বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

নারায়ণগঞ্জে করোনা ভাইরাস শনাক্তে ল্যাব স্থাপনের জোরালো দাবি

প্রকাশিত: ৮ এপ্রিল ২০২০  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : করোনার থাবায় জর্জরিত সারাদেশ। লকডাউনের আওতায় নারায়ণগঞ্জ। কোভিড-১৯ এর মরণ ছোবলে জেলায় বুধবার পর্যন্ত সরকারি হিসেবে প্রাণ গেছে ৬ জনের, আক্রান্ত হয়েছেন ৩৮ জন। দেশে সর্বপ্রথম চিহ্নিত ৩ করোনা রোগীর মধ্যে ২ দুই জনেই ছিলেন নারায়ণগঞ্জের। মানুষের ঘনবসতি ও গুরুত্ব বিবেচনায় শুরু থেকেই করোনা ভাইরাস সংক্রমিত রোগী শনাক্ত করার কিট ও পরীক্ষাগার স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছে নারায়ণগঞ্জের বিশিষ্টজনেরা। জেলায় নমুনা সংগ্রহের ব্যবস্থা হলেও  করোনা শনাক্তের পরীক্ষাগার করার ব্যাপারে এখনো সাড়া মেলেনি। দিনযত গড়িয়েছে করোনা ভাইরাস শনাক্ত করার পরীক্ষাগার স্থাপনের দাবি আরো জোরদার হয়েছে। বিশিষ্টজনেরা তো বটেই দাবি তুলছেন সাধারণ নাগরিকরাও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জে পরীক্ষাগার স্থাপনের দাবি নিয়ে চলছে নানা স্ট্যাটাস ও মতামত। 

 

৮ মার্চ নারায়ণগঞ্জে দুইজন করোনা আক্রান্ত সন্দেহে আইইডিসিআরে নিয়ে যাওয়া হয়। এর ২২ দিনের মাথায় ৩০ মার্চ নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের হানিফখান মিলনায়তনে সর্বপ্রথম সংবাদসম্মেলন করে নারায়ণগঞ্জে করোনা ভাইরাস সংক্রমিত রোগী শনাক্ত করার কিট সরবরাহ ও পরীক্ষাগার স্থাপনের দাবি জানায় নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব। 

 

সভাপতি মাহবুবুর রহমান মাসুম বলেন, সারা বিশ্বে আজ করোনা ভাইরাসের কারণে কঠিন সংকটাপন্ন অবস্থা বিরাজ করছে। স্তব্দ হয়ে গেছে পুরো বিশ্ব। এমন অবস্থায় দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমন ঠেকাতে সরকার নিরলস পরিশ্রম করে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন। করোনা ভাইরাসের সংক্রমন শনাক্ত করার কিট ও পরীক্ষাগার স্থাপন করেছেন ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে।

 

নারায়ণগঞ্জে করোনা রোগী শনাক্তের কিট ও পরীক্ষাগার স্থাপনের দাবি জানিয়ে তিনি আমরা আজ শঙ্কিত, আতঙ্কিত কারণ নারায়ণগঞ্জ একটি ঐতিহ্যবাহী শিল্প ও বন্দর নগরী অঞ্চল। এখানে গার্মেন্টস, হোসিয়ারি, ইপিজেড, পাট শিল্পসহ আরো ছোট ছোট পরিসরের শিল্প কারখানায় প্রতিনিয়ত লাখ লাখ লমানুষ কাজ করে। সময়ের অভাবে এই কর্মজীবী মানুষগুলো তাদের নিজ নিজ এলাকায় যেতে পারেনি। যার কারণে এই অঞ্চলেই তাদের থাকতে হচ্ছে। আমরা নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব নারায়ণগঞ্জবাসীর পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল নিবেদন জানাই এই শিল্প ও বন্দর নগর নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের কথা বিবেচনা করে করোনা ভাইরাসের সংক্রমন শনাক্ত করার কিট ও পরীক্ষাগার স্থাপন করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

 

এদিকে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহবায়ক রফিউর রাব্বি নারায়ণগঞ্জে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার ল্যাব স্থাপনের জোরালো দাবি করে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যেই দাবি করেছি করোনার টেস্ট ল্যাবের জন্য। নারায়ণগঞ্জের অনেকগুলো সংগঠনও একসাথে জরুরি ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জে করোনার টেস্ট ল্যাব স্থাপনের দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিচ্ছে। দেশে করোনা আক্রান্ত রোগী প্রথমে শনাক্ত হয়েছিল নারায়ণগঞ্জে ৮ মার্চ। এরপর একমাস অতিবাহিত হলো। দেশে এতো এতো জায়গায় যেখানে করোনা পরীক্ষার ল্যাব তৈরি করা হলো কিন্তু নারায়ণগঞ্জে হলোনা। অথচ ঢাকার পরে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের ঘটনা নারায়ণগঞ্জে খুবই ভয়াবহ। আমরা দাবি জানিয়েছি দ্রুত জরুরি ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জে একটি করোনা ভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষার ল্যাব স্থাপন করা হোক। অনেকগুলো সংগঠন মিলে এই দাবি জানানো হচ্ছে।’   

 

এরআগে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার  খোরশেদ  ৬ এপ্রিল  নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও জেলা সিভিল সার্জনকেও লিখিত আবেদনে অবিলম্বে নারায়নগঞ্জে করোনা টেষ্ট ল্যাব স্থাপনের দাবী জানিয়ে বলেছেন, নারায়ণগঞ্জ এখন দেশের করোনা আক্রান্ত পাঁচটি রেড জোনের একটি জনবহুল ও গার্মেন্টস শ্রমিক নির্ভর শহর। সরকারি হিসাবেই  ইতিমধ্যে ৬ জন (সংশোধিত) মারা  গেছে ও অর্ধশতাধিক আক্রান্ত তাই মৃত্যুর মিছিল থামাতে অবিলম্বে নারায়ণগঞ্জে করোনা  টেষ্ট করার ল্যাব স্থাপন করতে হবে।

 

কাউন্সিলার খোরশেদ আরো বলেন, আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী নারায়ণগঞ্জ থেকে সরকারকে  সর্বোচ্চ কর প্রদান করি,তাই আমরা প্রত্যাশা করতেই পারি আমরা আমাদের চরম বিপদের দিনে রাষ্ট্রের কাছে সুবিধা ও নিরাপত্তা পাবো। 

 

শুধু বিশিষ্টজনেরাই নন, নারায়ণগঞ্জে করোনা ভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষার স্থাপনের দাবি জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোষ্ট ও মতামত ব্যক্ত করছেন জেলার সাধারণ নাগরিকরাও। করোনা মোকাবেলায় দ্রুত এই খারাপ সময় থেকে উত্তোরণের জন্য জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছে সর্বস্তরের মানুষ। 
 

এই বিভাগের আরো খবর