বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

দ্বন্দ্বের অবসানের সাথে কাজের স্বাধীনতা চান না’গঞ্জের ছাত্রনেতারা

প্রকাশিত: ৬ জুলাই ২০১৯  


স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : প্রায় ২৯ বছর পর আবার কাউন্সিলের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের কমিটি করার উদ্যোগ নেয় বিএনপি। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পেতে এবারই প্রথম বয়সের শর্ত যুক্ত করা হয়েছিল। এই শর্ত তুলে নেওয়ার দাবিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গত জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে সহিংস প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে আসছিল ছাত্রদলের বিক্ষুদ্ধ অংশ।

 

এর মধ্যে কার্যালয়ে ভাঙচুর, ডিম ছোড়া, তালা মারা, বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া, মারধর, হকিস্টিকের মহড়া, ককটেল নিক্ষেপের মতো ঘটনা ঘটেছে। আর কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সম্মেলন/কমিটি নিয়ে জটিলতা দ্রুততম সময়ের মধ্যে সমাধান করা উচিৎ। আর সেটা না পারলে জেলা ও মহানগরের আওতাধীন থানা-কলেজ-ওয়ার্ডগুলোর কমিটি ছাড়ার বিধিনিষেধ তুলে দেয়া প্রয়োজন বলে নারায়ণগঞ্জের ছাত্রদল নেতারা মনে করেন। তাদের মতে, কমিটি দেয়ার বিধিনিষেধ থাকার কারণে দায়িত্ব পাওয়ার পরও ছাত্রদল নেতারা ঠিকভাবে কাজ করতে পারছেননা। 

 

সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ মূল্যায়ন করে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি ও ছাত্রদলের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, বয়সসীমা তুলে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ হলেও এর পেছনে রয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ ও মধ্যম সারির কয়েকজন নেতা। তাঁরা ছাত্রদলকে দিয়ে দলে প্রভাব ধরে রাখতে সচেষ্ট। এ ছাড়া ছাত্রদলের একটি অংশের পদ-পদবির লোভ এবং তা ব্যবহার করে বিত্তবৈভব গড়ার প্রতিযোগিতাও রয়েছে। তবে ছাত্রদলের এবারের বিক্ষোভে নতুন মাত্রা হচ্ছে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তাঁর সঙ্গে অসদাচরণ করেন বিক্ষুদ্ধরা।

 

দলীয় সূত্র বলছে, গতমাসে এক বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রদলের মেয়াদোত্তীর্ণ কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত করে কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি করার  ঘোষণা দেওয়া হয়। নতুন কমিটিতে প্রার্থী হওয়ার বয়সসীমার বিষয়ে বলা হয়, ‘২০০০ সাল থেকে পরবর্তী যেকোনো বছরে এসএসসি/সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।’ ছাত্রদল বিএনপির ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন। বিএনপির চেয়ারপারসন ছাত্রদলের সাংগঠনিক প্রধান।

 

নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক আহবায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব বলেন, ‘২০০০ সালে এসএসসি পাস করা একজন ছাত্রের আনুমানিক বয়স ৩৫ বছর। ৩৫-৩৬ বছর বয়সে ছাত্রদল করা গেলে ৩৭-৩৮ বছর বয়সে কেন করা যাবে না?’ ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে বিক্ষোভের নেপথ্যে সব সময় দলের কোনো না কোনো নেতার ইন্ধন থাকে। ছাত্রদলকে নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্বাধীনে  রেখে দলে নিজেদের প্রভাব-বলয় বাড়ানোর চেষ্টা করেন তাঁরা। আমার মতে হুট করে বয়স নির্ধারণ করাটাই জটিলতা তৈরি করেছে। এছাড়া তিনি মনে করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের নেতৃত্ব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, কিংবা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মেধাবী তরুণদের হাতে থাকা উচিৎ। নাহলে আনকোরা এসএসসি পাশ ধারী ছাত্রনেতার নেতৃত্বে শীর্ষ বিদ্যাপীঠের সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারীরা নেতৃত্ব মেনে কাজ করাটা দুরুহ হয়ে যাবে।  

 

নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি শাহেদ আহমেদ বলেন, দেশের এক ক্রান্তিলগ্নে দায়িত্ব পেয়েছি (নারায়ণগঞ্জ মহানগরের) আমরা। কিন্তু সংগঠনের অভ্যন্তরীণ জটিলতার কারণে আমরা ব্যার্থতার দায়ভার নিতে রাজি না। আমরা বিভিন্ন ইউনিটের কমিটিগুলো দিতে আন্তরিকভাবে প্রস্তুত কিন্তু নিজেদের কেন্দ্রিয় বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে কমিটি করার এখতিয়ার আমাদেও নেই।তৃণমূলের সাথে আর কত অন্যায় আর কত হতাশার মাঝে ছেলেদের নিমজ্জিত করা হবে। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের জটিলতা দ্রুততম সময়ে নিষ্পত্তি চাই অথবা তৃণমূলের পরিচয় দেয়ার বিধিনিষেধ তুলে দেয়ার দাবি জানাই।

 

মহানগর ছাত্রদলের সাবেক আহবায়ক মনিরুল ইসলাম সজল বলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের নেতৃত্বে আসতে হলে যে বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে আমি তাকে সমর্থণ করি। এতে তরুণরা নেতৃত্বে আসার সুযোগ পাবে। একই সাথে জেলা ও মহানগরের বিভিন্ন ইউনিটের কমিটিগুলো করার ক্ষেত্রে যে বিধিনিষেধ দেয় দেয়া আছে সেগুলো তুলে দিলেই ছাত্রদল ও দলের জন্য মঙ্গলদায়ক হবে।

 

নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনি বলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের নেতৃত্বে আসার জন্য যে বয়সসীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে এটিকে পুরোপুরি সমর্থন করি। যেসব জটিলতা তৈরি হয়েছে সেগুলোও দ্রুত নিষ্পত্তি হয়ে যাবে বলে মনে করি। জেলা ও মহানগর ইউনিটের কমিটিগুলো করার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় যে বিধিনিষেধ রয়েছে সেগুলো তুলে দেয়ার প্রয়োজনীয়তা অনেক। কাউকে দায়িত্ব দেয়ার পর যদি হাত-পা বেঁধে দেয়া হয় তবে সেখানে কাজ করার অনেক দূরুহ হয়ে পড়ে। কাজ করতে পারলেই তো ভালো নেতৃত্ব গড়ে ওঠে। কাজ করার স্বাধীনতা দিতে হবে আর সেটি করতে পারলেই ভালো নেতৃত্ব বের হয়ে আসবে। 

 

প্রসঙ্গত, ১৯৭৯ সালের ১ জানুয়ারি সংগঠনের প্রতিষ্ঠার পর গত ৪০ বছরে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের ১৮টি কমিটি হয়েছে। ১৯৭৯ সালে প্রথম কমিটি ছিল নির্বাচিত। এতে এনামুল করিম সভাপতি ও আ ক ম গোলাম হোসেন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সর্বশেষ নির্বাচিত কমিটি হয় ১৯৯২ সালে। কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন যথাক্রমে রুহুল কবির রিজভী ও ইলিয়াস আলী। এই কমিটির দায়িত্বে থাকা অবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র খুনের ঘটনা ঘটে। এরপরই কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। তখন বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায়।

 

পরের বছর, ১৯৯৩ সালে ফজলুল হককে সভাপতি ও নাজিম উদ্দিন আলমকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়। সেই থেকে ছাত্রদলের অনির্বাচিত কমিটির যাত্রা শুরু হয়। সর্বশেষ ৩ জুন বিলুপ্ত করা রাজীব আহসান-আকরামুল হাসান কমিটি পর্যন্ত ১০টি কমিটিই ছিল অনির্বাচিত।
 

এই বিভাগের আরো খবর