শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

নারায়ণগঞ্জে ‘বিল্ডিংকোড’ মানেনা কেউ

প্রকাশিত: ১০ নভেম্বর ২০১৯  

ইমতিয়াজ আহমেদ : শিল্প শহর নারায়ণগঞ্জকে এখন অট্টালিকার শহর বললে অত্যুক্তি হবেনা। কিন্তু ক’টি ভবন বিল্ডিং  কোড মেনে তৈরী ? এ প্রশ্নের উত্তর মেলানো ভার। নারায়ণগঞ্জ গণপূর্ত অধিদফতর, সিটি কর্পোরেশন  থেকে এ বিষয়ে তেমন কোন তথ্য মিলেনি। দু’টি সংস্থা থেকেই বলা হয়েছে রাজউক এর কথা।

 

তবে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এর পক্ষ থেকে ১০ টি ভবনকে চিঠি দেয়া হয়েছে। এই ভবনগুলো বিল্ডিং কোড মানেনি। ৩ নভেম্বর শহরতলীর বাবুরাইল তাঁতীপাড়া হামিদ মুন্সীর বাড়ি এলাকায় একটি চারতলা ভবন ধ্বসে পড়ে। এতেকরে ২ জন স্কুল ছাত্রের মৃত্যু ঘটে। আহত হয় ৫/৭ জন।

 

সেই ভবনটি তৈরী করা হয়েছিল  জোড়াতালি দিয়ে। খালের পাড়ে একতলার ফাউন্ডেশন দিয়ে তার উপর একেএকে চারতলা ভবন তৈরী করা হয়েছিল। চারতলার কাজ সমাপ্ত হওয়ার আগেই ভবনটি ধ্বসে পড়লো। এ ঘটনায় ভবন মালিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে একটি তদন্তকমিটি।

 

একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ইট-সিমেন্টের গাঁথুনিতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে রং-বেরংয়ের সুউচ্চ ভবন। নারায়ণগঞ্জ জেলায় দ্রুত বাড়ছে এ ধরনের বহুতল ভবনের সংখ্যা। গত ১০ বছরে জেলায় এমন ভবনের সংখ্যা বেড়েছে আশাতীত। শহুরে জীবনে কিছুটা সচ্ছলতার পরিচয় মিললেও তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আতঙ্ক ও আশঙ্কা। গড়ে ওঠা এসব ভবনের কোনটিতেই মানা হচ্ছে না বিল্ডিংকোড।

 

বিন্দুমাত্র নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই একের পর এক গড়ে তোলা হচ্ছে বহুতল ভবন। খাল-বিল ও ডোবা-নালা এমনকি জলাশয় ভরাট করে তৈরি করা হচ্ছে ভবন। বহুতল ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে সরকারি নিদের্শনাতো মানা হচ্ছেই না, এমনকি অগ্নি নিরাপত্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিও মানছেন না প্রভাবশালী এসব ভবন মালিকেরা। আর এভাবেই প্রতিদিনই অনিরাপদ হয়ে উঠছে নগর জীবন।

 


জানাগেছে, বিভিন্ন জেলা শহরে সাধারণত বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে অনুমোদন দিয়ে থাকেন  পৌরসভা  কিম্বা সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু নারায়ণগঞ্জে বাড়ি নির্মাণ ও ভবনের প্ল্যান অনুমোদন দেয় রাজউক। তবে ষষ্ঠতলার বেশি অর্থাৎ বহুতল ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে জেলা প্রশাসকের গঠন করা কমিটির অনুমোদন দিতে হয়।

 

সেক্ষেত্রে বহুতল ভবন নির্মাণে মাটি পরীক্ষা, অবকাঠামোগত সুবিধা, অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ ১০টি নিয়ম মানার কথা রয়েছে ইমারত আইনে। অথচ গড়ে ওঠা এসব ভবনের সিংহভাগই এসব নিয়ম না মানার দলে। অনেক ভবন মালিকেরও নেই ছাড়পত্র।

 

বিল্ডিং নির্মাণের  ক্ষেত্রে অনুমোদন ও প্ল্যান পাস করে রাজউক। এ কারণে নারায়ণগঞ্জে অনিয়ম ধরা যায়না। রাজউক এই কাজ সিটি কর্পোরেশনকে বুঝিয়ে দিলে বিল্ডিং কোড না মেনে কেউ ভবন করতে পারবেনা বলে মনে করেন সিটি কর্পোরেশন এর প্রকৌশলীরা। 


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জে গড়ে উঠা  বেশির ভাগই অনুমোদন নেই। প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে থাকার কারণে ভবন মালিকরা ইমারত আইনের তোয়াক্কা করছেন না। অনেক  ক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশন থেকে বাঁধা দেওয়ার পরও ক্ষমতার দাপটে পিছু হটছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

 

শহরের বাবুরাইল তাঁতীপাড়ার বাসিন্দা বেলাল হোসেন জানান, বর্তমানে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে তোলা হচ্ছে একের পর এক বহুতল ভবন। যাদের বেশির ভাগই গড়ে উঠছে নিয়ম নীতির বাইরে।

 

এতেকরে ভূমিকম্পসহ যে কোনো দুর্যোগে প্রাণহানির আশঙ্কা থাকছে। আমাদের এলাকার লোকজন  কোন নিয়মই জানেনা। মানারতো প্রশ্নই আসেনা। যদি নিয়ম মানতো তাহলে কেউ কি একতলা ফাউন্ডেশন দিয়ে চারতলা বিল্ডিং উঠাতো যেত। 


স্থানীয় রবিউল ইসলামের অভিযোগ, বিল্ডিংকোডের পাশাপাশি শহরে অগ্নিনিরাপত্তার বিষয়টি অতীবও জরুরি হলেও মানছেন না ভবন মালিকেরা। এতেকরে কয়েকটি অগ্নিকান্ডের ঘটনা পুণরাবৃত্তির আশঙ্কা তার। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক এর মতে, বাড়ি নির্মাণতো বটেই, বহুতল ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে অগ্নিনিরাপত্তার বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

 

যারা আইন মানছেন না, তারা নিজের অজান্তেই মৃত্যুকে কাছে ডেকে আনছেন। এক্ষেত্রে অনুমোদন  দেওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে আরও কঠোর ও সর্তক হওয়ার পরামর্শ তার। তা না হলে ছোট-খাট দুর্ঘটনাতেও প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে।


জেলা গণপূর্ত অধিদফতর সূত্রে জানাগেছে, বহুতল ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে সরকারি নিয়মনীতি মানা অত্যাবশীয়। এতে কোনোরূপ শিথিলতা প্রদর্শনের সুযোগ নেই। এ বিষয়ে কঠোর আইন আছে। এ ছাড়া ভবন নির্মাণ আইন না মানলে নিজের অজান্তেই অনিরাপদ ভবন তৈরি হবে। যা কোনোভাবেই কারও জন্য কাম্য নয়।


নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এর নির্বাহী কর্মকর্তা এ,এফ,এম এহতেশামুল হক জানান, নানা ঘটনা নতুন করে ভাবিয়ে তুলছে তাদের। তার দাবি, আইন না মানা ভবন মালিকদের বিরুদ্ধে দ্রুত মাঠে নামবে নাসিক কর্তৃপক্ষ।

 

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে  কোনোভাবেই অনিরাপদ বহুতল ভবন নির্মাণ করতে দেওয়া হবে না। খুব শিগগিরই এ ব্যাপারে কঠোর হবে স্থানীয় প্রশাসন।

এই বিভাগের আরো খবর