মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৩ ১৪৩১

চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডা.স্যামুয়েল হানেমানের জীবনী

প্রকাশিত: ১০ এপ্রিল ২০১৯  

আমরা সবাই জানি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাবিজ্ঞানের জন্ম জার্মানিতে। বিজ্ঞানী ডা.স্যামুয়েল হানেমান এর আবিষ্কারক (১০ এপ্রিল ১৭৫৫ থেকে ২ জুলাই ১৮৪৩ ছিল তার জীবনকাল)। তিনিই প্রথম চিকিৎসাবিজ্ঞানী যিনি ভেষজ বস্তুকে শক্তিকরণ করে তা সুস্থ মানবদেহে পরীক্ষার মাধ্যমে ওষুধের রোগজ শক্তির আবিষ্কার করেন, যা তার আগে কোনো বিজ্ঞানী করেননি।

 

তাই আমরা তাকে শ্রদ্ধা করি বিপ্লবী বিজ্ঞানী হিসেবে। বিপ্লবী এ বিজ্ঞানীর জন্মবার্ষিকী বিশ্বব্যাপী পালিত হয়, এই দিনে পৃথিবীর আর কোনো বিজ্ঞানীর জন্মদিন এভাবে বিশ্বব্যাপী পালিত হয় না। ২০০৩ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী হানেমানের জন্মদিন পালিত হচ্ছে বিশ্ব হোমিওপ্যাথি দিবস হিসেবে। 

 


এই দিবস উপলক্ষে আজ ১০ এপ্রিল বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক বোর্ড, পালন করবে বিশ্ব হোমিওপ্যাথিক দিবস এবং বিভিন্ন সংগঠনগুলা যথা যত ভাবে পালন করে থাকে, এর মধ্যে বড় পরিসরে পালন করবে, ১২ এপ্রিল, নোয়াখালী এম এ রহমান হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ; ১৯ এপ্রিল, বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক পরিষদ চট্টগ্রাম জেলা শাখা; ২৬ এপ্রিল, চট্টগ্রাম হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক কল্যাণ সোসাইটি কেন্দ্রীয় কমিটি, হোমিও বিজ্ঞান গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসহ সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন সংগঠন ও কলেজসমূহ পালন করে থাকবে হোমিওপ্যাথিক দিবস।

 

বিজ্ঞানে কৃত্রিম রোগ আবিষ্কার স্বাস্থ্য বিজ্ঞানে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে। ১৭৯০ সালে পৃথিবীর মানুষ প্রথম জানতে পারে তার আবিষ্কারের কথা। লিখেছেন -জাতীয় মানবাধিকার সংস্থ্য, হিউম্যান রাইটস রিভিউ সোসাইটির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা, ও হোমিও গবেষক, ডা.এম এ মাজেদ হোমিওপ্যাথিকে জানতে হলে, হানেমান কে জানতে হবে। হ্যানিমেনের মূল্য বুঝতে পারলে, হোমিওপ্যাথির মূল্য বুঝা যাবে।

 

আজ ১০এপ্রিল বিশিষ্ট গবেষক চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক ডা.স্যামুয়েল হানেমানের ২৬৪ তম জন্মবার্ষিকী। ডা.স্যামুয়েল হানেমান ১৭৫৫ সনে জার্মানীর অন্তর্গত স্যাকস্যানী প্রদশের মিশন নগরীর পটুয়ার ঘরে ১০এপ্রিল জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ক্রিস্টিয়ান গড ফ্রাইড এবং মাতার নাম জোহানা ক্রিস্টিয়ানা। তাঁর পিতা মৃৎ শিল্পী ছিলেন। অর্থাৎ চীনা মাটির বাসন পএের গায়ে ছবি আঁকতেন। তার পিতা বাল্যকালে হানেমানের শিক্ষার প্রতি আগ্রহী ছিলেন না। কিন্তু তাঁর প্রতিভার পরিচয় পেয়ে শিক্ষকদের অনুরোধে তিনি তাঁকে স্কুলে পাঠান।

 

রাত্রে পড়াশোনার জন্য তেল খরচের ভার বহনে পিতা বিরক্ত হতেন। সেজন্য তিনি গোপনে মাটির প্রদ্বীপ জ্বালিয়ে, ঘরের এক কোনে লুকিয়ে পড়াশোনা করতেন। ২০বছর বয়সেই হ্যানিমেন ল্যাটিন, গ্রীক হিব্রু প্রভৃতি বহু ভাষার পান্ডিত্য অর্জন করেন। ১৭৭৫ সালে ২০টি ডলার নিয়ে উচ্চ শিক্ষালাভের আশায় লিপজিগ শহরে গমন করনন। সেখানে দিনের বেলায় লেখাপড়া করতেন এবং রাতের বেলায় ইংরেজি থেকে জার্মান ভাষায় বইপত্র অনুবাদ করতেন। 

 

১৭৭৯ সালে ২৪ বছর বয়সে এনালার্জেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমডি উপাধি লাভ করেন। ১৭৮২ সালে ২৭ বছর বয়সে তিনি দেশাউ নগরের ঔষধ বিক্রেতা কুচলারের কন্যা জোহানা হেনরিয়েটারে বিয়ে করেন। এর কিছু দিন পূর্বেই তিনি গোমারন ধর্ম মন্দিরের চিকিৎসক নিযুক্ত হন। এ সময় তিনি এলোপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতির উপর আস্তাশীল হয়ে পড়েন। একসময় তিনি গোমরন ত্যাগ করে ড্রেসডেন সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত নিযুক্ত হন। 

 

শুনতে অবাক লাগলেও সত্য হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক ডা. হানেমান এ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা শাস্ত্রে লেখা পড়া করে ডাক্তার হন এবং এ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতি অনুযায়ী রোগীদের সেবা প্রদানও করতেন। চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি তিনি গবেষণা ও চিকিৎসা শাস্ত্রের যাবতীয় অনেক বইয়ের অনুবাদ করেছেন। গবেষণার এক পর্যায়ে তিনি এ্যালোপ্যাথি চিকিৎসাতে ক্ষতিকর/ সাইড এ্যাফেক্ট-এর সন্ধান পান।

 

সাইড এ্যাফেক্ট চিহ্নত করার পরই তিনি এলোপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতি চিরদিনের জন্য ত্যাগ করেন। সাইড এ্যাফেক্টর কারণ নির্ণয়ে গবেষণার মাধ্যমে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার সূত্র আবিস্কার হয়। হানেমান নিজের দেহে ১৩০টি মেডিসিন প্রুভ করেছেন। সর্বপ্রথম মানবদেহে হোমিওপ্যাথি মেডিসিন পরীক্ষা করা হয়েছে।

 

পেরুভিয়ান কফি বা সিষ্কোকা গাছের বাকল নিয়ে গবেষণা করতে করতে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার উদ্ভব হয়। পৃথিবীর কনিষ্টতম চিকিৎসা পদ্ধতি হলো হোমিওপ্যাথি। ঔষধ পরীক্ষার পাশাপাশি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার নিয়ম নীতি প্রকাশ করেন ১৮১০সনে। অর্গানন নামে যার পরিচিতি চিকিৎসক মহলে। তার জীবনের শেষ পর্যায়ে অর্গানন ৬ষ্ঠ সংস্করণ সমাপ্ত করেন।বইটির আধুনিক ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হয় ১৮৮২ সালে হানেমান ফাউন্ডেশন, আমেরিকা থেকে। 

 

হোমিওপ্যাথির জন্ম জার্মানীতে, বিকাশ ফ্রান্সে এবং রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি বৃটেন ১৮০৫ সনে। প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দি প্যারিস কলেজ অব হোমিওপ্যাথি ডা.হানেমান সম্পর্কে ড.হুদহুদ মোস্তফার গবেষণা থেকে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যায়। সাম্প্রদায়িক সংকীর্ণতায় ভীষণভাবে আক্রান্ত আর সত্য চাপা দিতে অত্যন্ত পারদর্শী পশ্চিমা জগৎ যতদিন সম্ভব সম্রাট নেপোলিয়ান, মর্মাডিউক পিকথল, মরিস বোকাইলি, নীল আর্মস্ট্রংসহ আরও অনেক মনীষীর ইসলাম গ্রহণের সংবাদকে চাপা দিয়ে রেখেছিল। 

 

সত্য কোন দিনই হারিয়ে যায় না। কালের প্রবাহে কোন এক দিন প্রকাশিত হয়ই। সম্ভবত সবচেয়ে বেশী সময় ধরে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের আবিষ্কারক ডা.স্যামুয়েল হানেমানের ইসলাম গ্রহণের সংবাদটি চাপা পড়ে আছে। ড. হুদহুদ মোস্তফা এক নিবন্ধে লিখেছেন অনেক কথা, ১৯৯৮সালে লন্ডনে এক সেমিনারে ড.মোস্তফার সাক্ষাৎ ঘটে হানেমানের এক নিকটতম আত্মীয় ইঞ্জিনিয়ার এর সাথে। তাঁর নাম উইলিয়াম হানেমান। বিজ্ঞানী ডা.হানেমানেরই এক উত্তর, পুরুষ তিনি। বিশ্বাসে ক্যাথোলিক খ্রিস্টান। কথা প্রসঙ্গে তিনি জানালেন, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডা.হানেমান গবেষণার এক পর্যায়ে ইসলাম গ্রহণ করে মুসলমান হয়ে গিয়েছিলেন এবং তিনি আমৃত্যু ইসলামী বিশ্বাসেই প্রতিষ্টিত ছিলেন।

 

যে কারণে তিনি নিজ জন্মভূমি,স্বজাতি, আত্মীয় পরিজন ত্যাগ করে দ্বিতীয় স্ত্রী মাদাম ম্যালনীকে নিয়ে প্যারিসে হিজরত করতে বাধ্য হয়েছিলেন। মাদাম ম্যালনীও স্বামীর সাথে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন। এ ঘটনা জানাজানি হয়ে পড়লে হানেমানের স্বজনরা তাঁর প্রতি বিরূপ হয়ে পড়েন। চর পরিচিতি পরিবেশ তাঁর বিরুদ্ধে চলে যায়। শান্তি ও নিরাপত্তার স্বার্থে সকল সহায় সম্পদ উওরাধিকারী আত্মীয়-স্বজনদের মধ্য বিলিবন্টন করে তিনি ইসলামে নবদীক্ষিত স্ত্রী মাদাম ম্যালানীকে নিয়ে প্যারিসের পথে হিজরত করেন

এ সময়টা ছিল ১৮৩৫ সালের জুন মাস। তাঁরা তাদের জীবদ্দশায় আর কখনও জার্মানীতে ফিরে যাননি। হিজর নবীদের সুন্নাত। ইসলাম গ্রহণের কারণে জার্মান বিজ্ঞানী হানেমানকেও  সেই সুন্নতেরই অনুসরণ করতে হয়। উইলিয়াম হানেমান আরও কিছু মহামূল্যবান তথ্য দিয়ে সবাইকে চিরকৃতজ্ঞতার পাশে আবদ্ধ করেছেন। 

 

প্রথমে তিনি ড.মোস্তফাকে বলেছিলেন লন্ডনস্থ হানেমান মিউজিয়ামে যেতে।  ঠিকানা-হানেমান মিউজিয়াম পাউইজ প্যালেস, গ্রেট, আরমন্ড স্ট্রিট, লন্ডন, ডবি, উসি। সেখানে হানেমানের ব্যবহৃত বহু জিনিসপত্র আছে, বই পুস্তুকের এক বিরাট সংগ্রহও আছে এর মধ্যে মহাগ্রন্থ আল কোরআন, শতাধিক আরবী গ্রন্থ রয়েছে। ব্যবহৃত জিনিস পত্রের মধ্যে রয়েছে মসজিদের নকশা করা জায়নামাজ, মূল্যবান পাথরের তাসবিহ একটি টার্কিশ টুপি। ব্যবহৃত জায়নামাজের সেজদার চিহ্ন স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যায়।


ডা.হানেমান ইসলাম গ্রহণ এবং জার্মানী ত্যাগের পর তিনি আর কখনও কোথাও তাঁর পিতৃ প্রদত্ত নাম ক্রিশ্চিয়ান ফ্রেডারিক আদ্য শব্দ দু’টি ব্যবহার করেননি। যে দ’ুটো খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীর পরিচয় বহন করে। প্যারিসে হিজরতের পর চিঠিপত্রসহ সর্বত্র কেবল স্যামুয়েল হানেমান লিখতেন। স্যামুয়েল ইসরাইল বংশীয় একজন নবীর নাম, হিসাবেও গ্রহনযোগ্য, একথা তাঁর খ্রিস্টান ধর্ম ত্যাগের আর একটি শক্তিশালী প্রমাণ।

 

বৃটিশ মিউজিয়ামে সংরক্ষিত ম্যাগাজিনের ২৪৫ পৃষ্ঠায় স্পষ্ট ভাষায় বর্ণনা করা হয়েছে। মাদাম ম্যালানী তাঁর স্বামী হানেমানের মৃত্যুপূর্ব ওসিয়তের কারণে কোনো অমুসলিমকে তাঁর দাফনে অংশগ্রহণ করতে দেননি। তিনি দাফনের দিনক্ষণ সবই গুপ্ত রেখে মুসলমানের সাক্ষাৎ পাবার আশায় অপেক্ষা করেছিলেন। 

 

হানেমানের মৃত্য ২ জুলাই ১৮৪৩ তারিখে। কোন মুসলমানের সাক্ষাৎ না পেয়ে ম্যালানী নিজে তাঁর সমবিশ্বাসী (নবদীক্ষিত মুসলিম) দৃঢ় প্রত্যায়ী দু’ব্যাক্তির সহযোগিতায় চিকিৎসা বিজ্ঞানী হানেমানকে মৃত্যুর ৯দিন পর ১১ জুলাই কবরস্থ করেন। হানেমানেরই ইচ্ছা অনুযায়ী প্যারিসের অখ্যাত মাউন্ট মারাট্টির গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এটি খৃস্টানদের গোরস্থান হলেও একটু আলাদা স্থান ।

 

পূর্বেই উল্লেখ করেছি,হানেমান তাঁর সমাজের প্রচলিত খৃষ্টান ধর্ম ত্যাগের কারণে জার্মানীতে পরিচিত পরিবেশ তার বিরুদ্ধে চলে যায়। নিরাপওা ও শান্তির সন্ধানে তিনি ১৮৩৫ সালের জুন মাসে ৮০ বছর ২মাস বয়সে তাঁর পৈতৃক দেশ জার্মানী ত্যাগ করেন। আর কখনও তিনি বা তাঁর স্তী ফ্রান্স থেকে জার্মানীতে ফিরে যাননি। এতে প্রমাণিত হয় ইসলাম গ্রহনের ফলে বিজ্ঞানী হানেমান ও মাদাম ম্যালনীর জীবনের শান্তি ও নিরাপওা জার্মানীতে কতটুকু বিপন্ন ছিল।

 

হানেমানের কিছু প্রবাদ তুল্য উক্তি রোগীকে চিকিৎসা কর রোগকে নয়। অথচ কিছু কিছু হোমিওচিকিৎসক বের হয়েছে, এরা রোগীর লক্ষণ নির্বাচন না করে রোগের নামে চিকিৎসা দিয়ে থাকে, তাই আজকের এই দিনে হানেমানের কথা স্মরণ করে, হানেমানের অতিতের সব গুণ মাথায় রাখতে পারলে সেই হল প্রকৃত হোমিওপ্যাথ। হানেমান একটি কথা বলতেন; আমি বৃথা জীবন ধারণ করিনি, যা ভাল তা শক্ত করে ধরব, সব কিছুই প্রমাণ করব।


ডা.মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ

লেখক : স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা, হিউম্যান রাইটস রিভিউ সোসাইটি কেন্দ্রীয় কমিটি
কোচেয়ারম্যান-হোমিও বিজ্ঞান গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
ই-মেইল : [email protected]
মোবাইল : ০১৮২২-৮৬ ৯৩ ৮৯

এই বিভাগের আরো খবর