বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

টেনশনে শামীম বাবু

প্রকাশিত: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : একটি পত্রিকার বরাত দিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রাথী নির্বাচনে আওয়ামী ৬৭ জনের তালিকাতে নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে শামীম ওসমান ও নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনে নজরুল ইসলাম বাবুর নাম রয়েছে। 

শামীম ওসমানের মনোনয়ন চূড়ান্ত আখ্যা দিয়ে  নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের বক্তব্য দুটোই  ভিত্তিহীন ও ভুয়া এবং অনধিকার চর্চা হিসেবে মন্তব্য করে দুটো প্রসঙ্গকেই বাতিল করে দিয়েছেন আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা এবং মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা। 

উল্টো পরোক্ষ হুশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন তাঁরা। ফলে আওয়ামীলীগের  মনোনয়ন টিকিট নিয়ে শামীম ওসমান এবং নজরুল ইসলাম বাবু ও তাঁদের কর্মী সমর্থকরা টেনশনে আছেন বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। 

সমসাময়িক আলোচনায় আসা মনোনয়ন তালিকার বিষয়ে আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য এবং মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, আওয়ামীলীগের মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য হয়েও এখনো বলতে পারছিনা কারা আগামীতে মনোনয়ন পাবে। 

যাদের কর্মকান্ডে দল তথা সরকার বিব্রত। এরকম ব্যক্তিরা কখনই মনোনয়ন পাবেনা। কোন বিতর্কিত ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেয়া হবেনা। মাঠ পর্যায়ের তৃণমূলের রিপোর্ট, গোয়েন্দাদের রিপোর্টসহ নানা বিষয় মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে বিবেচনায় আনা হবে। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামীলীগের মনোনয়ন বোর্ডের এই সদস্যর বক্তব্যে এটি অত্যন্ত স্পষ্ট। সেটি হচ্ছে বিতর্কিতরা মনোনয়ন পাচ্ছে না। সম্প্রতি হকার ইস্যুতে ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর উপর হামলার ঘটনায় শামীম ওসমান সমালোচিত হন। 

নানা কারণে তাঁর কারণে আওয়ামীলীগ সরকারের বেশিরভাগ সময়ই বিতর্কের মুখে ও বিব্রত অবস্থায় পড়ে। অকারণে তিনি প্রশাসনকেও তুলোধুনো করেছেন। দলের কেন্দ্রীয় নেতারা তাঁর উপর ক্ষুদ্ধ। তাই এবারের নির্বাচনে তাঁর মনোনয়ন না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। 

নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। সম্প্রতি আড়াইহাজার ও গোপালদী পৌরসভা নির্বাচনের প্রচারণা চালাতে গেলে জেলা আওয়ামীলীগের সদস্যদের প্রতি নজরুল ইসলাম আজাদের উপস্থিতিতে হামলার অভিযোগ করেন কমিটির সহসভাপতি মিজানুর রহমান বাচ্চু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল পারভেজ, জাহাঙ্গীর আলম ও সদস্য হ্যালো সরকার। 

এ ঘটনাতেও বিব্রত পরিস্থিতিতে পড়তে হয় আওয়ামীলীগকে। তাই এ দুই প্রার্থীকে অতো সহজে মনোনয়ন না দেয়ার সম্ভাবনাই বেশি। 

রাজনৈতিক বোদ্ধাদের মতে, নৌমন্ত্রী শামীম ওসমানকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করার পরপরই আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা ও স্থানীয় নেতারা তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে একেএম শামীম ওসমানের নাম চূড়ান্ত হয়েছে বলে নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের  দেওয়া তথ্যের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা কাউকে মনোনয়ন দেইনি। নির্বাচনে নতুন মুখ আসছে কি না- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, পুরাতন যত বাদ যাবে সেখানে নতুন আসবে।

এর ফলে বিতর্কিত শামীম ওসমান ও নজরুল ইসলাম বাবুর নাম কাটা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে আওয়ামীলীগের আরো দুই হেভীওয়েট প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হতে পারে। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে দেখা যেতে পারে জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শ্রমিক উন্নয়ন ও কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কাউসার আহমেদ পলাশকে। 

নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে বাবুর জায়গায় মনোনয়ন দেয়া হতে পারে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও যোগাযোগ বিষয়ক সম্পাদক এবং জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল পারভেজকে। ফলে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেতে টেনশনে রয়েছেন বর্তমান দুই এমপি। 

 রাজনৈতিক বোদ্ধারা বলছেন, শামীম ওসমানকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করায় যে শুধুমাত্র কেন্দ্রই তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে এমনটি নয়। স্থানীয় নেতৃবৃন্দও এর বিরোধিতা করেছেন। জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগ থেকে এরকম ঘোষণার বিরুদ্ধে কথা উঠেছিলো। 

জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই বলেন, অফিসিয়ালি ঘোষণার আগে আমাদের আগাম কোন কিছু বলা অবশ্যই ঠিক না। এগুলো বলার এখতিয়ারও আমরা রাখি না।

 জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ভিপি বাদল বলেন, মনোনয়ন বোর্ড আছে মনোনয়ন নিশ্চিত করার ব্যাপারে তাঁরা নির্ধারণ করবেন।
মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, দলীয় মনোনয়নের ব্যাপারে অগ্রীম বললে কর্মীদের একটি বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে যেতে হয়। 

মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা বলেন, মনোনয়নের ব্যাপারে কেউ নিশ্চয়তা দিতে পারেন না।
রাজনৈতিক বোদ্ধারা বলছেন, কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের সমর্থন না পেয়ে এখন বেকায়দায় রয়েছেন শামীম ওসমান ও নজরুল ইসলাম বাবু। তাঁরা মনোনয়ন পাওয়া না পাওয়া নিয়ে টেনশন কাজ  করছে তাদের নেতাকর্মীদের মাঝে। 
 

এই বিভাগের আরো খবর