বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

নারায়ণগঞ্জ ছাত্রলীগেও অসন্তোষ

প্রকাশিত: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

যুগের চিন্তা রিপোর্ট : সম্প্রতি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নানা নানা কার্যক্রমে অন্তোষ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা পর্যন্ত গড়িয়েছে। বুধবার সচিবালয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনের ফাঁকে এব্যাপারে কথা বলেন।


তিনি বলেন, এই  ব্যাপারে নতুন করে ভাবা হচ্ছে,  কোনো বিবেচনা আসে, সংযোজন বা পরিবর্তনের কোনো প্রশ্ন আসে, আমি মনে করি নেত্রী শেখ হাসিনা নিজেই করতে পারেন। যেহেতু কমিটিটা তিনিই করেছেন, কাজেই কমিটির ব্যাপারে যদি  কোনো পরিবর্তন বা সংশোধন-সংযোজনের প্রয়োজন হয়, সেটা তিনি নিজেই করবেন।’


এদিকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি নিয়ে অসন্তোষ দেখার মাঝেই নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের প্রকৃত নেতাকর্মীদের মাঝে অসন্তোষ বিরাজ করছে। তারা বলছেন, জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ছাত্র নয় এমন অনেককে জায়গা দেয়া হয়েছে। আর তারাই ছাত্রলীগের প্রকৃত নেতাকর্মীদের চেপে রাখা হচ্ছে। 


নাম প্রকাশ না করার শর্তে মহানগর ছাত্রলীগের সহসভাপতি পদমর্যাদার এক নেতা জানান, ‘মহানগরের সহসভাপতি পদে এবং সম্পাদক মন্ডলীর অনেক পদে এমন বেশ কয়েকজনকে জায়গা দেয়া হয়েছে যাদের কমিটির বেশীরভাগ নেতাকর্মীই চেনেননা। 


অথচ তারাই বিভিন্ন কৌশলে এক বিশেষ নেতার পুত্রের বরাত দিয়ে বাকি সবাইকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেন। এমনকি জেলা  ও মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতির মধ্যে ভুলবোঝাবুঝি সৃষ্টির পায়তারা করেন। আর তাদেরকে মদদ দিয়ে যাচ্ছেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন এমন দুজন ব্যক্তি। প্রতিবাদ করা তো দূরের কথা তাদের ছায়ার বিরুদ্ধেও কথা বলা মহাপাপ।’


জেলা ছাত্রলীগের শীর্ষস্থানীয় পদে থাকা এক নেতা বলেন, আমাদের বিশেষ এক ব্যক্তির ছেলের কথায় চলতে হয়। তিনি কখনো ছাত্রলীগ করেছেন কিনা, বা করলেও তার পদ-পদবী কি ছিলো তা জানবার সাহস কারো নেই। মূল কথা নারায়ণগঞ্জে ছাত্রলীগ করতে হলে ওই বিশেষ ব্যক্তির পুত্রের কথায় কাজ করতে হবে।  


আর কোন আওয়ামী লীগ নেতার দ্বারস্থ হওয়া যাবেনা। একেবারেই পকেটের মুদ্রার মতো কাজ করতে হয় ছাত্রলীগকে। যার ফলে  জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের সাথে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের বয়োজ্যেষ্ঠ ও সাবেক ছাত্রনেতাদের মধ্যে দুরুত্ব। কমিটিতে এমন অনেক ব্যক্তি আছেন যারা তেলমর্ধন ও চামচামিতে ব্যস্ত। 


তাদের কারণে মহানগর ও জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পর্যন্ত কথা বলার সাহস পাননা। তারা কোন কলেজের ছাত্র, আর তাদের ছাত্রত্ব আছে কিনা কিংবা তাদের পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড কি তা নিয়ে কেউ প্রশ্ন রাখার সাহস পাননা।

 

মূল পরিচয় তারা ওই বিশেষ ব্যক্তির ছেলের খুব কাছের লোক। এনিয়ে ছাত্রলীগের মূল কর্মীদের মাঝে অসন্তোষ থাকলেও কেউ মুখ খুলতে সাহস পাননা। ফলে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও ছাত্রলীগের কর্মীদের মাঝে নেতৃত্ব তৈরি হচ্ছেনা। 


মহানগর ছাত্রলীগের সম্পাদক মন্ডলীর এক পদে রয়েছেন এমন একজন নেতা জানান, নারায়ণগঞ্জ  মহানগর ও জেলা ছাত্রলীগের মূল কর্মকান্ড বলতে এতোটুকুই যে, বিশেষ ব্যক্তির ছেলের নাম জপে নানা কর্মকান্ড করা হচ্ছে তা সবাইকে দেখানো। সাংগঠনিক যে কাজ অনায়াসেই হওয়া উচিৎ তার চর্চা নারায়নগঞ্জ  জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগে নেই। এর সুযোগও নেই। 


ছাত্রলীগকে এক হিসেবে পারিবারিক কব্জায় নিয়ে আজ্ঞাবহ করে রাখা হচ্ছে। ভেতরে নেতাকর্মীদের রক্তক্ষরণ হলেও আগ্রাসনের মুখোমুখি হতে হবে এই ভয়ে কেউ কথা বলেনা। সবার মাঝেই চাপা ক্ষোভ। আংশিক কমিটি ও তা পূর্ণাঙ্গ হওয়ার পর যে উচ্ছাস ছিলো এখন আর সেটি নেই। 
এখন শুধু পদলেহন যে ভালো করতে পারবে সংগঠনে তারই দাম বেশি। দক্ষ ও প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা যেই হোক তার কাছে যাওয়া এবং তার পরামর্শ নেয়া হারাম এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করে রেখেছে বিশেষ ব্যক্তির ছেলে।  


সাংগঠনিক সম্পাদক পদে রয়েছেন এমন একজন ছাত্রলীগ নেতা জানান, নারায়ণগঞ্জ ছাত্রলীগের গৌরবজ্জল ইতিহাসের কথা বাংলাদেশের সর্ব জায়গায় আলোচিত হয়। সে কথা জেনেই অনেকে ছাত্রলীগের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে, হতে চেয়েছে। কিন্তু কে বলবে এখনকার সময়ে জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের কি দুরাবস্থা। কি নাজেহাল অবস্থা। কমিটিতে থাকতে হয় নির্দিষ্ট ব্যক্তির পদলেহন করে। 


তিনি ছাড়া আর কেউ কি নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ করেননা। তবে সেখানে যেতে অদৃশ্য দেয়াল তুলে দেয়া হয়েছে। নিজের পাল্লা ভারী করতে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের নেতৃত্ব তৈরি হওয়ার মেরুদন্ড ভেঙে দেয়া হয়েছে। সবকিছুতে চলছে একক নিয়ন্ত্রণ। সাংগঠনিক কোন তৎপরতা নেই।  


 প্রসঙ্গত, গত ২৯ জুলাই নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ কমিটির ১৮৮ সদস্য বিশিষ্ট এবং ১৬১ সদস্য বিশিষ্ট মহানগর ছাত্রলীগের কমিটির অনুমোদন দিয়েছে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রেজওয়ানুল চৌধুরী শোভন ও গোলাম রব্বানী স্বাক্ষরিত এই দুই কমিটির অনুমোদিত তালিকা প্রকাশিত হয়।  

 

এরআগে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আজিজুর রহমান আজিজ ও সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম রাফেলকে দায়িত্ব দেয়ার পর তারা পুর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রে পাঠায়। মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ ও সাধারণ সম্পাদক হাসনাত রহমান বিন্দুকে দায়িত্ব দেয়ার পর তারাও পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদনের জন্য তালিকা কেন্দ্রে পাঠায়।

 

তবে এই দুই কমিটির তালিকা তৈরির পেছনে বিশেষ ব্যক্তির ছেলের প্রেসক্রিপশন ছিলো বলে অভিযোগ করেন ছাত্রলীগ নেতারা। তাদের মূল অভিযোগ, ছাত্রত্ব নেই এমন অনেকে কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। আর বিশেষ ব্যক্তির ছেলেকে তেলমর্ধন করতে না পারলে তাকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে একটি গ্রুপ।

 

তবে তারা কোথাকার ছাত্র সে বিষয়ে কোন তথ্য নেই ছাত্রলীগের কর্মীদের মাঝে। প্রকৃত ছাত্রলীগ কর্মীদের নিয়ে কমিটিতে শুদ্ধি অভিযান চালানো প্রয়োজন বলে মনে করেন ছাত্রলীগ কর্মীরা। 

এই বিভাগের আরো খবর