বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

জালকুড়ি-পাগলা বাজার সড়কে যানজট নিরসন কর্মীর চাঁদাবাজিতে যানজট

প্রকাশিত: ১৩ জুলাই ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : জালকুড়ি-পাগলা বাজার সড়কের যানজট মানুষের জন্য অতি মাত্রার দূর্ভোগের কারণ হয়ে উঠেছে। যানজট নিরসনে রয়েছে পুলিশ কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত যানজট নিরসন কর্মী। 


কিন্তু প্রকাশ্যে চলছে তাদের চাঁদাবাজি। যানজট নিরসনে এসকল কর্মীদের কাজে অধিকতর যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এক কথায় তারা রক্ষকের নামে ভক্ষকের কাজ করছে।


জালকুড়ি-পাগলা বাজার সড়কটি একমুখী সড়ক। পাগলা থেকে রিক্সা, অটোরিক্সা প্রবেশের নিয়ম থাকলেও ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান কিংবা ভারী যানবাহনের এই সড়কে প্রবেশ নিষেধ। উল্টা পথে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান প্রবেশ নিষেধ থাকলেও কমিউনিটি পুলিশ বেআইনী ভাবে টাকা নিয়ে সড়কে ঢুকাচ্ছে। ব্যাপকভাবে চলছে চাঁদাবাজি ।  


সরজমিনে দেখা যায়, ফতুল্লার পাগলা বাজার এলাকায় হাজী ইউনুস সুপার মার্কেট এর সামনে ৪ জন লোক যানজট নিরসনে কাজ করছে। তাদের পরনে হলুদ পোষাকের পিছনে লেখা রয়েছে পুলিশি জনতা জনতাই পুলিশ, ফতুল্লা মডেল থানা, নারায়ণগঞ্জ। 


তাদের যানজটের নিরসনের দায়িত্ব দেওয়া হলেও অর্থের লোভে তারাই যানজট সৃষ্টি করছে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ হাইওয়ে থেকে ভারী যানবাহন পাগলা বাজার হয়ে সরু সড়কে প্রবেশ করে। দুই দিক থেকে ভারী যানবাহন এক সাথে চলাচলের সময় যানজট সৃষ্টি হয়। ফলে ২০ মিনিটের সড়কটিতে চলাচলে যাত্রীদের সময় ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।


হাজী ইউনুস সুপার মার্কেটের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন দোকানী এই প্রসঙ্গে যুগের চিন্তা ২৪ কে বলেন, আসলে  সবাই চালাক। ওনারা (কমিউনিটি পুলিশ) যানজট না লাগে এই দায়িত্ব পুলিশ তাদের দেয়। ওনারা টাকা খাইয়া যানজট লাগায়। আরেক দিকে ড্রাইবাররা অন্যরাস্তা দিয়ে গেলে টোলের বেশি টাকা দেওয়া লাগে। এই জায়গায় ১০/২০ টাকা দিয়ে পার পাইয়া যায়। বড় গাড়ি ঢুকলেই যানজট লাগে।  


অটোরিক্সা ড্রাইবার কাশেম বলেন, উল্টাপথে পাগলা থেকে টাকা নিয়া গাড়ি ঢুকায়। আবার জালকুড়ি থেকে যেই বড় গাড়ি গুলা আসে ওই গুলার থেকেও টাকা নেয়। ড্রাইভাররা তো জানে না নিয়ম কি। নিয়মের নামে সবার থেকেই টাকা নেয় এরা। পুলিশের লোকে গো সাথে কথা না বাড়াইয়া সবাই টাকা দিয়া দেয়।  


ভুক্তভোগী নীলা রানী দাস বলেন, এই রোডে বইসা থাকতেই হইবো। সকালে আর বিকালে এমন জ্যামে পড়ি অনেক লেট হয়ে যায়। প্রায় সময়ই অর্ধেক রাস্তা পর্যন্ত গেলে হাঁটা শুরু করি। একবার জ্যামে পড়লে দুই-আড়াইঘন্টা লাগে জ্যাম ছুটতে। কতক্ষন আর বইসা থাকা যায়।


জানা যায় ফতুল্লা মডেল থানা থেকে যানজট নিরসনে যানজট কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। ফতুল্লা মডেল থানা থেকে তাদেরকে দিন মজুরি দিবে। কিন্তু তারা থানা থেকে কোন মুজুরি পায় না। 


৬ জন যানজট নিরসনকারীর একজন আসলাম। তিনি রসুলপুরে বসবাস করেন। তিনি বলেন, আমরা এই রাস্তায় ৪ জন কাজ করি। তিনি বলেন, টাকা উঠাইয়া প্রতিদিন ৫০০ টাকা কামাই।


অপর আরেকজন যানজট নিরসনকারী সেলিম বলেন, পাগলা বাজার সমিতি থেকে আমাদের এখানে কাজ করতে নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু পুলিশ কিংবা বাজার সমিতি কোন জায়গা থেকেই টাকা দেয় না। টাকা উঠাইয়া দিনের মজুরি নেই।  


ফতুল্লা পাগলা বাজার সমিতির সেক্রেটারি মাহাবুবুর রহমান বাচ্চু এই বিষয়ে অসম্মতি জানিয়ে  বলেন, এই রাস্তায় যানজট লাগে। কিন্তু সড়কে যে যানজট কর্মী আছে তাদের বিষয়ে আমাদের কিছু করার নেই। তাদেরকে আমরা কোন ধরনের নির্দেশনা দেই নাই। 


ফতুল্লা মডের থানার ভার প্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম হোসেনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই বিষয়ে বলেন, শুধু মাত্র রোজার মাসের জন্য এখানে আমরা যানজট নিরসন কর্মীদের রেখেছিলাম। কিন্তু এর পরে যানজট নিরসন কর্মী সেখানে আছে কিনা আমার জানা নেই। 


সহকারী পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. সালেহ উদ্দিন এই বিষয়ে বলেন, যানজট যারা নিরসন করবেন তাদের জন্য যানজট বাড়বে এই বিষয়টা মোটেও কাম্য নয়। ফতুল্লা থানার ওসি এই যানজট নিরসন কর্মী নিয়োগ করেছে। যানজট নিরসন কর্মীদের প্রাপ্য মজুরির ব্যবস্থাও তিনিই করবেন। কিন্তু কোন গাড়ি থেকে টাকা উঠানো যাবে না। এই বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।  
 

এই বিভাগের আরো খবর