বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৩ ১৪৩১

নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও আমার অহংকার

প্রকাশিত: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯  

ফেব্রুয়ারি আমাদের ভাষা ও ত্যাগের মাস, মহান স্বাধীনতার বীজ রোপনের মাস। আমি নারায়ণগঞ্জসহ সারা দেশের সকল ভাষা সৈনিক ও ভাষার দাবীতে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।

 
১৯৫২ সাল থেকে ২০০৪ পর্যন্ত নারায়ণঞ্জে যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ দিবস পালিত হলেও কেন্দ্রীয়ভাবে স্থায়ী কোন শহীদ মিনার ছিল না। তবে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দের একান্ত চেষ্টায় চাষাড়া কেন্দ্রীক বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থান শহীদ মিনার ছিল। শেষের দিকে পূর্ণাঙ্গ অবয়বে না হলেও বর্তমান শহীদ মিনার চত্বরে একটি স্থাায়ী শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দের উদ্যাগে।


ফলে নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দ ও জনগণের দীর্ঘদিনের দাবী ছিল একটি স্থাায়ী ও পূর্ণাঙ্গ শহীদ মিনার। যেখানে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি ভাষার শুদ্ধ চর্চা তথা একটি সাংস্কৃতিক বলয় গড়ে উঠবে।

দীর্ঘদিন পরে ২০০৩ সালে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনের পরে একটি পূণাঙ্গ শহীদ মিনার করার সিদ্ধান্ত নেয় নব নির্বাচিত পৌর পরিষদ। চাষাড়ার যেখানে অস্থাায়ী ও অপূর্ণাঙ্গ শহীদ মিনারটি ছিল সেই জায়গাটি আমার ওর্য়াডের মধ্যে। পূর্বের জায়গাই সর্বসম্মতিক্রমে শহীদ মিনার স্থাাপনের সিদ্ধান্ত হয়। শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট দশ হাজার টাকা পৌরসভায় অনুদান দেয়। 


মেয়র মহোদয়ের নির্দেশক্রমে আমি সংশ্লিষ্ট ওর্য়াড কাউন্সিলর হিসাবে তদারকি ও বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেয়ে নিজেকে আমি চরম ভাগ্যবান ও গর্বিত মনে করি।

 

নকশা প্রণয়ন, টেন্ডার আহবান করে ঠিকাদার নিয়োগের পরে ২০০৪ সালের ৮ই জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে শহীদ মিনারের ভীত তৈরীর জন্য মাটি কাটার কাজ শুরু হয়। মেয়র মহোদয়ের অনুমতিক্রম আমি কোদাল হাতে মাটিতে কয়েকটি কোপ দিয়ে ও মোনাজাতের মাধ্যমে কাজের উদ্বোধন করি।

 
তখন আরও উপস্থিাত ছিলেন পৌরসভার তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খাইরুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট উপ-সহকারী প্রকৌশলী আওলাদ হোসেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কদম রসুল কনস্ট্রাকশনের মালিক এমরান হোসেন সহ অনেকে। ১২ই জানুয়ারি প্রথম ঢালাই কাজও আমার হাতে শুরু হয়।

 

এরইমধ্যে চলে আসে মহান ভাষা দিবস ২১শে ফেব্রুয়ারি। সেইবার অর্ধ সমাপ্ত শহীদ মিনারেই নারায়ণগঞ্জবাসী শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। এভাবেই দিনে দিনে এগিয়ে যায় নারায়ণগঞ্জবাসীর স্বপ্ন যাত্রা। ধীরে ধীরে একটি পূর্ণাঙ্গ শহীদ মিনারের অবয়ব ফুটে উঠতে শুরু করে। এরই মধ্যে ১২ই জুন শহীদ মিনারের কাজের অগ্রগতি পরির্দশনে আসেন তৎকালীন পৌর মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও জেলা প্রশাসক হারুনার রশীদ।

শেষ হয় অপেক্ষার পালা। অবশেষে ৩০ নভেম্বর’০৪ ঠিকাদার কাজ শেষ করে পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে একটি পূর্ণাঙ্গ শহীদ মিনার হস্তান্তর কর। নামকরন করা হয় ‘নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় পৌর শহীদ মিনার’। 


আজ সেই শহীদ মিনার নারায়ণগঞ্জবাসীর শিক্ষা সাংস্কৃতির পীঠস্থাান। শহীদ মিনার নির্মাণে আমার ভূমিকা অনেকই হয়তো জানে না, আবার অনেকে জেনেও মানেন না। তারপরেও এই শহীদ মিনারের পাশ দিয়ে যখন যাই, যখন দেখি হাজার মানুষ এখানে শহীদদের শ্রদ্ধা জানায়, শিক্ষা সাংস্কৃতিসহ প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ এবং শতশত তরুণের পদভারে মুখরিত থাকে শহীদ মিনার চত্বর, তখন নিজের অজান্তেই বুকের মধ্যে গর্ব অনুভব করি এই ভেবে যে, আমি এই মহান কাজটির সাথে প্রত্যক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট ছিলাম। 


এই গর্ব শুধু আমার একার নয়, এই গর্ব আমাদের ১৩ নং ওয়ার্ডবাসী সবার। কারণ তাদের প্রতিনিধি হিসাবেই এই মহৎ কাজে আমার অংশগ্রহণ। মানুষের মনে ঠাঁই না হলেও পৌরসভার দলিল দস্তাবেজে নিশ্চই আমার নামটি থেকে যাবে, যতদিন আমাদের মায়ের ভাষা থাকবে,য তদিন আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব থাকবে, ইনশাল্লাহ।

 

পূর্বে শহীদ মিনার লাগোয়া পশ্চিম দিকের রাস্তাটির কোন নাম ছিল না। এলাকাবাসী বালুরমাঠ নামে জানতেন। শহীদ মিনারের কাজ শেষ হওয়ার পরে আমার প্রস্তাবেই পৌর পরিষদ সড়কটির নামকরণ করে ‘শহীদ ভাষা সৈনিক সড়ক’। তাছাড়া আরও একটি সড়রে নাম একজন ভাষা সৈনিকের নামে নাম করণের প্রস্তাবকও আমি ছিলাম। যার সকল লিখিত রেকর্ড নাসিকে রক্ষিত আছে।

 

তথাপি সম্পূর্ণ কৃতিত্ব তাদের, যারা ১৯৫২ থেকে ২০০৩ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য শহীদ মিনারের ব্যাবস্থাা করেছিলেন এবং দাবী তুলেছিলেন একটি পূর্ণাঙ্গ ও স্থাায়ী শহীদ মিনারের।

 

 নারায়ণগঞ্জের ভাষা আন্দোলন ও শহীদ মিনারের দীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য ইতিহাস রয়েছে। আমার সংক্ষিপ্ত লেখায় তা উল্লেখ করা সম্ভব হলো না বিধায় আমি সংশ্লিষ্ঠদের কাছে কড়জোর ক্ষমা প্রার্থী।

 


মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ


লেখক : ১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন 
মোবাইল : ০১৭১৭ ১৭ ৮২ ৪২

E-mail : [email protected]

এই বিভাগের আরো খবর