বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

নগরীর ৭০ ভাগ ভবনই ঝুঁকিপূর্ণ

প্রকাশিত: ৫ নভেম্বর ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪): নগরীর ১ নং বাবুরাইল এইচএম ম্যানসন এলাকায় চারতলা ভবন ধসের ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ জেলাজুড়ে তৈরী হয়েছে উৎকন্ঠা। এর আগে শুক্রবার (১ নভেম্বর) নগরীর খানপুর এলাকায় মধ্যরাতে আরো একটি চারতলা ভবন হেলে পড়ে। দুইদিনের ব্যবধানে পর পর দুটি ঘটনায় নারায়ণগঞ্জবাসীর মাঝে বিরাজ করছে আতঙ্ক।
 
সংশ্লিষ্টদের মতে, কোন ধরনের দুর্ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের ৭০ ভাগ ভবনই ঝুঁকিপূর্ণ। এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তাছাড়াও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, চিহ্নিত ভবনগুলোও অজানা কারনে পূর্বের ন্যায় মানুষের জীবন নিয়েই খেলছে। সময়ের ব্যবধানে ছোট ছোট ভূমিকম্প, অগ্নিকান্ড, ভবন ধস ভবিষ্যতে বড় দুর্ঘটনার পূর্বাভাস। এখনই সাধারন মানুষের জীবন রক্ষায় প্রস্তুতি অত্যন্ত জরুরী। তা না হলে ধীরে ধীরে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে আতঙ্ক।
 
সূত্র মতে, নারায়ণগঞ্জের ৭০ ভাগ ভবনই ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে অধিকাংশই শহরের টানবাজার, এসএম মালেহ রোড, মহিমা গাঙ্গুলী, গলাচিপা, নিতাইগঞ্জ, চাষাঢ়া, ভিপি রোড এলাকায় এসব ভবন চিহ্নিত করা হলেও সম্প্রতি নগরীর ১ নং বাবুরাইল এইচএম ম্যানশন এলাকায় ৪তলা ভবন ধসের ঘটনায় জেলা প্রশাসন থেকে ওই এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ ভবন  চিহ্নিত করার নির্দেশ দিয়েছে।  
 
শহরের কালিবাজার, নিতাইগঞ্জ, খানপুর, বঙ্গবন্ধু সড়কের দুইধারের বিশাল ভবনগুলো সবচেয়ে বেশি সাধারন মানুষের জীবনের জন্য হুমকি। তাছাড়া রয়েছে বসবাসকারি মানুষের পাশাপাশি ক্যামিকেলের গুদাম, ডায়িং কারখানা, গ্যাস সিলিন্ডারের মজুদ ছাড়াও দুর্বল ভবন।
 
খানপুরের আলী হোসেন বলেন, পুরনো ভবন মেরামতের পাশাপাশি বেশি রড, সিমেন্ট দিয়ে ভবন নির্মাণ করতে হবে। ক্যামিকেল, ডায়িং ঝুঁকিপূর্ণ কারখানা নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে ফেলতে হবে। যা এখনও পর্যন্ত প্রশাসনের মধ্যে তেমন কোন তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার পূর্বেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। দূর্ঘটনা ঘটলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনতে কাজ করতে হবে। সঠিক কারন অনুসন্ধান না করে ঘটনাকে অন্য দিকে প্রবাহিত করার প্রবনতা কমিয়ে আনতে হবে। নারায়ণগঞ্জবাসী ঝুঁকিপূর্ণ মধ্যে রয়েছে। সকলকে সতর্ক করতে হবে।
 
নিতাইগঞ্জের টিটু বলেন, নারায়ণগঞ্জের কোথাও দুই ভবনের মাঝে এতটুকু ফাঁকা জায়গা দেখা যায় না। দুর্ঘটনায় মানুষ গিয়ে দাঁড়াবে কোথায়? শত শত ভবন নির্মান করা হয়েছে কিন্তু সংশি¬ষ্ট দপ্তরগুলো এখনও ঘুমিয়ে রয়েছে। গলিতে গলিতে ক্যামিকেল, ডায়িং ও ক্ষতিকর কারখানা গড়ে উঠেছে। এগুলো নিয়ন্ত্রনে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে। শহরের বিভিন্ন এলাকা ১ ফিটের চেয়েও সরু রাস্তার পাশে গড়ে উঠেছে বহুতল ভবন। এগুলো কি করে সম্ভব হলো। বিল্ডিং কোড, অনুমোদন কোন কিছুরই প্রয়োজন  হচ্ছে না এই শহরে।
 
নারায়ণগঞ্জে ঐতিহ্যেবাহী অধিকাংশ ভবনেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে শত শত পরিবার: নগরের দু’পাড়ে গড়ে উঠে অসংখ্য ভবন। কালের আবর্তনে এসব অনেক ভবন হারিয়ে গেলেও তবে নগরের টানবাজার, নিতাইগঞ্জ, খানপুর, বঙ্গবন্ধু সড়কসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় শতাধিক ভবন জরাজীর্ণ ও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ঐতিহাসিকদের মতে, প্রায় চারশ’ বছরের পুরাতন শহর প্রাচ্যের ড্যান্ডি হিসেবে খ্যাত নারায়নগঞ্জ। এ শহরে এখনো রয়ে গেছে শত বছরের প্রাচীন বহুতল ভবন। যেগুলো এখন পরিত্যাক্ত ভবন হিসেবে চিহ্নিত। তারপরও  জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে শত শত পরিবার। এসব পরিত্যক্ত ভবনগুলোতে রয়েছে অনেক সরকারী অফিস ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। কিন্তু কোনো যথাযথ কোনো পদক্ষেপ না থাকায় এ সমস্যা চলছে। সিটি করপোরেশন বলছে পুরোনো কিছু ভবন এরই মধ্যে ভেঙে ফেলা হয়েছে। বাকিগুলো ভাঙার জন্য তদন্ত কমিটি  গঠন করা হয়েছে।
 
সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, এরই মধ্যে আবার পরিত্যক্ত ভবনগুলোতে সংস্কার কাজ চালানো হচ্ছে। অনেক সরকারি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার অফিসের কাজ চলছে এসব পরিত্যক্ত ভবনে। সরকারের বিকল্প কোন ব্যবস্থা না থাকায় এসব পরিত্যক্ত ভবনগুলোতে কাজ চলছে বলে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, ১৩৫ বছরের পুরাতন নারায়নগঞ্জ পৌরসভা বিলুপ্ত করে প্রায় আট বছর আগে নারায়নগঞ্জ সিটি করপোরেশনে রূপান্তরিত হওয়ার পর এ পরিত্যাক্ত ভবন গুলো একাধিকবার ভেঙ্গে ফেলার জন্য নোটিশ দেয়া হয়।
 
সিটি করর্পোরেশনের  ১৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর অসিত বরণ বিশ্বাস জানান, ইতিমধ্যে কয়েকটি ভবন স্ব-উদ্যোগে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙ্গে ফেলার জন্য সিটি করপোরেশন ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। প্রাণহানি হয়ে কোন দুর্ঘটনা ঘটার আগেই সিটি করপোরেশন এ সব ঝুঁকিপূর্ণ ভবন গুলো ভেঙ্গে ফেলার ব্যবস্থা গ্রহন করবে বলে নগরবাসীর প্রত্যাশা।

এই বিভাগের আরো খবর