বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

‘জীবনের এ পর্বে গোর্কির সাহিত্য যেন বিপ্লবীদের ইস্তেহার হয়ে যায়’

প্রকাশিত: ২২ নভেম্বর ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : ‘১৮৯৮ সালে গোর্কির প্রথম গল্পসমগ্র প্রকাশিত হলে তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র রাশিয়ায়।এ সময় গোর্কির লেখার বিষয়বস্তু ভাবিয়ে তোলে রাশিয়ার জার সম্রাজ্যের পুলিশকে। গোপন দলে গোর্কি নিজেকে আরও প্রকাশ করেন। এতোদিন যা গোপন চিল তা প্রকাশ্যে আসে ১৯০১ সালে। জীবনে এ পর্বে এসে গের্কির সাহিত্য যেন বিপ্লবীদের ইস্তেহার হয়ে যায়।’ ঠিক এভাবেই দর্শকের সামনে রুশ সাহিত্য তথা বিশ্ব সাহিত্যের আলোচিত নাম ম্যাক্সিম গোর্কিকে সেমিনারে উত্থাপন করেন প্রবন্ধকার রহমান সিদ্দিক।


নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সেমিনার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ‘বলশেভিক সম্বাদ ও গোর্কি-লেনিন দ্বন্দ্ব’ শিরোনামে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়।শুক্রবার (২২ নভেম্বর) সকাল ১০ টায় ধাবমান সাহিত্য আন্দোলন, নারায়ণগঞ্জের উদ্যোগে শহরের আলী আহম্মদ নগর পাঠাগার ও মিলনায়তনের পঞ্চম তলার পরীক্ষণ হলে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। 


ভোলগার তীরে ছোট্ট শহর নিজনি নভগোরদে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে ১৮৬৮ সালে ১৬ মার্চে আলেক্সেই ম্যাক্সিমোভিচ পেশকভের (পরবর্তীকালে নাম পরিবর্তন করে রাখেন ম্যাক্সিম গোর্কি) জন্ম থেকে শুরু করে ১৯৩৬ সালের ১৮ জুন হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু পর্যন্ত; এর মাঝে দুইবার আত্মহত্যা করতে চেয়েও বেঁচে যাওয়াসহ তাঁর জীবন ও কর্ম উঠে আসে এ প্রবন্ধে। 


পাচঁ বছর বয়সে ম্যাক্সিম গোর্কির বাবা মারা যাওয়ার পর তিনি চলে যান তার মায়ের পিত্রালয় নিজনিতে। এরপর ১১ বছর বয়সে তার মা মারা যাওয়ার পরে তার নানা যখন বলেন, ‘এবার তোমার দুনিয়ার ঘটে বেরুবার সময় হয়েছে...’ তখন দুনিয়া দেখতে বাড়ি ছাড়েন তিনি।


এরপর বিচিত্র ধরনের মানুষের সাথে তার পরিচয় হওয়া, মুটে মজুর, নৌকার গুণ টানা, রান্না ঘরের কাজ করা থেকে শুরু করে রুটির দোকানে কাজ করার ইতিহাস উঠে আসে এ প্রবন্ধে। তারপর এক সময় জাহাজের এক ক্যাপ্টেনের সাথে পরিচয়ের পর, তার বাইবেল থেকে শুরু করে ক্লাসিক সাহিত্য পর্যন্ত পড়া এবং এক সময় শিক্ষিত হওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না হতে পেরে শিক্ষিত হওয়াকে জলাঞ্জলি দেয়ার তথ্য উত্থাপিত হয় এ প্রবন্ধে। ১৯০৭ সালে লন্ডনে লেনিনের সঙ্গে গোর্কির প্রথম দেখা হওয়ার পর ‘গোর্কি লেনিনের দিনগুলো’ উঠে  আসে এ প্রবন্ধে।


সংগঠনের সম্পাদক কবি কাজল কাননের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল বক্তব্য উত্থাপন করেন, রহমান সিদ্দিক।আলোচনা করেন-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি, বাসদ নেতা রাজেকুজ্জামান রতন, সংস্কৃতিকর্মী ধীমান সাহা জুয়েল এবং গণমাধ্যম কর্মী মিলটন আনোয়ার।


প্রবন্ধের উপর আলোচনা করতে গিয়ে আলোচকবৃন্দ বলেন, গোর্কি কেবল রাশিয়ার নন, সারা পৃথিবীর। তাকে আমরা কীভবি পেলাম, আমাদের সাহিত্যে গোর্কির কী প্রভাব আছে তা আমাদের জানা দরকার। এ দিকটির বিশ্লেষণ প্রবন্ধকার করেননি। তাছাড়া তার যে বিখ্যাত ত্রয়ী উপন্যাস রয়েছে সেগুলোর কিছুটা আলোচনায় থাকলে ভালো হত।


আলোচকবৃন্দ প্রবন্ধকার রহমান সিদ্দিককে ধন্যবাদ জানিয়ে আরও বলেন, এ প্রন্ধের মাধ্যমে গোর্কি লেনিনের মতভিন্নতা সর্ম্পকে আমরা জেনেছি। দ্বন্দ্ব থাকবেই কিন্তু সে বিষয়টা আমরা কীভাবে দেখছি, গোর্কি আমাদের কীভাবে প্রভাবিত করছেন সেটাই আমাদের বিষয়।


সৌরি ছোঁয়ার সঞ্চালনায় সেমিনারে মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ভবানী শংকর রায়, সমাজ অনুশীলন কেন্দ্রের জেলা সভাপতি মো. জাকির হোসেন প্রমুখ।


এ সময় উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, বাসদের জেলা সমন্বয়ক নিখিল দাস, নাসিক ১৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর অসীত বরণ বিশ্বাস, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি প্রদীপ ঘোষ বাবু, সহসভাপতি মনি সুপান্থ, সাধারণ সম্পাদক শাহীন মাহমুদ, যুগ্ম সম্পাদক সাইফুল আলম নান্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক সুমিত রায়, প্রচার ও দপ্তর সম্পাদক অভি জাহিদ, সমগীতের কেন্দ্রীয় সভাপতি অমল আকাশ, শ্রুতি সাংস্কৃতিক একাডেমির উপপরিচারক উজ্জ্বল উচ্ছ্বাস, চেঞ্জেস স্কুলের অধ্যক্ষ মাহবুব সাদিক, শ্রমিক নেতা অঞ্জন দাস, প্রথম আলো বন্ধুসভা নারায়ণগঞ্জের সাবেক সভাপতি রাসেল আদিত্য, উপ সাংগঠনিক সম্পাদক মিরাজ রেজাসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক সংগঠনের সদস্যবৃন্দ।

এই বিভাগের আরো খবর