বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

নারায়ণগঞ্জ নগরী লকডাউন !

প্রকাশিত: ৬ এপ্রিল ২০২০  

বিশেষ প্রতিনিধি : করোনা ঝুঁকিতে লকডাউন করে দেয়া হতে যাচ্ছে প্রাচ্যেরডান্ডি নারায়ণগঞ্জ মহানগরী। দিনে দিনে করোনা পরিস্থিতি এগোচ্ছে ভয়াবহতার দিকে। নারায়ণগঞ্জে ইতিমধ্যেই করোনায় একাধিক ব্যক্তির মৃত্যু ঘটেছে। করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ১১ জন। লকডাউন করা হয়েছে বিভিন্ন এলাকা। প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা লকডাউন হচ্ছে। 

 

প্রশাসন যথেষ্ট তৎপরতা দেখাচ্ছে। করোনা ভাইরাস ঠেকাতে কাজ করছে পুরো প্রশাসনযন্ত্র। মানুষের জীবন রক্ষার্থে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সার্বিক বিবেচনায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী জরুরি ভিত্তিতে সিটি করপোরেশন এলাকা লকডাউন কিংবা কারফিউ জারি করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছেন।


অন্যথায় করোনায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। রোববার (৫ এপ্রিল) নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল আমিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানান। 

 

আবুল আমিন বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস সংক্রমন মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। বাণিজ্যিক নগরী নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকায় এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। দিন দিন সংক্রমন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতোমধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করায় কয়েকটি এলাকা প্রশাসনের সহায়তায় লকডাউন করা হয়েছে। 

 

তিনি জানান, সিটি এলাকায় ইপিজেড, গার্মেন্টস, হোসিয়ারিসহ ভারী শিল্প কল কারখানার পাশাপাশি চাল, ডাল, আটা, ময়দা, লবণসহ নিত্যপণ্যের পাইকারী বাজার রয়েছে বিধায় এলাকাটি শ্রমিক অধ্যুষিত। ফলে ঘনবসতিপূর্ণ এই নগরীতে করোানা ভাইরাস সংক্রমনের ঝুঁকি  অত্যাধিক। 


মানুষের জীবন রক্ষার্থে সার্বিক বিবেচনায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী জরুরি ভিত্তিতে সিটি এলাকা লকডাউন কিংবা কারফিউ জারী করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছেন। 

 

এখনো সাধারণ মানুষ এই ভাইরাসের ভয়াবহতা বুঝতে পারছেনা। তাই পায়ে পায়ে বিপদ ঘুরছে বলে মনে করেন বোদ্ধামহল। তাদের মতে, দেশে প্রথম করোনা রোগী সনাক্ত হয়েছিল নারায়ণগঞ্জেই। নারায়ণগঞ্জে বন্দরের রসুলবাগে ৫০ বছর বয়সী প্রথম ব্যক্তি যার করোনাভাইরাস পজেটিভ হলো। তাও তার মৃত্যুর পর এই রেজাল্ট মিলেছে।  

 

করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সন্দেহে রয়েছে দ্বিগুবাবুরবাজার এলাকার সনাতন পাল লেন এলাকা। বন্দরের রসুলবাগ ও পাইকপাড়া এলাকার সাথে এ অবস্থায় নগরীর জনবহুল এলাকায় করোনা পজেটিভের খবর জানাজানি হওয়ার পর এর  জেরবারে গতকাল নগরীসহ ফতুল্লায় সাধারণ জনগণের মাঝে ভয়-উৎকণ্ঠা চোখে পড়ে। 


নারায়ণগঞ্জ জুড়ে এটিই এখন দুশ্চিন্তার সাথে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, নারায়ণগঞ্জে করোনায় প্রথম মৃত রোগীটি দিয়েই সংক্রমণের ক্ষেত্রে চরম উদ্বেগের বড় কারণ হলো ওই ব্যক্তি বিদেশফেরত নন। তিনি বাইরে মেলামেশার (কমিউনিটি  ট্রান্সমিশন) কারণেই কোথাও কোনো করোনা রোগীর ছোঁয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন।

 

এদিকে সিটি মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, স্থানীয় সংসদ সদস্যগণ, জেলা প্রশাসনসহ সমগ্র সিভিল প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও পুলিশকে গতকাল আরও কঠোর অবস্থান নিয়ে মাঠে তৎপর দেখা গেছে। 


মেয়র গণমাধ্যমকে বলেন, করোনা মহামারী সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য কেউ শুধুই জরুরি কাজ ছাড়া বাড়িঘরের বাইরে যাবেন না। এ কথা আমরা অনেক আগে থেকেই বার বার সতর্ক করে আসছি। সামাজিক বিচ্ছিন্নতা অর্থাৎ সংস্পর্শ রোধ শতভাগ নিশ্চিত করছি।

 

জেলা প্রশাসক মো: জসীমউদ্দিন কড়া সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন, অনেকে অহেতুক বাড়িঘরের বাইরে গিয়ে ঘুরেফিরে নির্দেশের ব্যত্যায় ঘটাচ্ছেন। প্রসাশন এ বিষয়ে আরও কঠোর ও কঠিন। কাউকে রাস্তায়, অলিগলি বা অন্য কোথাও ঘোরাফেরা করলে এমনকি বাড়িঘরে বসে আড্ডা দিলে তার তাৎক্ষণিক শাস্তি হবে। আমরা খোঁজ-খবর রাখছি। 


গতকাল নগরীর বিভিন্ন স্থানে সড়কে মোড়ে ও গলিপথে অযথা ঘোরাফেরা করতে দেখলে তাদের তাড়া করে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। জনসাধারণকে নিজের বাড়িঘরে অবস্থান এবং করোনা সংক্রমণ রোধে সচেতন করতে তৎপর ছিলেন সিভিল প্রশাসনকে সহায়তাকারী সেনাবাহিনী।


অন্যদিকে হুজুগ যেন অনেককে ছাড়তেই চায় না। নগরীর কয়েক স্থানে বিশেষত অলিগলি, কাঁচা বাজার, লঞ্চঘাট, বস্তি এলাকায় কিছু লোকজনকে খেয়ালিপনার বশেই এদিক সেদিক  ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। 


কয়েকজন জড়ো হয়ে তাদের কথাবার্তা কান পেতে শুনেই মনে হয় না করোনা এসব হুজুগেদের মনকে স্পর্শ করেছে। অথচ তারাই এখন বিপদ  ডেকে আনতে পারে। করোনা সংক্রমণরোধে দেশে টানা ছুটি অঘোষিত লকডাউন চললেও একশ্রেণির মানুষকে বাড়িঘরে আটকে রাখা যাচ্ছেই না।


পেটের দায়ে বের হওয়া মানুষগুলো ভিন্ন কথা। তবে যারা শহরের মূল সড়কগুলো এড়িয়ে এখানে  সেখানে ঘুরছেন, সুযোগ পেলে কমবেশি আড্ডা জমাচ্ছেন তারা নিছক বিপদ হাতে নিয়েই বের হচ্ছেন। বিপদ ঘুরছে পায়ে পায়ে। 


যুবক-তরুণই শুধু নয় অতিবয়স্ক, মধ্যবয়সী লোকদেরও এভাবে ঘুরতে দেখা গেছে। তারা গা ঘেঁষাঘেষি করেই কথার ফানুস উড়াচ্ছে। কিছু মেস ও বাসাবাড়িতে ছুটিয়ে আড্ডা, তাসের আড্ডাও দিচ্ছে। সবান্ধবে ভুড়ি ভোজের আয়োজনও হচ্ছে। আবার অনেকেই কাজ ছাড়াই রিকশায় ঘুরে ঘুরে যেন জনশূণ্য শহর  দেখার মজা কুড়াচ্ছে।
 

এই বিভাগের আরো খবর