মঙ্গলবার   ১৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ৫ ১৪৩০

জানুয়ারিতেই হচ্ছে মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন

প্রকাশিত: ১০ ডিসেম্বর ২০১৯  

যুগের চিন্তা রিপোর্ট : আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের পরপরই জানুয়ারিতে নারায়ণগঞ্জ মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে একটি সূত্র। আর এটির আঁচ করতে পেরে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন।

 

সূত্র জানিয়েছে, গত ২৬ অক্টোবর ফেনী জেলা সম্মেলনের মধ্য দিয়ে  জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। সামনের সপ্তাহের ১৩ ডিসেম্বর গোপালগঞ্জের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে জেলা ও উপজেলায় আওয়ামী লীগের সম্মেলন কার্যক্রমের আপাতত সমাপ্তি হতে যাচ্ছে। সংগঠনের জাতীয় কাউন্সিলের পর ৭ জানুয়ারি থেকে জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ের সম্মেলন কার্যক্রম আবারও পুরোদমে শুরু হবে।


আওয়ামী লীগের কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে,  ২০-২১ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠেয় ২১তম জাতীয় কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে অনেকটা ঝড়োগতিতে অর্থাৎ রোববার পর্যন্ত ৪৪ দিনে ২৩টি সাংগঠনিক জেলায় সম্মেলন হয়েছে। সোমবারও আট জেলায় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে বাকি ৪৭টি জেলার সম্মেলন জানুয়ারি থেকে শুরু হবে।


এব্যাপারে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ঢাকা বিভাগের আওতাধীন গোপালগঞ্জ জেলার সম্মেলন হবে ১৩ ডিসেম্বর। এ জেলার মধ্য দিয়ে এই দফায় সংগঠনের জেলাওয়ারি সম্মেলনের কার্যক্রম শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। জাতীয় কাউন্সিলের পর নরসিংদী, মাদারীপুর, নারায়ণগঞ্জ মহানগর, মুন্সীগঞ্জ, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর মহানগর, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, শরীয়তপুর ও ঢাকা জেলার সম্মেলন হবে।


এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের তত্ত্বাবধানে ৫টি থানার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। একটি উপজেলায় আহবায়ক কমিটি দিয়ে জেলা ও কেন্দ্রের নেতাদের তোপের মুখে পড়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই ও সেক্রেটারি ভিপি বাদল। অপরদিকে মহানগর আওয়ামী লীগ বন্দর ও সদরে তাদের কার্যক্রম কিছুটা চালালেও সিদ্ধিরগঞ্জে সেটি শ্লথ। এখনো তারা ওয়ার্ডগুলোর সম্মেলনও শেষ করতে পারেনি। 


জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের রদবদল প্রয়োজন বলে বেশ আগে থেকেই রদবদল চেয়ে দাবি তুলেছেন  দুই কমিটির নেতারাই। জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগে সাংসদদের খবরদারি করার দরুণ দুই কমিটির সভাপতিই কমিটির অন্যান্য নেতাদের কথার আক্রমনের শিকার হয়েছেন। এর জল গিয়ে গড়িয়েছে কেন্দ্র পর্যন্তও।

 

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে আব্দুল হাই ও সেক্রেটারি ভিপি বাদলকে এখন বর্তমান কমিটির অধিকাংশ সদস্যই মেনে নিতে চাননা। এমনকি পরিবর্তন চান আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন সাংসদও। এছাড়া মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনকে পদ থেকে সরাতেও একজন এমপি ইতিমধ্যে মাঠে নেমেছেন বলে জানিয়েছেন সূত্র। চলছে কেন্দ্রে গিয়ে নানা নালিশ।

 

মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহাও একপেশে রাজনীতি করার দরুণ মহানগর কমিটির একটি বড় অংশ তাকে আর এই কমিটিতে দেখতে চাননা। এছাড়া চাপ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা আছে সহাবস্থান করা যুগ্ম সম্পাদক শাহনিজাম, সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলালের কাছ থেকেও। তাছাড়া যুগ্ম সম্পাদক জিএম আরমান এবং সাংগঠনিক সম্পাদক জিএম আরাফাতও সেক্রেটারি পদে ঢোকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্র।

 

তবে সম্প্রতি সিটি করপোরেশনের দায়ের করা সরকারদলীয় মেয়রকে হত্যা চেষ্টার মামলায় মহানগর আওয়ামী লীগের শাহ নিজাম, জাকিরুল আলম হেলাল, সাজনুর নাম থাকায় তারা জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কোন কমিটিতেই না থাকার সম্ভাবনা বলে জানিয়েছে আরেকটি সূত্র। তবে তাদের কমিটির শীর্ষস্থানীয় পদে রাখার জন্য এখন থেকেই আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে এক সাংসদ। তবে আওয়ামী লীগের একটি নির্ভরশীল সূত্র জানিয়েছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের বিশেষ চমক থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। গত কমিটিতে বাদ পড়া কয়েকজন দুই কমিটির শীর্ষস্থানীয় পদগুলোতে থাকার সম্ভাবনাই খুব বেশি। 


জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর আব্দুল হাইকে সভাপতি, বর্তমান নাসিক মেয়র ডা.সেলিনা হায়াৎ আইভীকে সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং আবু হাসনাত মো.শহীদ বাদলকে সাধারণ সম্পাদক করে আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর ১৩ মাস পরে ২০১৭ সালের ২৫ নভেম্বর ৬৮ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই কমিটির সভাপতি আব্দুল হাই ও সেক্রেটারি ভিপি বাদলের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার আশ্রয় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার অভিযোগ করেছেন বেশিরভাগ সদস্য।

 

এছাড়া জিকে শামীম ইস্যুতে সংশ্লিষ্টতা, জেলা কমিটিতে পদ বাণিজ্য, উপজেলা সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণে হঠকারিতা এবং আহবায়ক কমিটি প্রদানে আর্থিক লেনদেনেরও অভিযোগ তুলেছেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দরাই। চূড়ান্ত কথা জেলা আওয়ামী লীগের রদ-রদলের জন্য ছুটছেন উপরের ও মাঝারি সারির নেতারা। একই অবস্থা মহানগর আওয়ামী লীগেও। 

২০১৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে আনোয়ার হোসেনকে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক করা হয় অ্যাডভোকেট খোকন সাহার নাম ঘোষণা করা হয়।  এর ৭ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে কেন্দ্রে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু এর দুই বছর তিন মাস পর নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের ৭১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়া হয়। মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি যত পুরোনো হয়েছে ততই ‘কেতাবে আছে গোয়ালে নেই’ অবস্থার পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ কমিটির নেতাদেরই।

 

সভাপতি আনোয়ার হোসেনের রাজনৈতিক মনোভাবের সাথে এক স্থানীয় সাংসদের অনুসারি রাজনীতিকদের মনোপূত না হওয়ায় মহানগরের বেশিরভাগ কর্মসূচিতেই অনুপুস্থিত ছিলেন তারা। মহানগরের পদ-পদবি নিয়ে তারা যার যার মতো করেই রাজনীতি করার অভিযোগ অন্যদের। সববিষয়েই কেন্দ্রের কাছে খোঁজ-খবর রয়েছে। তবে এখনো মহানগরের ওয়ার্ডগুলোর সম্মেলন না করতে পারাই কমিটির সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা বলে অভিযোগ তৃণমূলের।     


তবে এখন পর্যন্ত হওয়া আওয়ামী লীগের জেলা পর্যায়ের সম্মেলনে  বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পুরোনো নেতারাই স্বপদে রয়ে গেছেন। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নতুন নেতৃত্ব আসেনি খুব একটা। এ নিয়ে নতুনদের মধ্যে কিছুটা হতাশা রয়েছে। এটি থাকলেও নারায়ণগঞ্জে যে পরিবর্তন শীঘ্রই আসছে সেটি নিয়ে নিশ্চিত রাজনৈতিক বোদ্ধারা।

এই বিভাগের আরো খবর