শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৫ ১৪৩১

দরদামের উর্ধ্বগতিতে দুর্বিসহ হয়ে উঠছে জীবনযাত্রা

প্রকাশিত: ১০ আগস্ট ২০১৮  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : চাল, শাকসবজিসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের অস্বাভাবিক হারে দাম বৃদ্ধির ফলে  সীমিত ও স্বল্প আয়ের মানুষের সাধ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। কখনও ঈদ, কখনও পুজা কোনো না কোনো অযুহাত দেখিয়ে প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। আর এ সকল নানা অযুহাতের দরদামের উর্ধ্বগতিতে দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে মানুষের জীবনযাত্রা। 

কথা হয় নারায়ণগঞ্জের দেওভোগের দাতা সড়ক বাসিন্দা চাকুরীজীবি আমিনুল্লাহ আমিনের সাথে। দেওভোগ কাঠের দোতলায় একটি পোশাক তৈরীর দোকানে কাটিংমাস্টার হিসেবে কর্মরত আছে।

তিনি জানান, একজন ব্যাক্তির বেতন যদি ২০ হাজার টাকা হয় আর এ টাকার মধ্যে শুধু মাত্র বাজার খরচই যদি  ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা চলে যায়। তাহলে ঘরভাড়া গ্যাস-বিদ্যুৎ বিলসহ ৯ হাজার টাকা আছে ছেলেমেয়েদের পড়াশুনার খরচ বাবদ মিলিয়ে আর কত টাকা থাকে হাতে। আপনিই বলুন। গত কয়েক বছরে কোরবানী ঈদ ছাড়া  গরুর মাংস কেনার সাহস যোগাতে পারি নাই। 

কথা হয় আরেকজন মুদি দোকান ব্যবসায়ী সাইদের সাথে। তিনি জানায়  গলাচিপায় একটি মুদি ঘরই তার ভরসা। প্রতিদিন খুব বেশি হলে বিক্রি ৫০০ টাকা আবার অন্যকোনো সময় ২০০টাকাও না। কিন্তু মাসে আমার ১৫ হাজার টাকার খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়া শুধু দোকান আর ঘর ভাড়াতেই লাগে। 

তাহলে খাবার খরচ কোথথেকে আসে? এমন প্রশ্নে সাইদ জানায়, কিছু বাকি,কিছু নগদ লইয়া ধার দেনা কইরা চলি। কিছু করার নাই বাঁচা লাগবো। এখন তো বাজারেও যাই না। বউরে দিয়া ভ্যান থাইকা বাজার করি। বাজারের যাইতে সাহস পাইনা। বাজরে যাওয়ার নাম শুনলেই বড় পোলা বড় মাছ বড় মাছ খাইবো বইল্লা কান্নাকাটি করে। শুধু আমিন বা সাইদ না এখন এ চিত্র সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষের ঘরে ঘরে। 

গত বছর ও চলতি বছরের শুধুমাত্র  শাক-সবজির দাম পর্যবেক্ষন করলে দেখা যাবে অতীতের সকল রেকর্ড ছাপিয়ে গেছে শাকসবজির ।  গত কয়েক মাস আগেও পোঁজের দাম ছিল ১০০ টাকা কেজি। কাঁচামরিচের দাম এখনও ১০০এর কোটায়। 

কিছু সবজির দাম কম থাকলেও বাজারের একই পরিস্থিতি। কখনও বাড়ছে আবার কখনও কমছে। কিন্তু দাম উর্ধ্বমুখীই রয়েছে। এ সপ্তাহেও বাজার দরের একই অবস্থা পরিলক্ষিত হয়েছে। সুষ্ঠু আইন ব্যবস্থা এবং আইনে বাস্তাবায়ন না হলে এ সমস্যা সমাধান সম্ভব  হবেনা বলে মনে করেন আমজনতা।

গত কয়েক সপ্তাহের ন্যায় এ সপ্তাহেও টমেটো, কাঁচা মরিচের দাম রয়েছে ১০০ এর কোটায়। তবে এ সপ্তাহে দাম বেড়েছে উস্তার। প্রতি কেজি উস্তা ৬০ -৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। শুক্রবার ( ১০ আগষ্ট) নারায়ণগঞ্জের দ্বীগুবাবু বাজার, মাসদাইর খুচরা বাজার, বৌ বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে এ সকল তথ্য জানা যায়।

এদিকে শীতের আগেই বাজারে চলে এসেছে শীতকালীন সবজি। এর মধ্যে শিম ফুলকপি বেশ পরিচিত সবজি। তবে এসকল সবজির দাম বেশ চওড়া। প্রতিকেজি  শিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৬০ টাকায়। শুধু সিম,ফুলকপি,উস্তা টমেটো কাঁচামরিচ নয় দাম বাড়তি রয়েছে পেঁয়াজ, বেগুন, করলা,কাকরোল,ঝিঙেসহ অধিকাংশ সবজির দামও।

সবজির দাম বাড়তি নিয়ে বিক্রেতারা বলছে, বাজারে নতুন সবজির আসলে দাম একটু বেশি থাকে। তাছাড়া আন্দোলন,পরিবহন ধর্মঘট সবমিলিয়ে অন্যান্য সবজির দামও বেড়েছে।

বাজার ঘুরে জানা যায়, এ সপ্তাহে কাঁচামরিচ ১০০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১১০ টাকা দরে। ফুলকপি আকারভেদে ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁকরোল ৫০ টাকা, পেঁপে ৩০-৪০ টাকা, ধনেপাতা ৬০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, শসা ৫০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০ টাকা, গাজর ৫০-৬০ টাকা,বরবটি ৪০টাকা,গাটি কচু ৫০-৬০ টাকা,মুলা ৪০টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
দ্বীগুবাবু বাজারের কয়েকজন সবজি বিক্রেতার সাথে কথা বলল তারা জানায়, গত কয়েকদিনের আন্দোলনের রেশ এখনও কাটেনি। তাছাড়া সামনে ঈদ তাই ঈদকে কেন্দ্র করে দাম একটু বেশি।

সবজি ব্যবসায়ী রাজু জানায়, বাজারে সবজি কম। আবার তো নতুন সবজি নামছে। তাই নতুন সবজির দাম বেশি। কিন্তু পুরান সবজির দাম আগের মতই আছে।

তবে এসকল কথা মানতে নারাজ ক্রেতারা জানায়, কোনো কিছুই না। নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাজার ব্যবস্থাপনা চলছে।  কোনো প্রকার আইন না মেনেই বাজাওে দ্রব্যের দাম বাড়াচ্ছে। সুষ্ঠু আইন ব্যবস্থা এবং আইনের বাস্তাবায়ন না হলে এ সমস্যা সমাধান হবেনা।

এদিকে গত সপ্তাহের মতই এ সপ্তাহেও আলু কেজি প্রতি ২০-২২টাকা এবং পাল¬া ১শ টাকা দওে বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজ কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা দরে। আর পাল্লা প্রতি ২২০- ২৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। 

অন্যদিকে মাছের বাজারেরও একই অবস্থা। ইলিশ কেজি প্রতি সাইজ আকারভেদে কিদ্রি হচ্ছে ৮০০-১১০০ টাকা দরে। চিংড়িমাছ ৬০০-৮০০টাকা দওে,গুড়া চিংড়ি ৪৫০-৫০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। শিং মাছ আকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৮০০ টাকার মধ্যে। পাঙ্গাস,রুই, কাতলা ২৫০-৩০০ টাকা কেজি, পোয়া মাছ ৩৫০-৪০০ টাকা, টেংরা মাছ ৬৫০ -৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

তবে অপরিবর্তিত রয়েছে সকল প্রকার মাংসের দাম। এ সপ্তাহেও মুরগী ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। লাল লেয়ার ১৯০-২১০টাকা। গরুর মাংস ৪৮০-৫০০টাকা, খাসির মাংস ৭০০ টাকা ও বরকির মাংস ৬০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। 
এদিকে ডিম আগের সপ্তাহের চেয়ে একটু কমে ১০০ টাকা ডজন বিক্রি হচ্ছে, যা আগের সপ্তাহে ছিল ১০৫-১১০ টাকা। 

অন্যদিকে ঈদুল ফিতরের আগে মসলার দাম বাড়ার পর এখন পর্যন্ত তা অপরিবর্তিত রয়েছে।  মসলার মধ্যে  কেজি এলাচি ১৮০০, জিরা ৪৫০ থেকে ৬০০, দারুচিনি ৩২০ থেকে ৩৫০, আলুবোখারা ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ময়দার দাম খোলা ৩৫, প্যাকেটজাত ৪৬ টাকা। আর আটা খোলা ৩৩ এবং প্যাকেটজাত কেজিপ্রতি ৩৫ টাকা। তেল লিটার প্রতি ৯৫-১০০ টাকা আর ৫কেজি ৫০০ -৫১০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
 

এই বিভাগের আরো খবর