শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

জেলা জুড়ে পলিথিনের অবাধ ব্যবহার, স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে সাধারন মানুষ

প্রকাশিত: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ১৪ মে ২০১৮

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪ ডটকম) : জেলা জুড়ে পলিথিনের অবাধ ব্যবহার ও উৎপাদন দিনে দিনে ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেখানেই চোখ যায় পলিথিনের ব্যবহার সর্বত্র দেখা যায়। বিষাক্ত ধোঁয়া তৈরী করা এই পলিথিন যত্রতত্র খোলাপরিবেশে পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে।

এতে করে পরিবেশ যেমন দূষিত হচ্ছে তেমনি জেলার বাসিন্দাদের মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলেছে। কিন্তু গণমানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলা এবং পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী এ পলিথিনের অবাধ ব্যবহার রোধে গৃহীত পদক্ষেপ অত্যন্ত সীমিত। মানুষের থাইরয়েড হরমোনের অতিরিক্ত ক্ষরণের জন্য পলিথিন পরোক্ষভাবে দায়ী। শুধুমাত্র মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতিই নয় উদ্ভিদ বা জলজ প্রাণী নয়, এ পলিথিনের কারণে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পুরো জেলার চারপাশে যে কয়টি নদী রয়েছে সেখানকার জীববৈচিত্র্যের ধ্বংসের অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে এ পলিথিনের ব্যবহার। তাছাড়া এলাকাগুলোতে ড্রেনেজের প্রতিবন্ধকতা তৈরীর অন্যতম কারণ এ পলিথিন। পুকুর-ডোবা-খাল বিলও পলিথিনে ভরপুর। ফলে মৎস্য চাষে ভালো করতে পারছে না ব্যবসায়ীরা।

পলিথিন অপচনশীল হওয়ায় জেলায় যতটুকু কৃষি জমি আছে সেখানেও মাটির উর্বরতা নষ্টের জন্য দায়ী এ পলিথিন। ফলে আশানুরূপ ফসল ঘরে তুলতে পারছেন না চাষীরা। এছাড়া এ পলিথিনের অবাধ ব্যবহারের কারণে পাটশিল্পের নগরী প্রাচ্যের ড্যান্ডি হিসেবে খ্যাত নারায়ণগঞ্জে পাটের তৈরী ব্যাগের ব্যবহার নেই বললেই চলে। প্রশাসন মোবাইল কোর্ট পরিচালনার কথা বললেও বন্ধ করা যাচ্ছে না পলিথিনের অবাধ ব্যবহার। কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, পলিথিনের চাহিদার যোগান দিতে নারায়ণগঞ্জ জেলায় বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে পলিথিন কারখানা।

নারায়ণগঞ্জ জেলায় কাশিপুর, কিল্লার পুল, আলছাবা, হাটখোলা, শহীদনগর ও আলআমিন নগরসহ আশে-পাশে এলাকায় পলিথিনের কারখানাগুলোতে বীরের ন্যায় কেউ রাতে, কেউ দিনে লক্ষ লক্ষ পলিথিন উৎপাদন করছে । এ কারখানাগুলোতে পলিথিনের অবাধ উৎপাদন জেনেও প্রশাসন জেনো চোখ বুঁজে রয়েছে। মনে হয় এগুলো দেখার কেউ নেই। নারায়ণগঞ্জ জেলার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, পলিথিনের ব্যবহারে ফলে মাটির উর্বরতা থেকে শুরু করে, উদ্ভিদকূল, জলজ প্রাণী মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। পলিথিনের বর্জ্যে এ সকল প্রাণীর বাসস্থান, খাদ্য সংগ্রেহের স্থান ও উদ্ভিদের খাদ্য গ্রহণের পথে বাঁধার সৃষ্টি করে।

শুধুমাত্র উদ্ভিদ বা জলজ প্রাণী নয়, মানুষ স্বাস্থ্যও পলিথিনের কারণে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ৷ থাইরয়েড হরমোনের অতিরিক্ত ক্ষরণের জন্য পলিথিন পরোক্ষভাবে দায়ী৷ পলিথিন পরিবেশে বর্জ্যের আকার নেয় ৷ পলিথিনে এমন এক রাসায়নিক পদার্থ যা পরিবেশে পচঁতে প্রচুর সময় লাগে ৷ তাই একে “অপচ্য পদার্থ” হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়। পলিথিন বর্জ্য পরিবেশে দীর্ঘস্থয়ী ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করে। এবং মানুষের অসচেতনতাই পলিথিন দূষণের প্রধান কারণ। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ২০১৭ সালে ১৫টি ভ্রাম্যবান আদালত পরিচালনা করা হয়েছিল । তাদের জরিমানা করা হয় ২ লাখ ৮৬ হাজার, ৫’শ টাকা । এই বছর এখনো ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালিত হয়নি। আগে দেখা যেতো পাটের থলে বা বাঁশ-বেতের ডোলা হাতে নিয়ে বাজারে যাচ্ছেন । এ দৃশ্যটি এখন আর দেখা যায় না। কয়েক দশক আগেও শহরে কিংবা গ্রামে বাজারে যাওয়া বা বাজার নিয়ে বাড়ি ফেরার এ দৃশ্যটি ছিল খুব সাধারণ।

বর্তমানে বাজারে এসেছে থার্মোপ¬াস্টিক জাতীয় পদার্থ দিয়ে প্রস্তুত, ওজনে হালকা, সহজে বহনযোগ্য ও দামে সস্তা পলিব্যাগ বলেন ফেরদৌস আনোয়ার। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ২০০২ সালে পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। সেই আইনে আমরা প্রতিদিন ২টি করে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি। সিভিল সার্জন এহসানুল হক বলেন, পলিথিন জলাবদ্ধতা সৃষ্টি’র অন্যতম প্রধান কারণ। এটি মাটির উর্বরতা নষ্ট করে। প¬লিথিন কয়েক শত বছর মাটির নিচে থাকলেও তা পঁেচও নষ্ট হয় না। পলিথিন ওয়ান টাইম ইউজ হিসেবে বেশি ব্যবহৃত হয়। পলিথিন অনবায়নযোগ্য এবং জলজ ও নদী, পুকুর, খাল, বিল এর ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি সাধন পূর্বক পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় ঘটায়। ফ্রিজে বেশি দিন মাছ, মাংস, ইত্যাদি পলিথিনে থাকলে স্বাস্থ্যহানি হওয়ার সম্ভবনা থাকে।

এই বিভাগের আরো খবর