শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

জেলায় করোনায় মৃত্যু হলে দাফন হবে মাসদাইরে : ডিসি

প্রকাশিত: ২৪ মার্চ ২০২০  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪): নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত জরুরি সভায় জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন বলেছেন, নারায়ণগঞ্জে কেউ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে তাকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের পৌর কবরস্থানে (মাসদাইর) দাফন করা হবে। পৌর এলাকার বাইরের কেউ হলেও সেখানেই দাফন করা হবে। কারণ সেখানে আমাদের এমনিতেই প্রস্তুতি আছে।  আইইডিসিআর ও ডব্লিইএইচও’র নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের কাজ করতে হবে। এব্যাপারে রেজ্যুলুশেন করার পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের সিওকে দেখভালের অনুরোধ জানান ডিসি।
মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) সকাল সাড়ে ১১টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এই প্রেসকনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়।

 

জেলা প্রশাসক মোঃ জসিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম, সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইমতিয়াজ আহমেদ, নাসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল আমিন, নারায়ণগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকির হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ ( ডিবি ) মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।

 

এছাড়া জেলা প্রশাসক উপজেলা পর্যায়ে অনুযায়ী যদি আইসোলেশনের জন্য ইউনিট বাড়ানোর প্রয়োজন হয় তাহলে পৌরসভা, সিটি  করপোরেশন,হাসপাতালগুলোর আশেপাশে বড় বড় যে ভবন,স্কুল রয়েছে সেখানে ব্যবস্থা করার জন্য এ ব্যাপারে গণপূর্ত বিভাগকে সাহায্যে অনুরোধ করেন। পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন জায়গায় হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করুন।

 

জেলা প্রশাসক উপস্থিত সবাই বলেন, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ ও মোকাবেলায় অর্থমন্ত্রণালয় হতে প্রতিটি বিভাগে অর্থায়নের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে সেটার যাতে অপব্যবহার না হয়। যদি কোনো সার্পোট লাগে সেটার জন্য তাহলে বলবেন।

 

জেলা প্রশাসক তথ্য আদান-প্রদানে সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশনা দিয়ে বলেন, আমাদের কাছ থেকে যাতে সঠিক তথ্য প্রকাশ করা হয়। তথ্য আদান প্রদানে যাতে কোনো ভেরিয়েশন না থাকে। এতে করে সাংবাদিকদের মাঝে এক ধরণের বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। তারা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে এবং আমাদের সাহায্যে করছে। তাদের গঠনমূলকভাবে তথ্য দেয়া আমাদের দায়িত্ব। পাশাপাশি ফোনকলও রিসিভ করতে হবে।

 

সেনাবাহিনীর অবস্থান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সেনাবাহিনী ইতিমধ্যেই পৌঁছে গেছে। প্রতিটি উপজেলায় একটি করে টিম থাকবে। তারা ইতিমধ্যেই উপজেলাগুলোতে পৌঁছে গেছে। তারা মূলত তিনটি বিষয়ে বিশেষভাবে কাজ করবে-বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের কোয়ান্টোইনে থাকার জন্য বাধ্যতামূলক, কোয়ারেন্টানে না গেলে শাস্তির ব্যবস্থা ও বাজার মনিটরিং এ জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের সহযোগীতায় তারা কাজ করবে। তাদের কার্যক্রম ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে।
চিকিৎসকদের সুরক্ষায় পিপিই প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক বলেন, ইতিমধ্যেই পিপিই পর্যাপ্ত পরিমাণ পিপিই তারা পেয়ে গেছে। প্রয়োজন অনুযায়ী আরো প্রদান করা হবে।

 

দুঃস্থ পরিবারগুলোকে খাদ্য সরবরাহ দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটার নির্দেশনা রয়েছে। পরিস্থিতি বুঝে বুঝে দেয়া হবে। যারা একেবারই খাবারবিহীন থাকবে তাদের কাছে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করবো। পাশাপাশি সমাজের ধনী বিত্তবানদের কাছে অনুরোধ তারাও যাতে তাদের আশেপাশে গরীব-দুঃস্থ প্রতিবেশীদের এ বিষয়গুলোতে সাহায্যে করবেন।

 

প্রবাসী চিহ্নিতকরণ বিষয়ে তিনি আরো বলেন, প্রবাসী চিহ্নিত করার জন্য বিষয়গুলো উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটিগুলোতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।এছাড়া করোনা আক্রান্ত এবং সন্দেহজনক চিহ্নিত বাড়িগুলোতে নোটিশ টানিয়ে দেয়া হয়েছে।

 

সভায় জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজ বলেছেন,  করোনা ভাইরাসে যদি কারো মৃত্যু হয় তাহলে আমরা  তাঁর দাফনের কিভাবে করব সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। আমরা আইইডিসিআর নীতিমালা অনুযায়ী আমরা দাফন করবো। আমাদের কাছে গত বৃহস্পতিবার ১২০টি পিপিই (পার্সনাল প্রটেকশন ইক্যুইপমেন্ট) এসেছে।

 

তিনি আরো বলেন, কালীবাজার পুরান কোর্ট এলাকায় চীফ ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট ভবনে আমরা ১০০ শয্যা বিশিষ্ট একটি  কোয়ারেন্টাইন সেলের ব্যবস্থা করেছি এবং প্রতিটি উপজেলায় ৫ শয্যা করে আইসোলেশন ইউনিট ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আজকে উপজেলা কমিটিগুলো সাথে কথা হয়েছে  ইউনিটগুলো ১০ শয্যায় রূপান্তর করা যায় কিনা। পাশাপাশি এর বিকল্প কোনো ভবন থাকলে সেখানেও যাতে  কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেশনের ব্যবস্থার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
জেলা সিভিল সার্জন ডা.মোহাম্মদ ইমতিয়াজ বলেন, গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে ৩৮ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে। এ নিয়ে বর্তমানে হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে মোট ১৮৬ জন। তারা সকলেই প্রবাসী।  গত ২৪ ঘন্টায় হোম কোয়ারেন্টাইন থেকে রিলিজ দেয়া হয়েছে ১৪ জনকে। নারায়ণগঞ্জে এ পর্যন্ত  ৫৯৬৮ বিদেশ থেকে এসেছেন।

 

এই সভার পরপরই জেলায় বিভিন্ন সড়কে টহলে নামে সেনাবাহিনীর সদস্যরা।

এই বিভাগের আরো খবর