বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

চাঁদার টাকায় রাজার হালে ট্রাক শ্রমিক নেতৃবৃন্দ

প্রকাশিত: ২১ জানুয়ারি ২০২০  

যুগের চিন্তা রিপোর্ট : নারায়ণগঞ্জে রাজার হালে রয়েছে জেলা ট্রাক, ট্যাঙ্কলরী ও কভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন নেতারা। এখানে ইউনিয়নের নামে প্রতিদিন নানা কায়দায় কয়েক লাখ টাকা চাঁদা উঠছে। তা লুটেপুটে খাচ্ছে নেতারা। 


এ লুটের টাকা থেকে ২১ সদস্য বিশিষ্ট শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতি সদস্যকে মাসোহারা দেয়া হচ্ছে। প্রতিমাসে এ মাসোহারার পরিমান দু’লাখ টাকা। অথচ, ১৭ বছর ধরে এ ইউনিয়নে নির্বাচন নেই, ফান্ডে টাকা নেই এবং টাকার অভাবে মৃত শ্রমিকদের ভাতা দেয়া হচ্ছে না।


সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, চাঁদার টাকা থেকে প্রতি মাসে ইউনিয়ন সেক্রেটারী মানিক পান ২০ হাজার টাকা, সহ সভাপতি খোরসেদ আলী সাহেব পান ১২ হাজার, যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ার হোসেন আনু পান ১৪ হাজার টাকা, বকুল পান ৮ হাজার টাকা, প্রত্যেক সদস্য পান সাড়ে তিন হাজার টাকা করে (শুধু জুয়েল আহমেদ ৫ হাজার); এভাবে ২১ সদস্য বিশিষ্ট ইউনিয়ন কমিটি প্রতি মাসে পাচ্ছে দু’লাখ টাকা। নারায়ণগঞ্জ শহরের নিতাইগঞ্জে বেশ কিছু খাত থেকে উঠছে ইউনিয়নের নামে টাকা।


ট্রাক চালকদের অভিযোগ, নারায়ণগঞ্জ শহরে ঢুকে মাল খালাস ও ট্রিপ ধরে এ শহর থেকে বেড়িয়ে যেতে তাদের নানা খাতে চাঁদা দিতে হয়। প্রথমেই শহরে ঢুকতে একটি টোকেন জোগাতে হয়। যার কোন মূল্য না থাকলেও বর্তমানে দুশ’ থেকে চারশ’ টাকা প্রদান করতে হয়। এরপর মালিক সমিতির চাঁদা ৫০ টাকা, শ্রমিক ইউনিয়নের চাঁদা ৫০ টাকা, লাইনম্যান ৫০ টাকা, দারোয়ান ৫০ টাকা এবং সিটি কর্পোরেশনের চাঁদা ৩০ টাকা।


এর মধ্যে সিটি কর্পোরেশনের চাঁদাই একমাত্র বৈধ চাঁদা। ওদিকে, ট্রিপ ধরতে ইউনিয়ন নিয়োজিত দালালকে দিতে হয় দু’হাজার টাকা। এভাবে নারায়ণগঞ্জ শহরে ঢুকে বেড়িয়ে যেতে কম করে হলেও তিন হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। এখানে টোকেন সংগ্রহ করার কথা পঞ্চবটী ট্রাক টার্মিনাল থেকে। কিন্তু নিতাইগঞ্জে শাখা অফিস করে এখান থেকেই টোকেন বিক্রি করা হয়। 


অথচ, টোকেন বিক্রির এক পয়সাও ইউনিয়ন ফান্ডে জমা হয় না। নিতাইগঞ্জ এলাকায় সাত-আট জন টোকেন বিক্রি করে। বিক্রিকৃত টাকা জমা হয় ইউনিয়ন নেতা সাহেবের কাছে। সাহেব তা অফিসে প্রদান করেন। সেখানেই তা নেতৃবৃন্দের মাঝে ভাগবাটোয়ারা হয়।


ইউনিয়নের চাঁদাবাজির সবচেয়ে বড় খাত ট্রাকের ট্রিপ ধরা। এ শহরে ট্রাকে করে পন্য নিয়ে যেতে হলে আপনাকে ট্রাক ভাড়া করতে হবে একজন দালালের মাধ্যমে। এ দালাল প্রকৃত ভাড়ার উপর দু’হাজার টাকা কমিশন নেবে। এ কাজের জন্য ইউনিয়ন নিতাইগঞ্জ এলাকায় যে ৬০ জনের একটি দালাল বাহিনী নিয়োগ করেছে তারা সবাই ইউনিয়নের লোক। 


এ শহরে ময়দা, লবন ও তেল মিল মালিকরা তাদের নিজ মাল নিজ ট্রাকে পরিবহন করতেও ইউনিয়নকে ১২শ’ টাকা চাঁদা দিতে হবে। প্রতি রাতে এ টাকা সংগ্রহ করে ইউনিয়নের ক্যাশিয়ার পলাশ। প্রতিদিন প্রায় দুশ’ ট্রাক নারায়ণগঞ্জে আসা যাওয়া করে এবং শুধুমাত্র নিতাইগঞ্জেই তাদের চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দিতে হয়।


সাধারন ট্রাক চালকদের অভিযোগ, ১৭ বছর আগে ২০০৩ সালে এ ইউনিয়নের সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল। ২০০৮ সালের নির্বাচনে সরকার পরিবর্তনের পর ২০০৯ সালে এ ইউনিয়ন বহিরাগতরা দখল করে নেয়। তারপর থেকে ঘুরে ফিরে একই চেহারা এ ইউনিয়ন দখল করে আছে। মাঝে শুধু সভাপতি-সেকেটারী পদে দু’একটি ডিগবাজী হয়েছে। 


সভাপতি পদে হাজী রিপনের স্থলে মোঃ সানাউল্লাহ এসেছে এবং মানিক কিছুদিন সভাপতি পদে উন্নীত হয়ে আবার সেক্রেটারী পদে নেমে এসেছে। বর্তমানে ইউনিয়ন নেতৃত্বের একমাত্র কাজ চাঁদাবাজি। পঞ্চবটী ট্রাক টার্মিনালে একটি অফিস থাকা সত্বেও নিতাইগঞ্জ, মুক্তারপুর, চিটাগাং রোড ও সোনারগাঁয়ের শাখা অফিসগুলো চাঁদাবাজির স্বার্থেই খোলা হয়েছে। 


শ্রমিকরা নির্বাচন চায়। কিন্তু শ্রমিকদের এ দাবীকে বর্তমান নেতৃবৃন্দ বেআদবী মনে করে এবং কেউ এ দাবী করলে তাকে নানা ভাবে শায়েস্তা করা হয়। 
 

এই বিভাগের আরো খবর