শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা হত্যা মামলায় মাহবুবুর রহমানের মৃত্যুদণ্ড

প্রকাশিত: ২৭ জুন ২০১৯  

ডেস্ক রিপোর্ট (যুগের চিন্তা ২৪) : মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা ও তার ছেলেসহ সাতজনকে হত্যার ঘটনায় টাঙ্গাইলের মো.মাহবুবুর রহমান রহমানের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছেন আদালত। 


বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো.শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ  ট্রাইব্যুনাল এ রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর সদস্যরা হলেন, বিচারপতি আমির হোসেন ও আবু আহমেদ জমাদার।


অভিযুক্ত মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে আটকে রেখে নির্যাতন, হত্যা, অপহরণ ও গণহত্যার তিনটি ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল। তার বিরুদ্ধে এ তিনটি অভিযোগই প্রমাণিত হয়েছে। তাই ট্রাইব্যুনাল এ রায় দেন।


আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত, তার সঙ্গে ছিলেন মো.মেখরেসুর রহমান রহমান বাদল, সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি, তাপস কান্তি বল ও জেসমিন সুলতানা চমন। অন্যদিকে, আসামিপক্ষে ছিলেন গাজি এমএইচ তামিম।


এর আগে রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউশন ও আসামি উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুনানি শেষে গত ২৪ এপ্রিল মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান (সিএভি) রাখেন। গত বছরের ২৮ মার্চ মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করার নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। আর গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি এই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল।


রণদা প্রসাদ সাহা হত্যায় অভিযুক্ত টাঙ্গাইলের মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে হত্যা, অপহরণ ও গণহত্যার তিনটি অভিযোগ আনা হয়। গত বছরের ২ নভেম্বর মাহবুবু রহমানের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধ তদন্ত সংস্থা। ২০১৬ সালের ১৮ এপ্রিল তদন্ত শুরু করে ২০১৭ সালের ২ নভেম্বর মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত সংস্থা। 


যুক্তি তর্ক শুনানি শেষে রানা দাশগুপ্ত বলেছিলেন, আসামির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি অভিযোগ এনেছিল প্রসিকিউশন। আমরা মনে করি সবকটি অভিযোগই আমরা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ এ মামলায় ১৩ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। যেসব সাক্ষ্য-প্রমাণ আমরা উপস্থাপন করেছি তাতে আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- চেয়েছি।


আসামিপক্ষের আইনজীবী গাজি এমএইচ তামিম বলেন, এ মামলায় যে কয়জন সাক্ষ্য দিয়েছেন তারা প্রত্যেকেই বলেছেন আরপি সাহা নিখোঁজ হয়েছেন। তাকে হত্যা করা হয়েছে এ কথা কোনো সাক্ষীই বলেননি। প্রসিকিউশনের একজন প্রত্যক্ষ সাক্ষী ছিলেন, তিনি ধরে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। আরপি সাহাকে তিনি চিনতেন না বলেছেন।


আসামি মাহবুবুর রহমানের বাবা আব্দুল ওয়াদুদ মুক্তিযুদ্ধের সময় মির্জাপুর শান্তি কমিটির সভাপতি ছিলেন। সে সময় মাহবুবুর রাহমান ও তার ভাই আব্দুল মান্নান রাজাকার বাহিনীতে ছিলেন। আসামি একসময় জামায়াতে ইসলামির সমর্থক ছিলেন। তিনি নির্দলীয়ভাবে তিনবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও প্রতিবারই পরাজিত হন।


রণদা প্রসাদ সাহার পৈতৃক নিবাস ছিল টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে। সেখানে তিনি একাধিক শিক্ষা ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। একসময় নারায়ণগঞ্জে পাটের ব্যবসায় নামেন রণদা প্রসাদ সাহা। থাকতেন নারায়ণগঞ্জের খানপুরের সিরাজদিখানে। সে বাড়ি থেকেই তাকে, তার ছেলে ও অন্যদের ধরে নিয়ে যান আসামি মাহবুবু রহমান ও তার সহযোগীরা।

এই বিভাগের আরো খবর