শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

চুরির অভিযোগ করায় খানপুর হাসপাতালে রোগীরা চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত

প্রকাশিত: ১৮ আগস্ট ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : খানপুর ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ধারাবাহিক ভাবে একাধিক চুরির ঘটনা ঘটছে। তবে এই বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।


হাসপাতাল থেকে চুরির রোধে কিংবা চোর ধরার ব্যবস্থা গ্রহণ না করে বরং ভুক্তভোগী রোগীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা করেছে। রোগীদের পুরো চিকিৎসা না দিয়েই জোর পূবর্ক তাদের রিলিজ দিয়ে দিয়েছে।  


শনিবার (১৭ আগস্ট) সকালে চুরির একাধিক ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বিধায় ভুক্তভোগীরা গনমাধ্যমের কর্মীদের এই বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করেন। 


তবে অভিযোগের শাস্তিস্বরূপ তাদের হাসপাতাল থেকে সম্পূর্ণ চিকিৎসা না দিয়ে রবিবার (১৮ আগস্ট) সকালে জোরপূর্বক রিলিজ দিয়ে দেওয়া হয়েছে।  


জ্বরে অসুস্থ সোনালীর মা নাসিমা বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে অভিযোগ করে বলেন, আমার মেয়েটার টাইফয়েড হইছে। ওরে আরো ৩টা ইনজেকশন দেয়ার কথা ছিলো। কিন্তু সেটা না দিয়েই তারা আজকে আমাদের ছুটি দিয়ে দিছে। 


গতকাল চুরি ঘটনার অভিযোগ করায় আমার মেয়ের সম্পূর্ন চিকিৎসা হলো না। ১১ আগস্ট টাইফয়েডের রোগী নাসিমা বেগম তার মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করে। সেদিন রাতেই তার ৫ হাজার টাকা চুরি হয়েছে।


আরেকজন ভুক্তভোগী নাদিয়া ইসলাম বলেন, সংবাদকর্মীরা আসার আগে ডাক্তার আমার রোগীকে দেখে বলেছে আপনাদের কয়েক দিন থাকা লাগবে। 


কিন্তু সংবাদকর্মীরা চলে যাবার পর আমাদের হঠাৎ করে একজন নার্স এস বলেছে, আপনার চলে যান। গলায় টনসিলের ব্যাথা আছে আর চোখেও সমস্যা ছিল। যেখানে আমাদের আরো কয়েক দিন থাকার কথা সেখানে হঠাৎ করে আমাদেরকে চলে যেতে বলছে। ১৪ আগস্ট তার মুঠোফোন ও ৮ হাজার টাকা চুরির ঘটনা ঘটে।    


মদনপুর লালখার বাসিন্ধা সোনিয়া বলেন, আমার ৪ বছরের ছোট্ট মেয়ের  টাইফয়েড ও নিউমোনিয়া হয়েছে। ওরে হাসপাতালে ১০ আগস্ট ভর্তি করেছি। আর ১১ আগস্ট আমার মোবাইল চুরি হয়ে গেছে। আবার মোবাইল চুরির ৪দিন পরে  ১৬ আগস্ট ৭ হাজার টাকা চুরি হয়েছে। 


সুদে মেয়ের চিকিৎসার জন্য টাকাগুলো এনেছিলাম। সাংবাদিকদের কাছে চুরির অভিযোগ করার অপরাধে আমার মেয়ের সম্পূর্ন চিকিৎসা করল না। তাদেরকে বার বার বলেছি আমার মেয়েটা অসুস্থ তারপরেও আমাদেরকে বের করে দিয়েছে। আমরা অসহায় বলে আমাদের সাথে এই কাজ টা করতে পারল।  


এছাড়াও অপর একজন রোগীকে একই ঘটনায় হাসপাতাল থেকে সম্পূর্ন চিকিৎসা না দিয়েই রিলিজ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি তার পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক।


রোগীদের চিকিৎসা না দিয়ে রিলিজ করে দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কথা বললে তারা দুজনেই বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন বলে জানান।


হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. সামসুদ্দোহা সঞ্চয় বলেন, হাসপাতালে চুরি হয়েছে আর অভিযোগকারী রোগীদের সুস্থ্য হওয়ার পূর্বেই ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। 


এই বিষয়টি আমি আজকেই জানতে পারলাম। এমন কোন ঘটনা হয়ে থাকলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। সত্যতা প্রমানিত হলে এই বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 


হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবু জাহের বলেন, হাসপাতালে ঘটে যাওয়া চুরির ঘটনা সম্পর্কে আমি অবগত আছি। চুরির ঘটনায় অভিযুক্তকারীদের উপযুক্ত সময়ের আগেই ছুটি দিয়েছে এমন ঘটনা আমার জানা নেই।  


আমি আজকে ছুটিতে আছি। আগামীকাল হাসপাতালে যাওয়ার পরে ঘটনার বিস্তারিত জেনে আমি এই বিষয়ে বলতে পারব।  
 

এই বিভাগের আরো খবর