বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

জানাতে হবে মাতৃভাষা দিবসের ইতিহাস, সচেতন হতে হবে অভিভাবকদের

প্রকাশিত: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : আজ কি ?, একুশে ফেব্রুয়ারি কি ?, আজকের দিনে কেন মিনারে ফুল দিতে এসেছেন? এই দিনের ইতিহাস কি ছিল জানা আছে ? কারা সেইদিন ভাষার জন্য শহীদ হয়েছিলেন এমন কয়েকজনের নাম কি? কতসালে ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা করা হয়?


২১শে ফেব্রুয়ারি চাষাড়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিতে আসা কিছু মানুষের সামনে এই সকল প্রশ্ন রাখা হয়। ২১শে ফেব্রুয়ারি নিয়ে মানুষের ভাবনাগুলো যুগেরচিন্তা ২৪ এর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল।


খোরশেদ আলম ছেলে ৬ বছর বয়সী ছেলে হাফিজুল ইসলাম কে সাথে নিয়ে পতাকা বিক্রি করছে। হাফিজুল ইসলামকে মিনারে ফুল দিয়েছ কিনা প্রশ্নে বলেন, না ফুল দেই নাই। ছেলেটি কেন ফুল দিবো এই প্রশ্ন করে বসে, খোরশেদ আলম বলে, আব্বু বলেছেন এই দিনে ভাষার জন্য শহীদ হয়েছে অনেকে। তাদের জন্য আমরা শহীদ মিনারে ফুল দেই।


শহীদ মিনারে আসা মানুষদের মুখে পতাকা মিনার এঁকে দিচ্ছেন কলেজ শিক্ষার্থী আসিফ। কতসালে ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ২০০০ সালে ইউনিসেফ ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষনা করে। 

 


আরো বলেন, আমাদের এই দিনটায় আমাদের সংস্কৃতি মনে রাখা উচিত। কিন্তু অনেকেই মিনারে ফুল দিতে এসেছে ওয়েস্টার্ন ড্রেস পড়ে আসছে। বিষয়টা নীতিযুক্ত মনে হয়না।


নারায়ণগঞ্জ কমার্স কলেজের শিক্ষার্থী কনিকা ও সাদিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে এসে মিনারে ফুল দিয়েছেন।  ২১ শে ফেব্রুয়ারির দিনে কি হয়েছিল, এই প্রশ্নে তারা বলেন, এই দিনটি সকল বাঙালির জন্য গুরুত্বপূর্ন। ভাষার জন্য আন্দোলন করে। অনেক বাঙালি সেই দিন শহীদ হয়। তাদের স্মরণে আমরা মিনারে ফুল দিয়ে শহীদ দেই।


দ্বাদশ শ্রেনীর শিক্ষার্থী ছড়া বলেন, আমাদের এই ভাষা দিবস শোক দিবস। কিন্তু আমরা সবাই তো হাসি মুখে এটি উদযাপন করছি। কারো মুখে শোকের কোন প্রকাশ নাই। সালাম, রফিক, বরকত , শফিউর আরো অনেক ভাষা শহীদ রয়েছে।


মা শাহনাজ বেগম  তার দুই সন্তানকে নিয়ে এসেছে মিনারে ফুল দিবে। তিনি বলেন, আমার ছেলে মেয়ে ভাষা আন্দোলন কি সম্পর্কে জানে। ভাষা শহীদের শ্রদ্ধা জানাতেই এখানে নিয়ে এসেছি।


হাজী ইব্রাহীম আলমচান মডেল স্কুল এন্ড কলেজের দশম শ্রেনীর শিক্ষার্থী নুসরাত ও তার বান্ধবীরা মিনারে ফুল দিয়ে ছবি তুলছে। তাদের সাথে কথা হলে নুসরাত বলেন, একটানা নয় মাস যুদ্ধ করে আজকের দিনটা পেয়েছি।  উর্দু নয় বাংলা ভাষায় কথা বলার জন্য আমরা যুদ্ধ করেছিলাম। তাই ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি।


ভাষা ইতিহাস ও শহীদ দিবস সর্ম্পকে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহাবুবুর রহমান মাসুম ও সন্ত্রাস নির্মূল তকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বিা কথা হয় যুগের চিন্তা ২৪ এর সাথে ।


নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহাবুবুর রহমান মাসুম বলেন, সরকার কিংবা শিক্ষা মন্ত্রনালয় কোথায়ও কোন মহল থেকে মাতৃভাষা দিবস সম্পর্কে আমাদের নতুন প্রজন্মকে জানানোর কোন ধরনরে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। 


শহীদ দিবস এটা একটা আনুষ্ঠানিকতার মাঝেই রয়ে গেছে। নতুন প্রজন্মেরা মনে করে ফুল দেওয়া এটা একটা আনন্দের বিষয়। এটা যে একটা শোক দিবস, সেই উপলব্দি তাদের মধ্যে নেই। শহীদ দিবস কি, ভাষা আন্দোলন কি, সেই বিষয়ে আমাদেও তাদেরকে শিক্ষা দিতে হবে। 


শহীদ মিনারে ফুল দেওয়া আনুষ্ঠানিকতা আর আনন্দের বিষয় হয়ে দাড়াচ্ছে দিন দিন। এটা খুবই দুঃখজনক। আমরা যদি আমাদের ইতিহাসকে ভুলে যাই তাহলে তো হবে না। 


সেই ক্ষেত্রে সকলকে বিশেষ করে অভিভাবকদের তাদের সন্তানদের শহীদ দিবস ও ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।


সন্ত্রাস নির্মূল তকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি বলেন, আমাদের দেশের সরকার ব্যবস্থাপনায় যারা ছিল তারা কখনোই চায় নাই ভাষা আন্দোলনের প্রকৃত ইতিহাস উঠে আসুক। পাঠ-পুস্তকে ভাষা আন্দোলনের কোন ঘটনা নাই। 


ভাষা শহীদদের বিষয়ে তেমন বর্ননা নাই। সবাই রাজনৈতিক ভাবে এই বিষয়গুলো থেকে সুবিধা নিতে চেয়েছে। এখানে যেই রাজনীতি কাজ করে। মানুষের জন্য নয়। ক্ষমতায় টিকে থাকার রাজনীতি। 


মানুষের জন্য রাজনীতি হলে তারা দেশের ইতিহাস জাতিকে শেখানোর জন্য তারা উদ্যোগ গ্রহণ করত। কিন্তু তারা সেটা করে নাই এবং এই বিষয়ের দায় ও তারা উপলব্দি করে নাই। এছাড়া পরিবার থেকেও এসব বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে না। 


আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবস হওয়ার পরে দিবসটি নিয়ে খুব বেশি পরিবর্তন কিছু দেখা যায় নি। যদি কোন সরকার চায়, এই বিষয়ে ইচ্ছা থাকে, এই বিষয়ে প্রচুর কাজ করতে পারে। তাদের সেই সুযোগটি রয়েছে।
 

এই বিভাগের আরো খবর