শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

টানটান উত্তেজনার মধ্যে সোনারগাঁয়ে শোকসভা আজ

প্রকাশিত: ২৩ আগস্ট ২০১৯  

যুগের চিন্তা ২৪ : টানটান উত্তেজনার মধ্যে সোনারগাঁয়ে আজ সাবেক সাংসদ আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত ও সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালামের নেতৃত্বে দুটি দিবসকে উপলক্ষে শোকসভা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। 

 

অপরদিকে একটি সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ক্ষোভ কি করে প্রশমন করা যায় এবং কায়সার-কালামের ঐক্য নিয়ে গোপন বৈঠক করেছে সোনারগাঁ আওয়ামী লীগের তথাকথিত আহবায়ক কমিটি। 

 

সূত্র জানিয়েছে, দফায় দফায়  ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে গোঠন বৈঠক শেষে ১০ বছরের দ্বন্দ্ব ঘুঁচিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন কায়সার-কালাম। সিদ্ধান্ত হওয়ার পরপরই দুইজন একসাথে নেমে পড়েন পুরো উপজেলার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের এককাতারে নিয়ে আসার জন্য। 

 

শনিবার (২৪ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৩টায় ঐক্যবদ্ধভাবে মোগড়াপাড়া চৌরাস্তায় একটি ১৫ আগস্ট জাতীয় শোকদিবস ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা দিবস উপলক্ষে বিশাল শোকসভা করার সিদ্ধান্ত নেন। 

 

সেটি সফল করতে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে দুইজন ঐক্যবদ্ধভাবে ১০০ মাইক্রো ও হায়েস গাড়িভর্তি নেতাকর্মী নিয়ে কাঁচপুর, জামপুর, সাদিপুর, নোঁয়াগাও, বারদী, বৈদ্যেরবাজার ঘুরে রাতে পৌরসভায় গিয়ে পথসভা শেষ করেন। 

 

এসময় পথসভা থেকে কায়সার-কালাম-মোশারফের নামে নৌকার স্লোগান দেয় নেতাকর্মীরা। শনিবারের শোকসভাকে সবচাইতে বেশি গুরুত্ব দিয়ে শুক্রবার (২৩ আগস্ট) সকালে সোনারগাঁ সরকারী ডিগ্রী কলেজ মাঠে মোগরাপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের বর্ধিত সভায় ৯০০ নেতাকর্মী নিয়ে আবারো মিলিত হন কায়সার-কালাম। দুপুরে মধ্যাহ্ন ভোজ সারেন তারা একসাথে। 

 

এরআগে তারা দুজন সম্ভুপুরা, এলাহিনগর, মঙ্গলেরগাঁও, পৌরসভা এলাকায় পথসভা করে আসেন। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণবন্তভাব লক্ষ্য করা গেছে। তারা বলছেন, স্বাধীনতার পর খুব কম সময়ই সোনারগাঁয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঝে এমন ঐক্য দেখা গেছে। 

 

এটি শোকসভার পূর্বপ্রস্তুতি হলেও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের কাছে সোনারগাঁ আওয়ামী লীগ থেকে রাজাকারের সন্তানদের বিতাড়িত করা, সোনারগাঁ থেকে বহিরাগতদের ঈশারায় যেসব ভূমিদস্যু, চাঁদাবাজ, লুটেরা, অপশক্তি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গিলে খাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছিল তাদের বিতাড়িত করার শুভ সূচনা।  

 

বর্ধিতসভায় মাহফুজুর রহমান কালাম বলেন, অতীতে আমাদের মধ্যে কি হয়েছিল তা না ভেবে আগামী দিনে কি ভাবে সোনারগাঁয়ের নেতাকর্মীরাই আওয়ামীলীগের নেতৃত্ব দিবে সে চিন্তা মাথায় রেখে এগিয়ে যেতে হবে। যড়যন্ত্রকারীরা এখন আমাদের মধ্যে ঐক্য বিনষ্ট করার গভীর যড়যন্ত্র করছে। 

 

তাদের এ যড়যন্ত্রে আমরা পা না দিয়ে নিজেদের ঐক্য ধরে রাখার জন্য চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। আওয়ামী লীগকে জাতীয় পার্টি যেভাবে গিলে খাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। তথাকথিত সোনারগাঁ আওয়ামী লীগের আহবায়ক কমিটি দিয়ে এখানকার আওয়ামী লীগকে ধ্বংসের পায়তারা করছে। তাই ঐক্যের কোন বিকল্প নেই।  

 

কায়সার হাসনাত বলেন, নিজেদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল থাকায় একটি গোষ্ঠী ১০ বছর যাবত আমাদের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে সোনারগাঁয়ে রাম-রাজত্ব চালাচ্ছে। এভাবে চললে সোনারগাঁয়ে আওয়ামী লীগ একদিন নেতৃত্ব  শুন্য হয়ে পড়বে। এখন আমরা আমাদের ভুল বুঝতে পেরেছি। তাই আর দ্বন্দ্ব নয় এখন থেকে থাকবে ঐক্য এটাই আমাদের প্রত্যয় ।

 

এদিকে তথাকথিত আহবায়ক কমিটির নেতৃবৃন্দও সোনারগাঁ আওয়ামী লীগের ঐক্যবদ্ধ পরিস্থিতি কি করে মোকাবেলা করা যায় এনিয়ে একটি মিটিং করেছে বলে জানিয়েছে একটি সূত্র। 

 

সেই মিটিং এ আহবায়ক কমিটির আহবায়ক শামসুল ইসলাম ভূঁইয়া, যুগ্ম আহবায়ক পিরোজপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ডা.আবু জাফর চৌধুরী বীরু, নোয়াগাও ইউপি চেয়ারম্যান ইউসুফ দেওয়ান, সন্মানদি ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদ হাসান জিন্নাহ, বারদী ইউপি চেয়ারম্যান জহিরুল হক উপস্থিত ছিলেন। মিটিং হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন শামসুল ইসলাম ভূঁইয়া। 

 

একটি সূত্র জানিয়েছে, তথাকথিত আহবায়ক কমিটির মিটিংএ গত ১৬ জুলাই সোনারগাঁয়ে পুরনো কমিটি ভেঙে দিয়ে আহবায়ক কমিটি ঘোষণার পর জেলা আওয়ামী লীগ ও সোনারগাঁও আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের প্রতিক্রিয়া এবং ঢাকায় দলের সেক্রেটারি ওবায়দুল কাদের বরাবর ৪০ জনের স্বাক্ষরিত অভিযোগপত্র এবং কায়সার-কালামের ঐক্য ও শোকসভা আয়োজনের বিষয়টিই সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব পেয়েছে। 

 

উত্তেজিত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের এই রোষানল কিভাবে প্রশোমন করা যায় সেটি নিয়ে নানা কথাবার্তা হয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্র। মিটিং শেষে এক প্রতিক্রিয়ায় এড.শামসুল ইসলাম ভূঁইয়া শুধু এটুকু বলেন, ২৪ আগস্টের শোকসভার ব্যাপারে আমাদের কিছু জানানো হয়নি।

 

প্রসঙ্গত, গত ১৬ জুলাই কালামকে বাদ দিয়ে  সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি ভেঙে দিয়ে এড.শামসুল ইসলাম ভূঁইয়াকে আহবায়ক ও পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুমকে যুগ্ম আহবায়ক করে উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক কমিটি ঘোষণা দেয়ার পর সাংগঠনিকভাবে আরো দূর্বল হয়ে পড়েন কালাম। 

 

এটি বুঝতে পেরেই কায়সার হাসনাতের মতোই আন্দোলন ও প্রতিবাদে নেমে পড়ে কালাম। কায়সার হাসনাত আইভী ঘরনার রাজনীতিতে বিশ্বাসী। 

 

অপরদিকে কালাম ছিলেন শামীম ওসমানপন্থী। কিন্তু কালামকে বাদ দিয়ে আহবায়ক কমিটি করায় অস্তিত্বহীনতার সম্মুখীন হন তিনি। আর এতেই টনক নড়ে কালামের। তিনি বিষয়টি বুঝতে পেরে স্থানীয় কয়েকজন সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতার উপস্থিতিতে গোপন বৈঠকে ঐক্যবদ্ধ হন কায়সার হাসনাতের সাথে। 

 

যার ফলে কায়সার হাসনাত এবং মাহফুজুর রহমান কালাম দুইজনেই সেলিনা হায়াৎ আইভী ঘরনা রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হলেন।      
 

এই বিভাগের আরো খবর