বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

নারায়ণগঞ্জে ২ মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৬০০ জন

প্রকাশিত: ২৯ আগস্ট ২০১৯  

বিশেষ প্রতিনিধি (যুগের চিন্তা ২৪) : সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি রিক্সা, ভ্যান, অটোরিক্সা ও সিএনজিযোগে ডেঙ্গুরোগী চিকিৎসা নিতে আসছে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে। প্রতিদিন গড়ে ১০/১২ জন করে নারী-পুরুষ নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছে ডেঙ্গুতে। জুলাই ও আগস্ট দুই মাসে নারায়ণগঞ্জ জেলায় ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা ৬০০ ছাড়িয়ে গেলেও সরকারি হিসেবে জেলায় মোট ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা ৩৪৯ জন বলা হচ্ছে। 

 

জুলাই মাসে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১৬৩ জন। নারায়ণগঞ্জে এখনও বেশি ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত হচ্ছে। নতুন আক্রান্তের সংখ্যা উঠানামা করলেও দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখনও ঝুঁকিমুক্ত হয়নি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। 

 

গতকাল নারায়ণগঞ্জ জেলায় সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে নতুন করে ভর্তি হয়েছে ১১ জন রোগী। জেলায় মোট ভর্তি ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা ৪৪ জন। এ নিয়ে ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা ৩৪৯ জনে উন্নীত হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা.মোহাম্মদ ইমতিয়াজ। 

 


জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে প্রথম ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত হয় গত ২৩ জুলাই। রোগীর সংখ্যা ছিল ১ জন। গত জুলাই মাসে এই হাসপাতালে শনাক্ত হয়েছে মোট ২২৮ জন রোগী। এরমধ্যে পুরুষ ১৪৫ জন, মহিলা রোগী ৫৪ জন ও শিশুরোগী ছিল ২৯। শনাক্ত হওয়া ২২৮ জন রোগীর মধ্যে ভর্তি হয় ৪৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৩২ জন, মহিলা ৯ জন ও শিশু ২। 

 

জানাগেছে, ডেঙ্গু থেকে পরিত্রাণ পেতে নারায়ণগঞ্জে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় জেলা সিভিল সার্জনের অফিস থেকে প্রায় পাঁচ হাজার লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে এবং বিভিন্ন স্কুল-কলেজে গিয়ে শিক্ষার্থীদের ডেঙ্গু সম্পর্কে সচেতন করার কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

 

সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজ পরামর্শ দিয়ে বলেন, যে কোন জ্বরকে অবহেলা করবেন না। জ্বর হলেই নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাবেন। চিকিৎসক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে ব্যবস্থাপত্র দিবেন। ডেঙ্গুর আলামত দেখলে ডেঙ্গু টেস্ট করাবেন। এখন ডেঙ্গু টেস্ট করাতে পারেন বিনামূল্যে। ডেঙ্গু ধরা পড়লে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা চলবে। 

 

তিনি আরও বলেন, ভয়ের কিছু নেই। সতর্ক থাকবেন বাড়ির আশেপাশে বা বাড়ির ছাদে যেন কোথাও কোন কিছুতে পানি জমে না থাকে। এডিস মশার বিস্তারে সহায়ক ছাদে এবং ড্রেনে জমে থাকা পানি, আগাছার জঙ্গল, এসি পরিত্যক্ত খোলা টিন, কমোড ইত্যাদি পরিষ্কার রাখতে হবে। 

 

সিভিল সার্জন জানান, আল্লাহর অশেষ রহমতে এখনো নারায়ণগঞ্জে কোন রোগী মারা যায়নি। বরং নারায়ণগঞ্জের ডেঙ্গুরোগী মারা গেছে ঢাকায়।


জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ  জেলায় সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে প্রতিদিন কমপক্ষে ১৬ জন ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত হচ্ছে। অর্ধেক সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বাদ বাকীরা বাড়িতে বা কোন ক্লিনিকে চিকিৎসা নেন। ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় চিকিৎসা নেওয়ার সময় নারায়ণগঞ্জের ছয়জন রোগী মারা গেছেন। 

 

এখন নপর্যন্ত ডেঙ্গুতে যারা মারা গেছেন তারা হলেন ফতুল্লার বক্তাবলী এলাকার জসিম উদ্দিনের ছেলে শান্ত মিয়া, ইসদাইরের শাওন কবির সাহেলীন, ফতুল্লার দেলপাড়া এলাকার স্কুলশিক্ষক বেলাল মিন্টু, ফাতেমা বেগম , আমলাপাড়ার এক স্কুলছাত্র ও সোনারগাঁয়ের এক যুবক।

 


স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ সম্প্রতি বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের কারণে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। যার প্রভাবে বাংলাদেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধি  পেয়েছে। বাতাসে আদ্রতার পরিমাণও বেড়েছে। কখনও খরা, আবার কখনও বা অতিবৃষ্টির ফলে  ডেঙ্গু মশার প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

 

আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যার আধিক্য রাজধানীতে  ডেঙ্গুর এ ধরনের প্রকোপ এক ধরনের বাস্তবতা। প্রত্যেক নগরবাসীকে সচেতন হতে হবে। জ্বর হলে সাধারণ জ্বর মনে না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে  ডেঙ্গুর পরীক্ষা করাতে হবে। সকল হাসপাতালকেই এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া আছে। জ্বর নিয়ে সময়ক্ষেপণ করা যাবে না। সচেতন থাকলে আতঙ্কের কিছু নেই।

এই বিভাগের আরো খবর