলের বিরুদ্ধে। জানা যায়, দুই বছর আগে নারায়ণগঞ্জ’র এক সাংসদ নিতাইগঞ্জের যানজট নিরসনের জন্য ট্রাক মালিক সমিতি, লোড আনলোড শ্রমিক ইউনিয়ন এবং ট্রাক, ট্যাংকলরী ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নকে দায়িত্ব দেন। 


ফলে নিতাইগঞ্জের খালঘাট এলাকায় যানজট নিরসনের জন্য খরচ হিসেবে এসব সংগঠনকে চাঁদা দিতে হয় পণ্যবাহী ট্রাকের চালকদের। কিন্তু খালঘাট থেকে ছেড়ে আসা সেই ট্রাক থেকে মন্ডলপাড়া পুলে পুনরায় টোকেন দিয়ে চাঁদা আদায় করছে ট্রাক, ট্যাংকলরী ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা।


বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারী) দুপুরে মন্ডলপাড়া পুলের নিচে ট্রাক চালক আব্দুল আলিম বলেন, আমি তো খালঘাট থেকে মাল লোড করার সময় একবার চাঁদা দিয়েই গাড়ী ছেড়েছি কিন্তু আবার এই পুলেও টাকা দিতে হলো। এটা আমাদের সাথে এক ধরণের অত্যাচার। এই এলাকাতেই দুই তিনবার টাকা দিলে আমাদের কাছে থাকে কি?


হাবিবুর রহমান নামে আরেক ট্রাক চালক বলেন, শুধু এই নিতাইগঞ্জ থেকে মন্ডলপাড়া অতিক্রম করতেই আমাদের দুই থেকে তিন বার চাঁদা দিতে হয়। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে তো আর এগুলো করা যায় না। তাই প্রশাসনকে অনুরোধ করছি যাতে তারা এ বিষয়ে একটু নজর দেয়।


ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে সরেজমিনে মন্ডলপাড়া পুলে গিয়ে দেখা যায়, নিতাইগঞ্জ থেকে আসা পন্য বোঝাই প্রতিটি ট্রাকে টোকেন দিয়ে ২০ টাকা করে চাঁদা তুলছে ট্রাক, ট্যাংকলরী ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের কর্মচারীরা। কিন্তু কেন এই টাকা তোলা হচ্ছে এর কারণ জানতে চাইলে কর্মচারীরা বলেন, মন্ত্রণালয়ের অর্ডার আছে। এছাড়া বলেন শহরের যানজট নিরসন এবং পঙ্গু ও মৃত শ্রমিকদের সাহায্যের জন্য ব্যয় করা হয় এই টাকা।


এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা ট্রাক, ট্যাংকলরী ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের অফিসে গিয়ে সংগঠনটির সভপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের দেখা পাওয়া যায়নি অন্যদিকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তারা এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হয়নি। 

তবে সংগঠনটির সহ-সম্পাদক ফিরোজ আলম বকুল বলেন, আমরা ট্রাক থেকে যেই টাকা পাই সেটা আমাদের মৃত এবং পঙ্গু শ্রমিকদের কল্যাণে ব্যবহার করি এছাড়া আর কিছুই না। আমরা নিজেরা এই টাকা গ্রহন করি না।

আর টোকেন দিয়ে ট্রাক থেকে চাঁদা তোলার বিষয়টি অবৈধ উল্লেখ করে নারায়ণগঞ্জ জেলা ট্রাক ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিউদ্দিন প্রধান বলেন, যানজট নিরসনের জন্য সিটি করপোরেশন, লোড আনলোড শ্রমিক ইউনিয়ন টাকা নিতে পারে কিন্তু ট্রাক, ট্যাংকলরী ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের তো টাকা নিতে পারে না। 


এটা অবৈধ তাদের কোন অধিকার নেই টাকা নেওয়ার। যদি তারা যানজট নিরসন এবং অন্য কোন কথা বলে টাকা নেয় তাহলে সেটা চাঁদাবাজী ছাড়া অন্য কিছুই নয়। আমি এদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই। 


দ্রুত এই চাঁদাবাজী ঠেকাতে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে জানিয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)  মো: আসাদুজ্জামান এ বিষয়ে বলেন, আমরা মন্ডলপাড়া পুলে চাঁদাবাজীর অভিযোগ আগেই পেয়েছি এবং এই চাঁদাবাজীর জন্য একটি মামলা হয়েছে তাই আমরা দ্রুতই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
 

এই বিভাগের আরো খবর