বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

নিউজিল্যান্ডে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ফারুকের পরিবার শোকে স্তব্দ

প্রকাশিত: ১৭ মার্চ ২০১৯  

বন্দর (যুগের চিন্তা ২৪) : নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে আল নুর মসজিদে শ্বেতাঙ্গ খ্রিস্টান সন্ত্রাসীর গুলিতে নিহত নারায়ণগঞ্জের বন্দরের ওমর ফারুকের পরিবার শোকে স্তব্দ হয়ে গেছে।  বন্দর উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ¦ আতাউর রহমান মুকুল জানান, ওমর ফারুক ঘটনার সময়ই মারা গেছে এটা তারা নিশ্চিত হয়েছে। 

নিহত ওমর ফারুক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুলের শ্যালিকার মেয়ের জামাই। চেয়ারম্যানের পুত্র রেজানুর রহমান জানান, নিউজিলেন্ডে অবস্থানরত ৭১ টিভির সাংবাদিক দেব চৌধুরী তাকে টেলিফোন করে ওমর ফারুকের মৃত্যু নিশ্চিত করেছে। চেয়ারম্যান মুকুল আরো জানান, তারা লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করেছেন। 

বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিন্টু বেপারী জানান, আমি পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করছি। তবে ওমর ফারুকের মৃত্যু সম্পর্কে সরকারি ভাবে আমাকে কিছু জানানো হয়নি। শুধু তাদের পরিবার দাবি করছে ওমর ফারুক মারা গেছে। 

এদিকে মৃত্যুর ঘটনা জানার পরই কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবারের স্বজনরা। খবর পেয়ে দূর-দূরান্ত থেকে নিকট আত্মীয়-স্বজনরা তাদের সান্তনা দিতে ছুটে আসতে থাকেন বন্দরের রাজবাড়ি এলাকায় ওমর ফারুকের বাড়িতে। 

পরিবারের স্বজনদের কান্নার রোল যেন থামছেই না। স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে গেছে বন্দরের বাতাস। গতকাল রোববার বিকালে ওমর ফারুকের বন্দরস্থ রাজবাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্বজনদের আহাজারি থামাতে এলাকার লোকজন শান্তনা দিতে আসছে। 

ওমর ফারুকের মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর থেকে ৩ মাসের অন্তসত্তা স্ত্রী নিহা শোকে অনেকটা পাথর হয়ে পড়েছে। বার বার জ্ঞান হারাচ্ছেন নিহা। গত শুক্রবার দুপুরে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচাচের্র দুটি মসজিদে জুম্মার নামাজের সময় এক বন্দুকধারী সন্ত্রাসীর এলোপাতাড়ি গুলিতে ৫০ জন নিহত ও ৪৬ জন আহত হন। 

ঘটনার পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন প্রবাসী ওমর ফারুক। পরে শনিবার রাতে নিউজিল্যান্ডে যোগাযোগ করে লাশ শনাক্ত করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার ভগ্নিপতি সারোয়ার হোসেন। পরিবারের সূত্রমতে, ফারুক তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন।

বন্দর উপজেলার রাজবাড়ি এলাকার পিতৃহারা তিন বোনের একমাত্র ভাই ওমর ফারুক পরিবারটিকে টিকিয়ে রাখতে ভালো উপার্জনের আশায় ২০১৫ সালে পাড়ি জমান নিউজিল্যান্ডে। 

সেখানে একটি কনস্ট্রাকশন কোম্পানিতে কাজ করতেন ওমর ফারুক। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে বাড়িতে ছুটিতে আসার পর বন্দরের আমিন আবাসিক এলাকার সানজিদা জামান নিহার সঙ্গে পারিবারিকভাবে তার বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর আবার নিউজিল্যান্ড চলে যান ওমর ফারুক। গত ১৬ নভেম্বর ছুটি নিয়ে আবারো দেশে আসেন ওমর ফারুক। 

কিছুদিন বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে কাটিয়ে চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি নিউজিল্যান্ড ফিরে যান তিনি। স্ত্রী সানজিদা জামান নিহার বর্তমানে ৩ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। স্ত্রীর সঙ্গে ওমর ফারুকের শেষ কথা হয় নিউজিল্যান্ড সময় শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে। 

এরপর ওমর ফারুকের সঙ্গে পরিবারের আর কোনো যোগাযোগ হয়নি। গত শনিবার বিকেলে গণমাধ্যমে দুই বাংলাদেশির লাশ শনাক্ত হওয়ার খবর জানতে পেরে স্বজনরা যোগাযোগ করেন নিউজিল্যান্ডে। সেখান থেকেই তারা ওমর ফারুকের নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হন। 

ফারুককে হারিয়ে স্ত্রীসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা নির্বাক হয়ে পড়েছেন। ওমর ফারুকের লাশ দ্রুত ফিরিয়ে আনাসহ ক্ষতিপূরণ দাবি করছেন পরিবারের স্বজনরা। তাদের দাবি, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে সংসার চালানোর মতো আর কেউ রইলো না তাদের।

এই বিভাগের আরো খবর