বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ডাক্তার-স্বাস্থ্যকর্মী শূন্য হওয়ার আগে সমন্বিত সেবা চালু করতে হবে

প্রকাশিত: ৯ এপ্রিল ২০২০  

কোভিড-১৯ সারা বিশ্বে মহামারী আকার ধারণ করেছে। একদিকে যেমন সাধারণ মানুষ আক্রান্ত, অন্যদিকে যারা আক্রান্ত রুগীদের চিকিৎসা দিচ্ছে তারাও সমান হারে আক্রান্ত হচ্ছে।

 

কিছু দেশে এত আক্রান্ত হচ্ছে সেখানে চিকিৎসক সংকট দেখা দিয়েছে। আমাদের দেশে করোনা ভাইরাসের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন চলছে। ঠিক এই মুহূর্তে আমরা যদি সঠিক সমন্বিত সেবা চালু না করি তাহলে অল্প কিছু দিনের মধ্যেই আমাদের চিকিৎসকনার্স অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা সংক্রমিত হওয়ার মাধ্যমে আমাদের হাসপাতালগুলো ডাক্তার স্বাস্থ্যকর্মী শূন্য হয়ে পড়বে।

 

যদিও ইতিমধ্যে করোনা মোকাবেলায় সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।

 

করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় দুটি অংশ। একটি প্রিভেনটিভ বা প্রতিরোধ ব্যবস্থাযার মানে রোগটি যাতে না হয় সে ব্যবস্থা গ্রহণ। আর অন্যটি হচ্ছে সরাসরি করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রুগীর চিকিৎসা।

আর এই চিকিৎসার সাথে সরাসরি যুক্ত থাকে চিকিৎসক, নার্স সহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা।

 

 

তাই আজ যদি চিকিৎসক সহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা সুস্থ না থাকে তাহলে খুব বড় বির্পযয় নেমে আসবে। ইতিমধ্যে উল্লেখযোগ্য  চিকিৎসক সহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা সংক্রমিত হয়েছে।

 

প্রতিটি উপজেলায়, জেলায়,মেডিকেল কলেজে আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রায় সব হাসপাতালেই জ্বর, সর্দি,কাশি রুগীদের জন্য আলাদা আউটডোর সার্ভিস চালু করেছে।

 

আলাদা আউটডোর সার্ভিস চালু রাখাটা যুক্তি সংগত কিন্তু প্রতিটি হাসপাতালে আইসোলেশন সেন্টার তৈরী করাটা খুব একটা যুক্তিযুক্ত হয়নি। এতে সাধারণ রুগীদের স্বাস্থ্যসেবা ভীষণ ভাবে ব্যহত হবে এবং তদপুরি আমাদের দক্ষতার অভাবে ভাইরাসটি পুরো হাসপাতালে সংক্রমিত হতে পারে। সেক্ষেত্রে সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রতিটি জেলায় নির্দিষ্ট কিছু সরকারি হাসপাতাল/ বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক/অন্যান্য স্থাপনায় আইসোলেশন সেন্টার শুধুমাত্র কোভিড চিকিৎসাকেন্দ্র  স্থাপন করা যেতে পারে, যেখানে চিকিৎসক সহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা সেবা প্রদান করবে।

 

যে সমস্ত চিকিৎসক, নার্স অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা কোভিড চিকিৎসায় নিয়োজিত থাকবে তারা কয়েক সপ্তাহ নিজ বাসায় অবস্থান করতে পারবে না কারণ নিজ বাসায় অবস্থান করলে এই ভাইরাসটি তাদের মাধ্যমে পরিবারের অন্যান্যদের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে, তাই চিকিৎসক সহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী দের জন্য অস্থায়ী মানসম্পন্ন বাসস্থান, খাদ্য যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

যদিও WHO বলেছে সকলের PPE পড়বার প্রয়োজন নেই তবুও চিকিৎসক, নার্স,স্বাস্থ্যকর্মী, সাংবাদিক, প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ যাদের দীর্ঘক্ষন বাড়ির বাহিরে বিভিন্ন ধরনের লোকজন নিয়ে কাজ করতে হয় তাদের নিদেনপক্ষে বিশেষ মাস্ক ( N95, FFP-2) গগোজ পরিধান সতর্কতা অবলম্বন  করা উচিত।  কারন কোভিড পজিটিভ এক তৃতীয়াংশ রুগীর কোন উপসর্গ থাকে না কিন্তু সে রোগ সংক্রমিত করতে পারে।

 

আমরা ইতিমধ্যে PPE নিয়ে কিছু সমন্বয়হীনতা দেখেছি। বিশেষ মাস্কের পরিবর্তে নিম্নমানের মাস্ক সরবরাহ করে ভুল স্বীকার করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

 

পর্যাপ্ত সুরক্ষা সরঞ্জামাদি জেলার চিকিৎসক নের্তৃবৃন্দ, সাংবাদিক নের্তৃবৃন্দ, আইনজীবী নের্তৃবৃন্দ, জেলার বিশেষ নাগরিকদের সামনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দিতে হবে এবং তাদেরকে করোনা প্রতিরোধ কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

 

যদিও সরকার চিকিৎসকদের প্রনোদনার ঘোষণা করেছে, এর চেয়ে বড় বিষয় স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা, চিকিৎসা সেবা প্রদান কালীন সময়ে অস্থায়ী ভাল বাসস্থান, খাদ্য, চলাচলের জন্য গাড়ীর ব্যবস্থা করা।

 

রুগীর চিকিৎসা দিতে গিয়ে যে সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মী করোনা আক্রান্ত হবে,তাদের আর্থিক সাহায্য দিক বা না দিক, পুরষ্কৃত করুক বা নাই করুক অন্তত যারা এই মহত কাজে শাহাদাৎ বরন করবে তাদের পরিবারের জন্য অবশ্যই বড় অংকের আর্থিক সাহায্যের ব্যবস্থা করতে হবে।

 

ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে শুরু করে সকল ধরনের দূর্যোগের সময় চিকিৎসক ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। এই দূর্যোগের মূহুর্তেও চিকিৎসকরা নিজেদের প্রানের মায়া ত্যাগ করে ঝাপিয়ে পড়েছে এই মহামারী মোকাবিলায়। এখন তাদের জন্য দরকার এইটুকু প্রেরণা, ভালবাসা, বিশ্বাস আর জাতিরই প্রয়োজনে তাদের জন্য সুরক্ষার ব্যবস্থা।

মহান সৃষ্টিকর্তার করুনায় এবং আমাদের সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টায় এই অসম যুদ্ধে আমাদের জয় হবেই হবে।

 

এক নজরেঃ-

১।  সকল হাসপাতালে জ্বর, সর্দি, কাশি রুগীদের জন্য আলাদা আউটডোর সার্ভিস চালু করা, যা ইতিমধ্যেই অনেক জায়গায় চালু আছে।

 

২। সকল হাসপাতালে আইসোলেশন সেন্টার বাতিল করে নির্দিষ্ট হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা নিশ্চিত করা।

 

৩। করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য চিকিৎসা সেবা প্রদানকালীন সময়ে মানসম্পন্ন বাসস্থান, খাদ্য, যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

 

৪।পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী প্রদান এবং তা গ্রহনযোগ্য কমিটির মাধ্যমে সত্যতা যাচাই করা।

 

৫। শহীদ চিকিৎসক স্বাস্থ্যকর্মী দের পরিবারকে এককালীন বড় অংকের অর্থের ব্যবস্থা করা।

 

 

ডাঃ দেবাশীষ সাহা

জেনারেল সেক্রেটারি

বিএমএনারায়ণগঞ্জ

সহ-সভাপতি, স্বাচিপ, না:গঞ্জ

এই বিভাগের আরো খবর