মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১০ ১৪৩১

‘দালির স্বপ্ন বাস্তব ও পরাবাস্তব’ শীর্ষক সেমিনার শুক্রবার

প্রকাশিত: ৭ জানুয়ারি ২০২০  

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি (যুগের চিন্তা ২৪) : নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের দ্বি-বার্ষিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে “দালির স্বপ্ন বাস্তব ও পরাবাস্তব” শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) বিকেল ৪ টায় জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগার মিলনায়তনে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।


সংগঠনের সভাপতি ভবানী শংকর রায়ের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন-প্রাবন্ধিক, শিল্পী রফিউর রাব্বি। প্রবন্ধের উপর আলোচনা করবেন, শিল্পসমালোচক অধ্যাপক মইনুদ্দিন খালেদ, শিল্পী ও শিল্পসমালোচক জাহিদ মুস্তাফা এবং নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ শিল্পী সামছুল আলম আজাদ। 


নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের পক্ষ থেকে সেমিনারে সকল সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক সংগঠনের সদস্যদের উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করেছেন সাধারণ সম্পাদক শাহীন মাহমুদ।


সালভাদর দালি বিশ শতকের অন্যতম বিস্ময়কর এক চিত্রশিল্পী। তিনি একাধারে চিত্রশিল্পী, ভাস্কর, লেখক, সমালোচক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে তিনি একজন চিত্রশিল্পী। চিত্রশিল্পে দালি পরাবাস্তবতার এমন এক ধারা তৈরি  করেন যা শিল্পকলার ইতিহাসে বিস্ময়কর। তিনি শিল্পে এমনি এক দিগন্ত উন্মোচন করলেন, যা একান্তই তাঁর নিজস্ব এবং নতুন। যার ঢেউ সমগ্র ইউরোপ ছাপিয়ে আমেরিকা ও প্রাচ্যভূমিতে এসে আছড়ে পড়ল। 


মাত্র তের বছর বয়সে তাঁর প্রথম একক চিত্র-প্রদর্শনী হয়। ১৯২২ সালে ১৮ বছর বয়সে মাদ্রিদের সান ফার্নান্দো আর্ট একাডেমিতে ভর্তি হন দালি। কিন্তু এখানে চিত্রকলা ও ভাস্কর্যের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তাঁর ভালো লাগে না। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি বলতে শুরু করেন, এই স্কুলে একজন শিক্ষক ছাড়া কেউই তাঁর শিক্ষক হওয়ার যোগ্য নন। তাঁর এমনি আচরণে একাডেমি কর্তৃপক্ষ এক বছরের মাথায়ই তাঁকে বহিষ্কার করেন। 


মাদ্রিদে গার্সিয়া লোরকা, বুনুয়েলসহ অনেকের সাথে ঐ সময় তাঁর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। এ সময় তাঁর স্বভাব ও আচরণে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। এক ধরনের বেপরোয়া ভাব প্রকাশ পেতে থাকে। তাঁর পোষাক-আশাকে অদ্ভুত ভিন্নতা ফুটে উঠে। বড় বড় চুল, লম্বা জুলফি, ভিন্ন ধরনের গোঁফ, ইংরেজদের পোষাকের আদলে পোষাক; এ সবই খুব অল্প দিনেই তাঁকে সাধারণের মাঝে আলাদাভাবে পরিচিত করে তোলে।তাঁর এ অদ্ভুত স্বভাব ও আচরণে অনেকেই আবার তাঁকে পছন্দ করতে শুরু করেন। সে সময়ে স্পেনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল কামিলিনিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি সমর্থন দিয়ে তাদের আন্দোলনের সাথে জড়িয়ে পড়েন দালি। অবশেষে কারাগারে যান।


কারামুক্ত হয়ে আবার ১৯২৬ সালে মাদ্রিদ আর্ট একাডেমিতে ফিরে আসেন। কিন্তু এবার পরীক্ষায় তিনি অংশ নিয়ে পরীক্ষার হলে শিক্ষকদের বলেন, দুঃখিত, এখানে উপস্থিত তিনজন শিক্ষকের চেয়ে নিজেকেই তিনি চিত্রকলায় অধিকতর যোগ্য মনে করেন। সুতরাং পরীক্ষা দিয়ে এ শিক্ষকদের দ্বারা নির্বাচিত হতে তিনি রাজি নন।এবার দালিকে একাডেমি থেকে পাকাপাকিভাবেই বহিষ্কার করা হলো।


নিউইয়র্কের পথে হাঁটার সময় দালি হাতে একটি ঘণ্টা রাখতেন। যখন বুঝতেন পথচারীরা তাঁর দিকে খুবএকটা মনোযোগ দিচ্ছেন না তখন ঘণ্টা বাজিয়ে দৃষ্টিআকর্ষণের চেষ্টা করতেন। সিগমুন ফ্রয়েড দালিকে দেখে বলেছিলেন, ‘স্পেনিয়দের মধ্যে এমন ফ্যান্টিক আর দেখিনি।’ ফ্রয়েডের সাথে একটি ঘটনা সম্পর্কে দালি লিখেছেন, ‘বিদায় নেয়ার আগে ভাবলাম, প্যারানয়া বা মস্তিষ্ক-বিকৃতি বিষয়ে প্রকাশিত আমার প্রবন্ধটি তাঁকে (ফ্রয়েড) দিই। যে ম্যাগাজিনটাতে তা ছাপা হয়েছিল তার পাতা খুলে তাঁকে বিনয়ের সাথে অনুরোধ করলাম তিনি যেন তা সময় পেলে পড়ে দেখেন। 


কিন্তু সংকলনটির দিকে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ না করে ফ্রয়েড আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। তাঁর আগ্রহ তৈরির জন্য আমি বললাম, লেখাটি কোনো পরাবাস্তববাদী চতুরতা নয় বরং অতি উচ্চাশাপূর্ণ একটি বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ। লেখাটির নাম পুনরাবৃত্তি করে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েও দিলাম। কিন্তু সম্পূর্ণ অমনোযোগী ফ্রয়েডের সামনে আমার গলা ক্রমশ উচ্চকণ্ঠ হয়ে আসছিল। 


আর তারপর আমার দিক থেকে তাঁর তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ পরিবর্তন করে পাশের স্তেফান জিভিগের দিকে তাকিয়ে মন্তব্য করলেন, “আমি এর আগে এরকম একজন আপাদমস্তক হিস্পানিকে দেখিনি। আস্ত পাগল”।’ তবে দালি তাঁর চিত্রকলার পাশাপাশি এমন অদ্ভুত স্বভাবের জন্য জনপ্রিয়ও ছিলেন। শিল্পী হিসেবে তিনি ছিলেন যেমন অসম্ভব প্রতিভাবান পাশাপাশি বিস্ময়কর ও অদ্ভুত স্বভাবের। তাঁর গোঁফ ছিল বিস্ময়কর। সরু, উপরে ওঠানো, শক্ত এবং বিভিন্নভাবে বাঁকানো।

এই বিভাগের আরো খবর