বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

দুরদর্শী শামীম ওসমান

প্রকাশিত: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : একাদশ জাতীয় নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে। দলগুলো তাদের মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীদের তালিকাটি হালনাগাদ, যাচাই-বাঁছাইয়ের কাজ করছে। নির্বাচনের আগে নারায়ণগঞ্জে জনপ্রিয়তার তলানীতে থাকা ওসমান পরিবারের রাজনীতি আবারো শক্তিশালী হয়ে ওঠার আভাস দিয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে একক কৃতিত্ব ও নৈপূন্য, মেধার বিকাশ ও দুরদর্শীতার প্রমাণ দিচ্ছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমান।

নির্বাচনে নিজের প্রার্থীতা নিশ্চিত করতেই কাজ করেননি তিনি। একাধারে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনটিও যাতে তাঁদের পরিবারের আধিপত্য বজায় থাকে সেজন্য কাজ করে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে তাঁর বড়ভাই সেলিম ওসমানের সাফল্য তেমনটি না থাকলেও ভাইয়ের পক্ষে সেকাজটি নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন শামীম ওসমান। সেলিম ওসমান যেখানে পরাস্ত সেখানে শামীম ওসমান সফল হচ্ছেন। 

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর ব্যাপক জনপ্রিয়তায় কিছুতেই রাজনীতির মাঠে পাত্তা পাচ্ছিলো না শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমান। কয়েকদফা মেয়রের সাথে বসার চেষ্টা করেও পেরে ওঠেনি সেলিম ওসমান। কিন্তু তাঁতে ভিন্নপথে হাঁটেন শামীম ওসমান। নিজেদের রাজনীতির ভস্ম থেকে টেনে তুলতে কৌশলী ও দুরদর্শীতা পরিচয় দেন শামীম ওসমান। 

নাসিকের কাউন্সিলদের টার্গেট করে রাজনীতির মাঠে নতুনভাবে দুরদর্শীতার পরিচয় দিয়েছেন শামীম ওসমান। একের পর এক কাউন্সিলর শামীম ওসমানের আস্তানাতে যুক্ত হওয়াকে শামীম ওসমানের দুরদর্শী রাজনীতির বহিঃপ্রকাশ বলেই মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। 

সবশেষ শনিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি হাইস্কুল এন্ড কলেজের বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমানকে পায়ে ধরে সালাম করে ও হাতে ফুল দিয়ে আওয়ামীলীগে যোগ দেন নাসিক ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিল ইস্রাফিল প্রধান। 

ইস্রাফিল বিএনপির রাজনীতি করতে গিয়ে একাধিক মামলার আসামী হয়েছিলো। তাকে নৌকার সমর্থক বানিয়ে ভোটব্যাংক আওয়ামীলীগে যুক্ত করার মিশনেই শামীম ওসমান কাছে টেনে নিয়েছে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।  

শুধু বিএনপির জনপ্রিয় নেতাদেরই বশ্যিভূত করেনি শামীম ওসমান। ভোটব্যাংক আর জনসমর্থন আদায়ে চির বৈরী সম্পর্ক থাকা নাসিক ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ মতিউর রহমান মতি এবং এ ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর  সিরাজুল ইসলামকেও এক ঘাটে পানি খাইয়ে মিলিয়ে দিয়েছেন শামীম ওসমান। এদের দুজনের মধ্যে দা-কুমড়ো সম্পর্ক ছিলো। 

কয়েকদফা  এদের মধ্যে দুগ্রুপের দফায় দফায় মারামারি হয়। এদের কর্মী সমর্থকদের বাড়ি ঘরে হামলা হওয়ার ঘটনা ঘটে। শুধু তাই নয় একে অপরকে ঘায়েলের জন্য হত্যা মামলায় মিথ্যা আসামী করার মতোও ঘটনা ঘটেছে।

তবে সব কিছুকে উড়িয়ে দিয়ে ২৮ সেপ্টেম্বর এক ওয়াজমাহফিলে তাদের মধ্যে জাদুর ছোঁয়ায় সুসম্পর্ক তৈরী করে দিয়েছেন শামীম ওসমান। একসময় মতিউর রহমান মতি ইন্টারপোলের আসামী ছিলো। ইপিজেডের গার্মেন্টস ব্যবসা, তেল ডিপোকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ব্যবসা ও কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়া নিয়ে মতি ও সিরাজ মন্ডলের মধ্যে ব্যাপক আক্রমনাত্মক ও শত্রুভাবাপন্ন সম্পর্ক বিরাজ করছিলো। তবে তা অদৃশ্য শক্তির ছোয়ায় শামীম ওসমানের উপস্থিতিতে হঠাৎ উবে যায়।

তবে এখানেই শেষ নয়। শামীম ওসমান দুরদর্শীতার পরিচয় দিয়েছেন এর আগেও। কয়েকমাস পূর্বে সাবেক পৌর প্রশাসক মতিন প্রধান শামীম ওসমানের হাত ধরে নৌকায় যোগ দেন। 

শুধু নিজের আসনই নয়। আধিপত্য ধরে রাখতে নেপথ্যে থেকে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনেও কাজ করেছেন শামীম ওসমান বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। ৯ জুন নাসিক ২১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হান্নান সরকার ও ২২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সুলতান আহমেদকে এক মঞ্চস্থ করার নেপথ্যে কাজ করেছে শামীম ওসমানের দুরদর্শীতা। 

সবকিছু উপেক্ষা করে সেলিম ওসমানের হাত ধরার পেছনে কলকাঠি নাড়িয়েছেন মূলত শামীম ওসমান বলে মনে করেন রাজনৈতিক বোদ্ধারা।  ১২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শওকত হাসেম শকু, ১৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাজমুল আলম সজল, ১৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবু, ১১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জমসের আলী ঝন্টুসহ নাসিক কাউন্সিলরদের নগর ভবন থেকে গাঁটছাড়া করতে  শামীম ওসমানের দুরদর্শীতা কাজ করেছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। 

কেননা, শুধু একটি বা দুটি আসনই নয় জেলার পাঁচটি আসনে আওয়ামীলীগের মনোনয়নে প্রার্থী নির্বাচনে ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করবেন নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি হকার ইস্যুতে মেয়রের উপর হামলার ঘটনায় সমালোচিত হন শামীম ওসমান। আর হকার ইস্যুর সমাধানে আলোচনার দায়িত্বে থাকা সাংসদ সেলিম ওসমানও ব্যর্থতার পরিচয় দেন। 

উল্টো কয়েকদফা মেয়রকে আক্রমনাত্মক বক্তব্য দিয়ে সমালোচিত হন তিনি। নির্বাচনের আগে দুইটি আসনের রাজনীতিতে নিজেদের আধিপত্য নিশ্চিত করতে ভিন্ন কৌশলে হাটেন শামীম ওসমান। এতে তাঁর রাজনৈতিক দুরদর্শীতার পরিচয় পেয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।  

তবে রাজনৈতিক বোদ্ধাদের মতে,  নির্বাচনের আগে শামীম ওসমানের এসব কৌশল কোন কাজে আসবে না। কেননা নির্বাচনের ভরাডুবি কিংবা আওয়ামীলীগ বেকায়দায় পড়লে এসব দলছুট বা দ্বিধাগ্রস্থ নেতারা আবার স্বরুপে ফিরতে পারেন। তখন শুধু শামীম ওসমানই নন আওয়ামীলীগও বেকায়দায় পড়বে বলে মনে করেন তাঁরা। 

নিজ দলের হেভীওয়েট নেতাদের মনমালিন্যের বরফ যেখানে গলাতে পারছেন না শামীম ওসমান সেখানে এভাবে ভিন্ন দলের লোকেরা সজোরে আওয়ামীলীগে যোগ দেয়াকে সন্দেহের চোখেই দেখছেন তৃণমূল আওয়ামীলীগ কর্মীরা বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। 

তৃণমূল কর্মীদের ভাষ্য, তাঁরা দলে কাউয়া আর হাইব্রীড আওয়ামীলীগার চাননা কেননা এতে প্রকৃত আওয়ামীলীগ কর্মীরা নানাভাবে বঞ্চিত, নিপীড়িত, নিগৃহিত, নির্যাতিত হন। দলের ক্রান্তিকালে এসব হাইব্রীড নেতারাই দলের বারোটা বাজাবেন বলে মনে করেন তৃণমূল আওয়ামীলীগ নেতারা। দলের সাধারণ সম্পাদক এ বিষয়ে বেশ কয়েকবার সাবধান করেছেন। 

শুধু তাই নয় এমনকি ফতুল্লা ও ওসমানী স্টেডিয়ামে একাধিক কর্মীসভায় শামীম ওসমানও কয়েকবারই হাইব্রীড আর কাউয়া শকুনদের থেকে সাবধান থাকতে বলেছেন। এখন তাঁর হাত ধরেই ভিন্ন দলের নেতাকর্মীদের আওয়ামীলীগার হয়ে ওঠার ঘটনাগুলো সহজভাবে হজম করতে পারছেনা তৃণমূল কর্মীরা বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।  

এই বিভাগের আরো খবর