বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

চলচ্চিত্র ছবি নির্মাতা সোনারগাঁয়ের সুজন নিজেই এখন সিনেমার গল্প

প্রকাশিত: ২৪ মার্চ ২০১৯  

সোনারগাঁ (যুগের চিন্তা ২৫) : সোনারগাঁ উপজেলার চলচ্চিত্র ছবি নির্মাতা সুজন মিয়া স্ত্রীর প্রতারনায় শিকার হয়ে প্রায় এখন পথের ফকির তিনি। সম্প্রতি স্ত্রী রুবিয়া খাতুন প্রতারণার মাধ্যমে সুজন মিয়ার কুয়েতের দুটি দোকান বিক্রি করে তিন কোটি টাকা ও ৩৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নিয়ে তারই কাজের ছেলে জুয়েল মাহমুদ রানার সাথে পালিয়ে গিয়ে পথের ফকির বানিয়ে দিয়ে যায়। এখানেই শেষ নয়। 

সুজন মিয়াকে ট্রাক চাপা দিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। ট্রাক চাপায় একটি পা হারিয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করে হসপিটালে ভর্তি রয়েছে সুজন মিয়া। তবে সুজন মিয়া একজন চলচ্চিত্র ছবি নির্মাতা হয়েও নিজেই এখন একটি সিনেমার করুণ গল্প হয়ে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (পিজি) অসহায়ের মতো পড়ে আছেন। এমন আরও অসংখ্য ছবি তিনি নির্মাণ করবেন, চোখের কোণে এমনই স্বপ্ন বুনছিলেন। কিন্তু স্ত্রী’র প্রতারণায় সুজন মিয়া নিজেই এখন একটি সিনেমার করুণ গল্প হয়ে আছেন।

এদিকে সুজন মিয়ার সাথে কথা হলে পিজি হাসপাতালের ডি ব্লকের ইমার্জেন্সি থেকে মুঠোফোনে তিনি তুলে ধরেন তার বর্তমান অতীতের কথাগুলো। তিনি বর্তমান সোনারগাঁয়ের জামপুর ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ড মেম্বার।

সুজন মিয়া বলেন, তিনি কুয়েতে ছিলেন। সেখানে তিনি টেক্সি চালাতেন। এরমধ্যে ২০০৮ সালে পরিচয় হয় গাজিপুর বাড়ৈপাড়ার দুর্গাপুর এলাকার আহম্মদ আলীর মেয়ে রুবিয়া খাতুনের সাথে। রুবিয়া খাতুনও কুয়েত ছিলেন। সেখান থেকে আলাপ, পরিচয়, প্রেম এবং ২০১১ সালে কুয়েতেই তারা বিয়ে করেন। তাদের সংসারে রায়না নামে চার বছরের একটি কন্যা সন্তানও রয়েছে।

তিনি জানান, কুয়েতে টেক্সি চালিয়ে একটি খাবার হোটেল এবং একটি মুদি জেনারেল স্টোর করেন। এর মধ্যে দেশে ফিরে এসে ২০১৬ সালে সোনারগাঁ উপজেলার জামপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নং ওয়ার্ড থেকে নির্বাচন করেন এবং এই ওয়ার্ডের সদস্য নির্বাচিত হন। 

পুরোদমে জনপ্রতিনিধি হওয়াতে কুয়েতে ফিরতে পারেননি তিনি। তার পরিবর্তে কুয়েতে থাকা তার স্ত্রীই দেখাশোনা করতেন হোটেল ও জেনারল স্টোর দুটি। তবে প্রতিষ্ঠন দুটির কর্মচারীদের বেতন পরিশোধসহ নানাবিধ আইনী সমস্যা সমাধানের জন্য স্ত্রীকে কুয়েতের বিধি অনুযায়ে পাওয়ারনামা দেন সুজন মিয়া। 

আর তিনি স্থানীয় পর্যায়ে জনপ্রতিনিধিত্ব করতে থাকেন এবং প্রতিষ্ঠা করেন এসএস মাল্টিমিডিয়া। এখান থেকে শুরু করেন সিনেমা তৈরির কাজ। পরপর দুটি ছবি নির্মাণও করেন তিনি। এর একটি ‘বাহাদুরী’ অপরটি ‘ভালোবাসার জ্বালা’। এ ছবি দুটি মুক্তি পাওয়ার কথা ছিলো ফেব্রুয়ারি ও মার্চের দিকে। কিন্তু তার আগেই ঘটে যায় জীবনের ওই করুণ পরিস্থিতি।

সুজন মিয়া আরো জানান, রুবিয়া খাতুন তাকে না জানিয়ে চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি দেশে আসেন এবং ৭ জানুয়ারি জুয়েল মাহমুদ রানার সাথে পালিয়ে যান। স্ত্রীর দেশে আসা এবং অন্য আরেকজনের সাথে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি আঁচ করতে পেরে তিনি তার শ্বশুরবাড়ি গাজিপুরে ছুটে যান এবং সেখানে এ নিয়ে উচ্চবাচ্য হয়। কিন্ত বাড়িতে ছিলেন না রুবিয়া। মূলত তখন তিনি জুয়েলসহ অনেকটা দূরে আবডালেই ছিলেন।

সুজন বলেন, রুবিয়ার দেশে আসার খবরটি তিনি কুয়েতে তার কর্মচারি কয়েকজনের কাছ থেকেই প্রথমে জানেন। তারাই তাকে জানিয়েছেন কুয়েতের হোটেল ও জেনারেল স্টোরটি তিন কোটি টাকায় তার স্ত্রী বিক্রি করে দিয়েছেন। তার স্ত্রীর কাছে ৩৫ ভরি স্বর্ণালঙ্করাও রাখা ছিলো তার। স্ত্রী এহেন ঘটনায় সোনারগাঁ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন তিনি। ৯ জানুয়ারি তাকে তার স্ত্রী ডিভোর্স লেটার পাঠান।

সুজন মিয়া জানান, ১৯ জানুয়ারি তাকে গাড়ি চাপায় হত্যার চেষ্টা চালালেও তিনি ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান তবে, তার একটি পা কেটে ফেলে দিতে হয়েছে। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি ঘটে যাওয়া এ ঘটনায় সোনারগাঁ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি এবং নারায়ণগঞ্জের আদালতে একটি মামলাও দায়ের করেন সুজন। তার স্ত্রী রুবিয়া খাতুনের বিরুদ্ধে তার দায়ের করা দুটি মামলা রয়েছে। তাদের গ্রেফতার এবং তার মেয়ে রায়না ও অর্থ, সোনাদানা উদ্ধারে তিনি সরকার এবং প্রশাসনের প্রতি জোর অনুরোধ করেন।

এদিকে সুজন মিয়া তার স্ত্রী সম্পর্কে বলতে গিয়ে আরও জানান, রুবিয়া খাতুন পূর্বে একটি বিয়ে করেছিলেন। যা তাকে কখনোই জানতে দেননি। তিনি ২০০৪ সালে সোনারগাঁয়ের নয়াপুর হাতুড়িপাড়া এলাকার বাবুল মিয়ার স্ত্রী ছিলেন। 

শুধু তাই নয়, ২০১১ সালে সুজনকে বিয়ের পরও একাধিক ব্যক্তির সাথে পরকীয়ায় সম্পৃক্ত ছিলেন রুবিয়া। বেশ কয়েকবার তার হাতে সেসব ধরাও পড়েছিলো। কিন্তু মেয়েটার মুখের দিকে চেয়ে ক্ষমা করেছেন এবং ভবিষ্যতে এমন না করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন রুবিয়া। কিন্তু তিনি আর শোধরাননি। যার শেষ পরিণিত এখন ভোগ করছেন সুজন মিয়া নিজে।

তবে, ঘটনাটি এখানেই শেষ হতে পারতো। কিন্তু না। শেষ হয়নি। বরং সুজন মিয়ার জীবন গল্পের করুণ মোড়টা এখানেই রচিত করেন স্ত্রী রুবিয়া খাতুন এবং তার পরকীয়া প্রেমিক জুয়েল রানা। 

তারা দুজন সুজন মিয়াকে গাড়ি চাপা দিয়ে হত্যার চেষ্টা চালায়, এ অভিযোগ খোদ সুজন মিয়ার। এ ঘটনায় ভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে গেলেও বর্তমানে তার একটি পা কেটে ফেলতে হয়েছে।

চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি ঘটে যাওয়া এমন ঘটনায় প্রথমে পঙ্গু হাসপাতাল পরে ল্যাবএইডে চিকিৎসাধিন থাকার পর বর্তমানে সুজন মিয়া ডা. আবু জাফর চৌধুরী বিরুর সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (পিজি) চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গাউসিয়া এলাকায় ঘটে যাওয়া ওই ঘটনায় ২১ জানুয়ারি রূপগঞ্জ থানায় হত্যার চেষ্টার অভিযোগ এনে মামলা করেন সুজন। এখানে তিনি তার স্ত্রী রুবিয়া খাতুন ও পরকীয়া প্রেমিক জুয়েল রানাকে আসামী করেন।

এদিকে তিন কোটি টাকা এবং ৩৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় রুবিয়া খাতুনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা এবং নতুন আরেকটি মামলা দায়ের হওয়ায় অত্যন্ত কৌশলে ইমিগ্রেশনের চোখে ধুল ছিটিয়ে ২৩ জানুয়ারি শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর দিয়ে দেশত্যাগ করেন তিনি।

সুজন মিয়া আরো জানান, জায়েদ খান, পরি মণি ও সাইমনকে নিয়ে ‘বাহাদুরী’ এবং অর্পা ইসলাম ও নতুন এক হিরো নিয়ে ‘ভালোবাসার জ্বালা’ নামে আরও একটি ছবি নির্মাণ করেন সোনারগাঁয়ের জামপুর ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ড মেম্বার সুজন মিয়া। তিনি তার এসএস মাল্টিমিডিয়া থেকে এ ছবি দুটি নির্মাণ করেন যা এখন রয়েছে মুক্তির অপেক্ষায়।

এই বিভাগের আরো খবর