বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

নারায়ণগঞ্জের এমপিদের মাথার তাজ ‘মেয়র আইভী’

প্রকাশিত: ১৭ অক্টোবর ২০১৮  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : আওয়ামীলীগ দুদফায় ক্ষমতায় আসার পর প্রায় দশ বছর পূর্ণ হতে চললো। প্রথম দফায় ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি সংসদীয় আসনের চারটিতে আওয়ামীলীগ প্রার্থীই জয়ী হয়ে এমপি নির্বাচিত হন।

সে নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে এমপি নির্বাচিত হন গাজী গ্রুপের প্রধান গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতিক), নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে (আড়াইহাজার) এমপি নির্বাচিত হন  কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সেক্রেটারি নজরুল ইসলাম বাবু, নারায়ণগঞ্জ-৩ ( সোনারগাঁ) আসনে এমপি নির্বাচিত হন আব্দুল্লাহ আল কায়সার এবং নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে এমপি নির্বাচিত হন অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী।

মহাজোটে ছাড় দেয়ায় নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসনে এমপি নির্বাচিত হন একেএম নাসিম ওসমান। তবে নারায়ণগঞ্জ থেকে কেউই মন্ত্রিত্বের সাধ পায়নি।

তবে এমপিরা যেটি পারেননি সেটি পূরণের সুবর্ণসুযোগ আসে ২০১১ সালের নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। অবশ্য সে নির্বাচনে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন দেয়া হয় ১৯৯৬ সালে নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে এমপি নির্বাচিত হওয়া একেএম শামীম ওসমানকে।

মনোনয়ন বঞ্চিত থাকেন আওয়ামীলীগের জনপ্রিয় নেত্রী ডা.সেলিনা হায়াৎ আইভী। সে নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন আইভী। নির্বাচনে শামীম ওসমানকে বিশাল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী।

বিজয়ী হয়ে ছুটে যান আওয়ামীলীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে। নৌকা উপহার দিতে গণভবনে গেলে আওয়ামী সভানেত্রী শেখ হাসিনা আইভীকে জড়িয়ে ধরে বুকে টেনে নেন। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে গোলাম দস্তগীর গাজী, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে (আড়াইহাজার) নজরুল ইসলাম বাবু, নারায়ণগঞ্জ-৩ ( সোনারগাঁ) আসনে জাতীয় পার্টি থেকে লিয়াকত হোসেন খোকা এবং নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে শামীম ওসমান এবং নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসনে নাসিম ওসমান নির্বাচিত হন। তবে দ্বিতীয় দফায়ও আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন নারায়ণগঞ্জ থেকে কেউই মন্ত্রিত্বের সাধ পায়নি।

এমনকি নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের প্রয়াত সাংসদ নাসিম ওসমানের মৃত্যুর পর উপ-নির্বাচনে নির্বাচিত এমপি সেলিম ওসমানও নারায়ণগঞ্জবাসীকে মন্ত্রীত্বের স্বাধ পাইয়ে দিতে পারেননি। সংরক্ষিত আসনের এমপি অ্যাডভোকেট হোসনে আরা বাবলীকে দিয়েও সে স্বাধ অপূর্ণই থেকে যায় নারায়ণগঞ্জবাসীর।  

তবে দুদফায় নির্বাচিত ও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত এমপিদের ছাপিয়ে নারায়ণগঞ্জবাসী প্রথম উপ-মন্ত্রীর স্বাদ পায় ২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর নাসিক নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর বদন্যতায়। ২০১৫ সালের ২১ জুন তাকে উপমন্ত্রীর মর্যাদা  দেওয়া হয়।

বেতন-ভাতাসহ উপমন্ত্রীর পদমর্যাদার আনুষঙ্গিক সুবিধা পান মেয়র আইভী। তবে সেটিও হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয় যখন ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর নির্বাচনের আগে। আওয়ামীলীগের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়া সেই নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে আইভীর নামই প্রস্তাব রাখেননি। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ সম্পর্কে পূর্ণ ওয়াকিবহাল ছিলেন আওয়ামীলীগ সভানেত্রী ও  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দের কথাকে আমলে না নিয়ে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে নাসিক নির্বাচনে মনোনয়ন দেন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে।

দ্বিতীয় বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন মেয়র আইভী। নির্বাচনে বিশাল ব্যবধানে বিএনপির প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানকে পরাজিত করেন তিনি।  দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার পর ২০১৭ সালের ৭ নভেম্বর নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে উপমন্ত্রীর পদমর্যাদা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার।  

এখন পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জের সকল এমপিদের ছাড়িয়ে আওয়ামীলীগ সরকারের সর্বোচ্চ পদপর্যাদা দেয়া হয়েছে শুধুমাত্র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকেই। নারায়ণগঞ্জে দুদফায় আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টির টিকিটে নির্বাচিত এমপিদের ছাপিয়ে নারায়ণগঞ্জবাসীকে কেবলমাত্র নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীই উপ-মন্ত্রীর স্বাধ পাইয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন।

২০০৮ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৯ এমপির মাথা তাজ হয়ে আওয়ামীলীগ সরকারের সর্বোচ্চ অর্জন নাসিক মেয়র আইভীরই। ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীই দুদফায় এমপি হওয়া নারায়ণঞ্জের সকল এমপিদের মাথার তাজ হয়ে রয়েছেন।  

এই বিভাগের আরো খবর