শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

নারায়ণগঞ্জে পাটের সেই বাজার নেই

প্রকাশিত: ৩০ জুলাই ২০১৮  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : এক সময়ে প্রাচ্যের ড্যান্ডিখ্যাত নারায়ণগঞ্জ পাটের জন্য বিখ্যাত ছিল। গত দেড় দশকেরও বেশি সময় আগে আদমজী জুটমিল বন্ধ করে দেয়ার পর ধীরে ধীরে নারায়ণগঞ্জ থেকে পাটের ব্যবসা চলে যায় খুলনায়।

এরই মধ্যে এখনো কয়েকটি পাটকল নিজেদের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। এদের মধ্যে কুমুদিনী ও পপুলারের নাম বলা চলে। কুমুদিনী ট্রাস্টের দোতলা প্রেস কারখানা ভবনের দুই পাশে বিশাল আকারের ৩৮টি গুদাম। গুদামগুলোর আয়তন সাড়ে ৫ লাখ বর্গফুট। সেখানে যাচাই-বাছাই শেষে শ্রমিকেরা মাথায় করে পাট নিয়ে যাচ্ছেন কারখানার ওপরের তলায়। 

তারপর সেই পাট ওজন করে  দৈতাকার প্রেস মিশিনের একটি অংশে রেখে মোটা দড়ি দিয়ে প্যাঁচানো হয়। তারপর মেশিনে চাপ প্রয়োগ করে বেল আকার দেয়া হয়। প্রতি বেলে ১৮২ কেজি পাট থাকে। মেশিন থেকে প্রতি বেল স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিচতলায় চলে যায়। তারপর নির্দিষ্ট ট্রলিতে করে সেগুলো আবার রফতানির জন্য গুদামে নিয়ে রাখা হয়। ট্রলি চালানোর জন্য পুরো কারখানা চত্বরে রয়েছে রেললাইন।

আবার বিভিন্ন এলাকা থেকে নদীপথে কাঁচা পাট আনার জন্য কারখানার ভেতর পর্যন্ত শীতলক্ষ্যা নদীর একটি চ্যানেল আছে। পাটবাহী ট্রলার কিংবা বড় নৌকা চ্যানেল দিয়ে কারখানায় আসে। নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুর এলাকার কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট অব বেঙ্গল (বিডি) লিমিটেডের জুট বেলিং কারখানার ভেতরের চিত্র এটি।

কারখানা চত্বর ঘুরে দেখা যায়, অল্প কয়েকটি গুদামে ৩-৪ জন করে শ্রমিক পাট যাচাই-বাছাইয়ে কাজ করছেন। কিছু গুদাম ফাঁকা। তবে প্রেস হাউস বেশ কর্মচঞ্চল। দুটি প্রেস মেশিনে প্রায় অর্ধশতাধিক শ্রমিক কাজ করছেন। গুদাম থেকে কারখানায় পাট আনতে ব্যস্ত আরো অর্ধশতাধিক শ্রমিক। সবারই পুরো শরীর পাটের সোনালি আঁশে মাখামাখি। ৩০ বছর ধরে কারখানার প্রেস মিশিন চালানোর কাজ করেন শ্রমিক মো. ইয়াসিন।

তিনি জানান, বর্তমানে কাজ কম থাকায় কারখানাটি ৬ ঘণ্টা চলছে। তবে পাটের ভরা মৌসুম আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫ মাস কারখানায় ৮-১০ ঘণ্টা জুট বেলিংয়ের কাজ হবে। কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট আগে কাঁচা পাট রফতানি করলেও বর্তমানে করে না।
 তাদের জুট বেলিং কারখানা চত্বরের ৩৮ গুদাম ভাড়া নিয়েছে ১২ রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান।

তারাই কুমুদিনীর  প্রেস মেশিন ব্যবহার করে পাটের বেল তৈরি করে। প্রতি বেলের জন্য গুনতে হয় ২৩৫ টাকা। জানতে চাইলে কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের পুরনো কর্মকর্তা জগন্নাথ পোদ্দার জানান, কারখানায় আগে প্রতিদিন ৮০-৮৫ হাজার মণ পাট আসত। দিন-রাত মিলিয়ে ১৬ ঘণ্টা কাজ হতো। এখন সকালে চালু করলে দুপুরে বন্ধ করে দিতে হয়। এই হচ্ছে অবস্থা।

তিনি বলেন, আমাদের কারখানার বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ৩ লাখ বেল। কিন্তু ১ লাখ ২৫ থেকে ৩০ হাজার বেলে বেশি বর্তমানে হচ্ছে না। বহির্বিশ্বে চাহিদা কমে যাওয়ায় কাঁচা পাট রফতানি কমে  গেছে।

বাংলাদেশের কাঁচা পাট রফতানির গন্তব্য পাকিস্তান, ভারত, চীন, নেপাল, যুক্তরাজ্য, ব্রাজিল, রাশিয়া, ভিয়েতনাম, হংকং, তিউনিসিয়া, আইভরি কোস্ট, এল সালভেদর ও ফিলিপাইন। নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা এলাকায় কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের আরেকটি জুট বেলিং কারখানা ছাড়াও পপুলার জুট এক্সচেঞ্জ কারখানা আছে।

কারখানাটিতে ৪০০ শ্রমিক কাজ করেন। বর্তমানে পাটের ভরা মৌসুম না হওয়ায় কয়েকটি গুদাম গম রাখার জন্য ভাড়া দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। পপুলার জুট এক্সচেঞ্জ নিজেরাই কাঁচা পাট বেল আকারে রফতানি করে। নারায়ণগঞ্জের পাশাপাশি খুলনার  দৌলতপুর, সৈয়দপুর, ফরিদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় পাটের ব্যবসা আছে প্রতিষ্ঠানটির।
 

এই বিভাগের আরো খবর