মঙ্গলবার   ১৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ৫ ১৪৩০

দেড়যুগ পর আওয়ামী লীগের পাশে শামীম ওসমান

প্রকাশিত: ২২ মে ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : প্রায় দেড়যুগ পর বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন শামীম ওসমান। মঙ্গলবার বন্দর উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এমএ রশীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে রিটার্নিং কর্মকর্তা পিন্টু ব্যাপারীর কার্যালয়ে যান। এসময় জেলা ও মহানগরের সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠনের আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বন্দর উপজেলা নির্বাচনে প্রথমবারের মতো কোন সাংসদ আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পাশে কোন সাংসদ দাঁড়ালো। 

 

জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের দীর্ঘ দুই বছরের আন্দোলনের দাবি ছিলো নারায়ণগঞ্জ-৩ এবং নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনসহ জেলার সব আসনে নৌকার প্রার্থী দিতে হবে। জাতীয় নির্বাচনে সেটি করা না গেলেও উপজেলা নির্বাচনে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সেই দাবিতে সাড়া দিয়েছে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী সেটি অত্যন্ত স্পষ্ট। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই, সাধারণ সম্পাদক ভিপি বাদল, সিনিয়র সহসভাপতি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, মিজানুর রহমান বাচ্চু, আরজু রহমান ভূইয়া, আব্দুল কাদির, এড.আসাদুজ্জামান আসাদ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য এড.আনিসুর রহমান দিপু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, ইকবাল পারভেজ, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ান,মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা, যুগ্ম সম্পাদক জিএম আরমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদা মালা, জিএম আরাফাত, দপ্তর সম্পাদক এড.হাবীব আল মুজাহিদ পলুসহ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতাই গেলো দুই বছর নৌকার প্রার্থীর দাবিতে অনঢ় ছিলেন। উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী  বন্দর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রশীদও সেই দাবিতে বন্দর কাঁপিয়েছিলেন। তার সাথে বন্দর থানা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবেদ হোসেনসহ সর্বস্তরের আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ দুর্বার ঐক্য গড়ে তুলেছিলো। এমনকি নির্বাচনের আগে ইস্পাহানি এলাকায় এক সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান নওফেলও এসেছিলেন। সর্বশেষ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের ভরপুর কর্মসূচিতে প্রাণ ফিরে এসেছিলো বন্দরে। 

 

আওয়ামী লীগের তৃণমূল মনে করে, সেই দুর্বার দাবি আর কর্মসূচির প্রেক্ষিতেই এমএ রশীদকে মনোনয়ন দিয়েছেন সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বন্দর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ রশীদের মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার দিন জেলা ও মহানগরের সেক্রেটারি এবং আরজু ভূইয়াকে দেখা গেছে তার সঙ্গে। তবে নৌকার দাবিতে ঐক্য গড়ে তোলা জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা যেতে পারেননি। তবে এমএ রশীদ মনোনয়ন পাওয়ায় এবং সামনে কোন বাধা ছাড়াই জয়ের নিশ্চয়তা থাকায় মনে প্রাণে খুশির তরীতে ভাসছে জেলা, মহানগর ও তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ।  

 

তবে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা আরো একটি জায়গায় খুশি এমএ রশীদের মনোনয়নে। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমান এই প্রথমবারের মতো বন্দর উপজেলায় আওয়ামী লীগের কোন প্রার্থীর পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন। এরআগে কখনোই শামীম ওসমান কিংবা অন্য কোন এমপি উপজেলা কোন প্রার্থীর পাশে এভাবে সমর্থন দেননি। এমপি থাকা অবস্থায় কিংবা এরপরে কখনোই বন্দর আওয়ামী লীগের পাশে দাঁড়াননি শামীম ওসমান। 

 

জানা গেছে, ২০০৯ সালের ২২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হওয়া উপজেলা নির্বাচনেও প্রার্থী হয়েছিলেন এমএ রশীদ। তবে সেই নির্বাচনে সমর্থন জানাতে আসেননি শামীম ওসমান। সেই নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ট মহানগর বিএনপির সহসভাপতি ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল। মাত্র ১৪০০ ভোটের ব্যবধানে পরাজয় বরণ করতে হয়েছিলো এমএ রশীদকে। এবারের মতো সেই নির্বাচনেও যদি শামীম ওসমান কিংবা স্থানীয় সাংসদের সুনজর এমএ রশীদের ভাগ্যে জুটতো তবে সে যাত্রাতেও উতরে যেতেন রশীদ। কিন্তু সেটি তার ভাগ্যে জুটেনি। সেই নির্বাচনে তৃতীয় হয়েছিলেন বিএনপির আরেকপ্রার্থী হাজী নুরুউদ্দিন, চতুর্থ নুরুল ইসলাম চৌধুরী, রিক্সা প্রতীক নিয়ে পঞ্চম হয়েছিলেন নুরুল আলম এবং সর্বনি¤œ ভোট পান বাবুল ডালি। 

 

এরপর ২০১৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির উপজেলা নির্বাচনেও শামীম ওসমান কিংবা স্থানীয় কোন সাংসদের আশীর্বাদ কিংবা সমর্থন পাননি এমএ রশীদ। যার ফলশ্রুতিতে সেবারও পরাজয় বরণ করতে হয় তাকে। শুধু পরাজয়ই নয়, চারজন প্রার্থীর সবচেয়ে কম ভোট পেয়েছিলেন এম এ রশীদ। সেবার নির্বাচনে বেশি ভোট পেয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছিলেন ফের আতাউর রহমান মুকুল, দ্বিতীয় হয়েছিলেন জাতীয় পার্টির দেলোয়ার প্রধান, তৃতীয় হয়েছিলেন বর্তমান মদনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও বন্দর থানা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি আব্দুস সালাম এবং চতুর্থ হয়েছিলেন এমএ রশীদ। তখনও এমপি ছিলেন শামীম ওসমান। এবারের মতো সমর্থন পেলে তখনও উতরে যেতেন রশীদ এমনটাই মত নেতাকর্মীদের। 

 

নেতাকর্মীদের মতে, মূলত বন্দরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দিকে তাকিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ এমএ রশীদ ছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম আবু সুফিয়ান এবং মদনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমএ সালামের নাম সুপারিশ করে কেন্দ্রে পাঠায়। এমএ রশীদের নাম ঘোষণা করায় কোন রকম বিভেদ না তৈরি করে দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে আওয়ামী লীগের সকল ইউনিট একসাথে করার কথা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। কোন প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেনা এমন আভাস চারদিক থেকে পাওয়া যাচ্ছিল। বোঝা যাচ্ছিল এবার এমএ রশীদের কোন প্রতিদ্বন্দ্বি থাকছেনা। আর তা বুঝতে পেরেই শামীম ওসমান এমএ রশীদকে সমর্থন দিয়েছেন এতো হাকডাক তুলে। বিগত দিনে যদিও তিনি জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের ৫টি আসনে নৌকার দাবিতে পাশে ছিলেননা। 

 

নেতাকর্মীরা বলছেন, এটি অবশ্য একদিক থেকে ভালোই হয়েছে। প্রথমবারের মতো শামীম ওসমান উপজেলা নির্বাচনে বন্দরে কোন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। অবশ্য এবারও তিনি মুখ ফসকে বলে ফেলেছেন যে এবারের প্রার্থীও এমএ রশীদ ছিলেননা। রশীদের সামনেই তিনি বলেছেন, তার ক্যান্ডিডেট ছিল সালাম ও দেলোয়ার হোসেন। যার ফলে এটি পরিস্কার আওয়ামী লীগ সভানেত্রীই এমএ রশীদকে বন্দরের আওয়ামী লীগের দুর্দশা থেকে মুক্তির কান্ডারী হিসেবে নিযুক্ত করেছেন।

 

শামীম ওসমান নতুনভাবে জেলা, মহানগর ও বন্দর আওয়ামী লীগের পুরোনো দাবির সাথে একমত হয়েছেন এটিও বিশাল অর্জন। কারণ তৃণমূল নেতাকর্মীদের দাবি ছিলো, দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের এখানে কোন প্রতিনিধিত্ব না থাকায় এখানকার নেতাকর্মীরা  শোষিত, নির্যাতিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত, নিগৃহিত এবং নিষ্পেষিত। 
 

এই বিভাগের আরো খবর