মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১০ ১৪৩১

চাষাড়া গণসৌচাগারের বেহাল দশা, মাদক সেবীদের আস্তানা

প্রকাশিত: ১৪ মে ২০১৭   আপডেট: ১৪ মে ২০১৭

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪ ডট কম) : অব্যবস্থাপনা আর অবহেলায় চাষাড়া শহীদ মিনার সংলগ্ন গণসৌচাগারটি (পাবলিক টয়লেট) এখন চাষাড়াবাসীর জন্য বিষফোঁড়া হয়ে দাড়িয়েছে।

মাদকসেবনের নিরাপদ স্থান এখন এই গণসৌচাগারটি। ব্যবহারতো দূরের কথা এর দূর্গন্ধে শহীদ মিনারসহ পাশের খাবারের দোকানগুলোতে অবস্থান করাটাই দুঃসহনীয়। সামনের কাউন্টার জুড়ে বসেছে বিড়ি সিগারেটের দোকান। অধিকাংশ পায়খানার দরজার ছিটকানি নেই।

নারীদের জন্য তৈরী সৌচাগারদুটি ব্যবহার হচ্ছে পুরুষদের জন্য। সৌচাগার ব্যবহার করে চলছে পানি বানিজ্য। অথচ ব্যবহার অনুপযোগী এই সৌচাগার ব্যবহারে গুনতে হয় ২ টাকা থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত।

নোংরা স্যাতস্যাতে পরিবেশ, দুর্গন্ধ, পোকামাকড়, নিরাপত্তা সংকটসহ নানা কারনে দিন দিন কমে যাচ্ছে ব্যবহারকারী। অথচ এ ব্যপারে সিটি কর্পোরেশনের নেই নিয়মিত তদারকি।

ফলে শ্রমজীবি মানুষসহ অনেকেই পথচারিদের সামনেই রাস্তার পাশে সেরে নিচ্ছে প্রয়োজনীয় পাকৃতিক কাজ, দূষিত হচ্ছে শহরের পরিবেশ। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন হওয়ার  ৬ বছরে  ড্রেনেজ ব্যবস্থা, রাস্তাঘাট, পার্ক, খেলার মাঠ, মসজিদ কিংবা আবাসন সকল ক্ষেত্রেই লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া।

কিন্তু দুঃখ জনক হলেও সত্য ৬ বছরেও সংস্কার কিংবা উন্নয়ণের ছোঁয়া লাগেনি শহরের প্রাণ কেন্দ্রে অবস্তিত এই  সৌচাগারটিতে। পবিত্র শহীদ মিনারের দেয়ালঘেষা এই সৌচাগারে নারী ও পুরুষের জন্য ২ টি করে পায়খানা, পুরুষের জন্য ৪টি প্র¯্রাব খানা, ১ টি গোসলখানা ও ৩ টি বেসিনের জায়গা রয়েছে।

১ টি বেসিন কোন প্রকারে ব্যবহার সম্ভব হলেও পুরুষ অংশের ১ টি আর নারী অংশের একমাত্র বেসিনটির কোন অস্তিত্বই নেই। নারীদের পায়খানা ব্যবহার করছে পুরুষেরা।  ৪ টি পায়খানা এবং গোসলখানা সব গুলোর দড়জা ভাঙ্গা নেই ছিটকিনি।

সবগুলো পায়খানার ফ্লাশবক্সগুলি মাদক নেবার সিরিঞ্জ, ফেন্সিডিল, ডেক্সপোর্টেনসহ নানান রকম মাদকের বোতলে ভর্তি। আলোক স্বল্পতার ফলে মাকড়শা, তেলাপোকা আর টিকটিকির নিরাপদ আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে। একটি অংশ দখল করে চলছে নিরাপদ পানির ব্যবসা।

সামনের কাউন্টার ব্যবহার করে গড়ে তোলা হয়েছে বিড়ি সিগােেটর দোকান। ফলে সৌচাগারের সামনের জায়গা হয়ে উঠেছে নেশাখোর ও উঠতি ছেলেদের আড্ডাস্থল। কোন নারীই তাদের সামনে দিয়ে সৌচাগারে প্রবেশ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেনা। যারা নিতান্ত বাধ্য হয়ে প্রবেশ করেন তাদের ভাগ্যে জোটে ধুমপায়ীদের অশ্লীল কটুক্তি।

সব মিলিয়ে এ সৌচাগারটি জনসাধারণের জন্য উপকারের ফলে দূর্ভোগের কারন হয়ে দাড়িয়েছে। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের কারনে সৃষ্টি হয়েছে মারাত্মক দূর্গন্ধের। এর দূর্গন্ধে শহীদ মিনারে অবস্থান করাটাই অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছে। বাতাসের মাধ্যমে ছড়াচ্ছে রোগ জিবাণু। দূর্গন্ধে অতিষ্ঠ মানুষ সিটি কর্পোরেশনকে উদ্দেশ্য করে বাজে কথাও বলতে পিছপা হননা।

এ বিষয়ে শহীদ মিনারে স্বপরিবারে ঘুরতে আসা স্কুল শিক্ষক কমাল আহমেদ বলেন, ছোট্ট মেয়েকে শহিদ মিনার দেখাতে নিয়ে এসেছি। পাশে খাবার দেখে বায়না ধরেছে কিছু খাবে। এখানে এতটাই দুর্গন্ধ যে দাঁড়াতেই পারছিনা।বাবা হয়ে এমন পরিবেশ থেকে কিভাবে সন্তানকে খাবার কিনে খাওয়াবো? শহরের বিভিন্ন স্থানের দুর্গন্ধ মেনে নিলেও এমন পবিত্র স্থানে এবং শহরের প্রাণকেন্দ্রের এ অবস্থা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে।

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের এক কর্মকর্তার সাথে এ বিষয়ে কথা বললে তিনি বলেন, চাষাড়া পাবলিক টয়লেটের সামনে থেকে দোকান সড়ানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।  গণ সৌচাগার ব্যবহারকারীর অভাব এবং ইজারাদার ও ব্যবহারকারী উভয়পক্ষের অসচেতনতার ফলে এ অবস্থার সৃষ্ঠি হয়েছে ।

তাছাড়াও তিনি স্বীকার করেন সৌচাগারের দূরবস্থার কারনে খুব বিপদে না পড়লে কেউ ব্যবহার করতে চায়না। মাদক সেবনের ব্যাপারে জানতে চাইলে বলেন, কে কখন সৌচাগারে মাদক সেবন করে ইজারাদার কিংবা আমাদের পক্ষে তা জানা সম্ভব না।

আমাদের নানান সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমরা চেষ্টা করছি পরিচ্ছন্ন, বাসযোগ্য নগরী গড়ে তোলার। জনগণের সচেতনতা ও স্বতস্ফুর্ত সহায়তা ছাড়া  সমস্যা সমাধান সম্ভব নয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

এই বিভাগের আরো খবর